ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

দাম বেড়েছে নতুন-পুরোনো সব বইয়ের, তবুও থেমে নেই বইপ্রেমীরা

স্টাফ করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
দাম বেড়েছে নতুন-পুরোনো সব বইয়ের, তবুও থেমে নেই বইপ্রেমীরা

ঢাকা: বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে বইয়ের প্রকাশনায়। অমর একুশে বইমেলা শুরুর আগেই বইয়ের দাম বাড়ার যে বার্তা দিয়েছিলেন প্রকাশকরা, মেলা শুরু হতে না হতেই তার আঁচ টের পেতে শুরু করেছেন পাঠক-ক্রেতারা।

তাদের ভাষ্য- বইমেলায় শুধু নতুন বই নয়, পুনর্মুদ্রিত হয়ে আসা বইয়েরও দাম বেড়েছে। এমনকি আগে ছাপা বইয়ের প্রিন্টার্স ফর্মা বদলে কেউ কেউ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা।

এদিকে প্রকাশকরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে প্রকাশনা শিল্পে ধস নেমে আসায় ক্ষেত্রবিশেষে তারা নতুন বইয়ের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অনেকে বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার তারা নতুন বই প্রকাশের সংখ্যাও দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে এনেছেন।

মেলায় রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকা থেকে সপরিবারে বই কিনতে এসেছিলেন তৌফিক মাহমুদ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ কর্মকর্তা বলেন, মেলায় নতুন বইয়ের দাম কিছুটা বাড়বে, সেটা জানতাম। পছন্দের প্রকাশনীগুলোর খবরা খবর নিয়মিতই রাখি। কিন্তু মেলায় এসে দেখছি পুরোনো বইয়ের দামও বাড়ানো হয়েছে।

মেলায় বইয়ের দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে রাকিবুল হাসান নামে এক পাঠক বলেন, বেশ কয়েকটি বই কিনতে এসেছিলাম আজ। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। পুরোনো বইয়ের দামও বেড়ে গেছে দেখছি।

অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, গত বছর নতুন বই ছাপিয়েছিলাম দেড় শতাধিক। এ বছর ৪০-৪৫টি নতুন বই প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সব মেলায় আনতে পারব কিনা জানি না। বৈশ্বিক মন্দার কারণে বইয়ের দাম না বাড়িয়ে কী উপায়!

অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হক বলেন, খরচ বেড়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কোনো নতুন বই প্রকাশ করব না। কিন্তু বিভিন্নজনের অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে ২৫-৩০টি নতুন বই প্রকাশ করছি। বইয়ের দামও স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।

বাংলাপ্রকাশের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) নুরুন নবী বলেন, গত বছর নতুন বই এনেছিলাম ৬৫টি, এবার আসছে মাত্র ২৫টি। আমরা বইয়ের দাম আগের মতো রাখতে পারছি না সঙ্গত কারণেই। ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ, তিনগুণ দামও রাখতে হচ্ছে। নতুন বইয়ের সঙ্গে ৩২টি বইয়ের পুনর্মুদ্রণ করেছি। সেগুলোর দামও কিছুটা বাড়াতে হয়েছে। এক কথায় নতুন-পুরোনো মিলিয়ে বইয়ের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ছে।

প্রকাশনা সংস্থা সন্দেশের প্রকাশক সাইফুর রহমান চৌধুরী বলেন, এ বছর আমরা মাত্র পাঁচটি নতুন বই প্রকাশ করব। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর নতুন বই ছাপাতে পারিনি। আর্থিক অসংগতির মধ্যেও মেলায় অংশ নিচ্ছি।

শব্দশৈলীর ব্যবস্থাপক ওবায়দুল্লাহ বলেন, বইয়ের দাম কিছুটা বাড়ানোর কারণে পাঠক ক্ষুব্ধ। তিন ফর্মার একটি বইয়ের দাম যখন ১৫০ টাকারও বেশি বলা হয়, তখন পাঠক ক্ষুব্ধ হয়ে যান। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। বই বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়বে বলে আশঙ্কা করছি।

কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বইয়ের দাম বেশ বেড়েছে। পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে বই। নতুন লেখকরা টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করবেন, আমি এর বিরোধিতা করি। নতুন লেখকরা লিখবেন, প্রকাশকরা আগ্রহ নিয়ে তাদের বই ছাপবেন, সেই প্রত্যাশা করি।

এদিকে শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) নতুন-পুরোনো লেখক, কার কী বই কেনা হলো তা নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে মেলায় আসাদের। বিভিন্ন প্রকাশনীর সামনে আড্ডা দিতে দেখা গেছে তরুণ লেখকদেরও। বইয়ের একটু বেশি হলেও বই কেনা থেকে পিছিয়ে নেই বইপ্রেমীরা।

শনিবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এদিন সকালে ছিল শিশুপ্রহর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ছোটদের মজার মজার সব বইয়ের স্টল এবং বিনোদন কেন্দ্র নিয়ে সাজানো হয়েছে শিশুচত্বর। শিশুচত্বরে প্রবেশ করলেই মনে হবে এ যেন কোনো শিশুরাজ্য। যেখানে শিশু-কিশোরদের রাজত্ব। এখানে রয়েছে শিশু-কিশোরদের সায়েন্স ফিকশন, ভূতের গল্প, কৌতুক, ছড়াসহ নানা ধরনের সব বই।

শিশুপ্রহরে শিশু-কিশোরদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে সিসিমপুর স্টল। যেখানে বাচ্চাদের জন্য আকর্ষণীয় সব মজার মজার বই সাজানো রয়েছে। একইসঙ্গে শিশুচত্বরে সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলোর সঙ্গেও সময় পার করে আনন্দিত শিশুরা। পাশে দাঁড়িয়ে সেই আনন্দ উপভোগ করেন অভিভাবকরাও।

ঘাসফড়িং প্রকাশনীর প্রকাশক শ্যামল কুমার দাস বলেন, শিশুদের জন্য আমাদের প্রকাশনীর অনেক বই আছে। সব বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে আনিসুল হক ও আহসান হাবীবের বইয়ের চাহিদা বেশি।

টুনটুনি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী তাহমিনা আক্তার শান্তা জানান, সব বই বিক্রি হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানবিষয়ক বই একটু বেশি বিক্রি হচ্ছে।

সিসিমপুরের সমন্বয়ক সাব্বির আহমেদ বলেন, প্রতি শুক্র ও শনিবার সিসিমপুরের এ আয়োজন মেলার শেষ শনিবার পর্যন্ত থাকবে। শিশুদের আনন্দ দিতেই আমাদের এ আয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।