ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

সব পথ মিশেছে মেলায়!

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪
সব পথ মিশেছে মেলায়! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: হু হু বাতাস বইছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে। সে বাতাস যেনো ভরপুর বইমেলায় বসন্ত প্রেমিকদের দেহমনে শীতলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

কে বলে বসন্তে এখন আর কোকিল ডাকে না!
 
উদ্যেনের এক গাছে বসে বিকেল থেকেই একটি কোকিল অবিরত বসন্তের বন্দনা করছে। আগত দশনার্থীরা কান পেতে শুনছিলো সেই কোকিলের ডাক। সন্ধ্যায় হঠাৎ উড়ে যায় বসন্তের সেই কোকিল। ‘উড়ে যাক কোকিল, তবুতো ধরা দিয়েছে’ মেলায় এমন দৃশ্য উপভোগ করা এক কপোতী তার কপোতকে বলে।
 
ইট-কংক্রিটের এ শহরে এখনও অল্প হলেও কোকিলের দেখা মেলে। শিমুল ফোটে। বসন্তের এমন কোকিলই জানিয়ে দেয় নগরজীবনে এখনও বসন্ত হারিয়ে যায়নি।
 
রাজধানীতে বসন্তের উৎসব মানেই যেনো অমর একুশে গ্রন্থমেলা! শত ব্যস্ততার মাঝেও এখনও অনেকেই ফাল্গুনের উৎসবে চলে আসেন বইমেলায়।
 
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রবেশ দ্বার খোলে। বেলা যত বাড়ে লেখক পাঠক আর প্রকাশকের পদচারণায় মুখরিত হতে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। সন্ধ্যা নামতেই যেনো সব পথ মিশে যায় মেলার দুই প্রাঙ্গণে।
 
কেউ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আসছে আবার কেউ একাডেমি প্রাঙ্গণ থাকতে উদ্যানে প্রবেশ করছে। দর্শনার্থীরা বই কিনুক আর না কিনুক তাদের পদচারণায় মুখরিত হতে থাকে বইমেলা।
 
আজকের দিনটা ফুরোলেই ভালোবাসা দিবস। আর তার আগের সময়টা ফাল্গুনের প্রথম দিনের; তাই এমন মুহূর্তগুলো গতানুগতিকভাবে কাটাতে চায় না তরুণ-তরুণীরা। সময়কে রাঙিয়ে এদিন বর্ণিল উৎসবে মেতেছে তারুণ্য।

বাসন্তী রঙের শাড়ি, কপালে লাল টিপ, খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুল আর হাতভর্তি রঙিন কাচের চুড়িসহ সুসজ্জিত তরুণীদের পদচারণায় মুখরিত এখন বইমেলা। এক হাতে গাঁদা ফুলের গুচ্ছ, অন্য হাতে সদ্য কেনা বই। গালে-কপালে বাহারি আলপনা। ছেলেরাও কম যান না! ছোপ ছোপ হলুদরঙা মনকাড়া পাঞ্জাবি ও ফতুয়া পরে নতুন সাজে সেজেছে তরুণরাও।

মেলায় আসা বেশিরভাগই ছিলো কপোতী-কপোতীরা। প্রিয়জনের হাত ধরে তারা মেলা ঘুরছেন। দেখছেন। বই উপহার দিচ্ছেন।
প্রকাশকরাও অপেক্ষায় থাকে এ দিনটার। বিশেষ দিন মানেই বিক্রি বাট্টা ভালো।
 
রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক  রিয়াজ খান বাংলানিউজকে বলেন, বইমেলায় কয়েকটি দিনের দিনের অপেক্ষায় থাকেন প্রকাশকরা। যেমন ছুটির দিন, ১ ফাল্গুন, ভ্যালেন্টাইনস্ ডে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি। এসব দিনে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় বই বিক্রি বেশি হয়।

কয়েকজন প্রকাশকরা জানিয়েছেন, অন্যান্যদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার বই বিক্রিও হয়েছে বেশি।
 
ফাল্গুনের প্রথম দিনে ১১০ বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৩তম দিন নতুন বই এসেছে ১১০টি। ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
 
বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মধ্যে রয়েছে গল্প-১৮টি, উপন্যাস-২০টি, প্রবন্ধ-৯টি, কবিতা-২১টি, গবেষণা-০টি, ছড়া-১টি, শিশুতোষ-৮টি, জীবনী-২টি, রচনাবলী-০টি, মুক্তিযুদ্ধ-০টি, নাটক-১টি, বিজ্ঞান-১টি, ভ্রমণ-২টি, কম্পিউটার-১টি, ধর্মীয়-২টি, সায়েন্স ফিকশন-৩টি এবং অন্যান্য-১৭টি।
 
মূলমঞ্চের আয়োজন
গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে বিকেল ৪টায় শুরু হয় প্রতিদিনের মতো আলোচনা অনুষ্ঠান। ‘কাজী ইমদাদুল হক: এক বিস্মৃত মনীষা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজিনা সুলতানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশ্বজিৎ ঘোষ, মনজুরুর রহমান এবং ফারজানা সিদ্দিকা। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।

প্রাবন্ধিক বলেন, কাজী ইমদাদুল হকের আবদুল্লাহ উপন্যাসটিকে বাঙালি মুসলমান সমাজের স্বার্থক দর্পণ বলা যায়। বুদ্ধির অন্ধতার বিরুদ্ধেই ছিল কাজী ইমদাদুল হকের কলম-যুদ্ধ।
 
আলোচকবৃন্দ বলেন, স্বসমাজের মঙ্গলকামী ছিলেন বলেই কাজী ইমদাদুল হক বঙ্গীয় মুসলিম সমাজে বিদ্যমান রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। অন্ধভক্তির মূলোৎপাটনের জন্য তিনি সাহিত্যিক সক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছেন।
 
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন তার সমসাময়িক মুসলমান লেখকদের মধ্যে অগ্রসর, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক। তিনি শুধু সাহিত্য নয়, পাশ্চাত্যের দর্শন ও বিজ্ঞানেও ছিলেন একজন গভীর পাঠক।
 
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন ‘ক’জনা’। শেখ উজ্জ্বলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম’ (আসাফো)। এছাড়া এবং লুবনা মারিয়ামের নির্দেশনায় ‘সাধনা’ পরিবেশন করে সৈয়দ শামসুল হক রচিত নাটক ‘চম্পাবতী’।
 
শুক্রবারের আয়োজন
শুক্রবার সকাল ৯টায় বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতায় ক-শাখা ২০০ জন (দেশাত্মবোধক গান) এবং খ-শাখা ১৪০ জন (গণসংগীত) প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করবে।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে হাজি মহম্মদ মহসিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আমজাদ হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ওয়াকিল আহমদ, পার্থ সেন গুপ্ত, শান্তনু কায়সার, আবদুল বাছির। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ. আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।   
সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।