ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

একুশের চেতনায় ঋদ্ধ বইমেলা

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪
একুশের চেতনায় ঋদ্ধ বইমেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেলা প্রাঙ্গণ থেকে: ভাষা সার্বজনীন। ভাষার কোনো ধর্ম নেই, বর্ণ-গোত্র, শ্রেণী বা রাজনীতি নেই।

ভাষার এই সার্বজনীনতায় যুগে যুগে পৃথিবীতে গড়ে উঠেছে জাতীয়তা, আত্মপ্রকাশ ঘটেছে জাতিসত্ত্বার।

পৃথিবীতে ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তা নেহাতই কম নয়। আধুনিক বিশ্বে এখনো ভাষার অধিকারের দাবিতে, আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে।

প্রায় ২০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা বিশ্বের বহুল প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে একটি। ভাষাভাষীর সংখ্যানুসারে এর অবস্থান চতুর্থ থেকে সপ্তমের মধ্যে। ভারতীয় উপ-মহাদেশে বাংলা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কথিত ভাষা।

অথচ এই বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে জীবন দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আসাম ছাড়া পৃথিবীতে ভাষার দাবিতে জীবন দেওয়ার ঘটনা নজীরবিহীন।

১৯৫২ সালের রক্তঝরা বাংলা ভাষা আন্দোলনই আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। বাঙালির অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বের সব জাতির, সব মানুষের ভাষার অধিকারকে অনন্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বাঙালির ভাষা আন্দোলনের চেতনা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলে। এই চেতনা ধারণ করেই ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে যাত্রা করে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

পরম্পরায় ভাষা আন্দোলন আর অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালির মননে-মগজে প্রায় সম‍ার্থক একটি প্রত্যয়।

ভাষা আন্দোলনের সেই অমর অক্ষয় চেতনাকে ধারণ করেই শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে অন্য রকম এক ব্যঞ্জনায় শুরু হবে একুশতম দিনের বইমেলা। মেলা চলবে যথারীতি রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

২০ তম দিনের আয়োজন
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২০তম দিনে আটটি গল্প, ১৬টি উপন্যাস, ১০টি প্রবন্ধ, ২৫টি কবিতা, চারটি গবেষণা, আটটি ছড়া, ছয়টি শিশুতোষ, পাঁচটি জীবনী, তিনটি মুক্তিযুদ্ধ, একটি নাটক, দুইটি বিজ্ঞান বিষয়ক, দুইটি ভ্রমণ বিষয়ক, একটি ইতিহাস, একটি রাজনীতি, দুইটি চিকিৎসা বিষয়ক, দুইটি কম্পিউটার বিষয়ক, দুইটি রম্য/ধাঁধা এবং নয়টি অন্যান্যসহ মোট ১০৭টি নতুন বই এসেছে মেলায়।

এর মধ্যে নজরুল মঞ্চে ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

মূল মঞ্চের আয়োজন
গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বর্তমানে প্রচলিত উপযোগবাদী শিক্ষা কাঠামোর মধ্য থেকে বিশৃঙ্খল মানুষ বেরিয়ে আসছে। পরিপূর্ণ যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী মানুষের জন্ম দিতে পারছে না আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। উচ্চশিক্ষার বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে দৃষ্টি দেয়া যথেষ্ট নয় বরং একই সঙ্গে আমাদের শিক্ষাদর্শন ও বৈশ্বিক রাজনীতি আন্তঃসম্পর্কও সম্যক অনুধাবন করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবার কার্যকর ভূমিকার কোন বিকল্প নেই।

আলোচকরা বলেন, উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান ঘটাতে শিক্ষাক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত কর্তৃত্বের অবসান ঘটাতে হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিদ্যমান শিক্ষা-নৈরাজ্য আমাদের উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক কাঠামোকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে উচ্চশিক্ষার গবেষণামূলক ধারাকে প্রাধান্য দিয়ে একে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিশ্বের উপোযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।

কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, ড. শাহিনুর রহমান, জিনাত হুদা অহিদ এবং মোহাম্মদ আবদুর রশীদ প্রমুখ।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন, আকরামুল ইসলাম, শফি মণ্ডল, আরিফ রহমান, তামান্না নিগার তুলি এবং কোহিনুর আকতার গোলাপী।

যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পিনু সেন দাস (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (দোতারা), শাহাদাৎ হোসেন (মন্দিরা) এবং এস. এম. রেজা বাবু (ঢোল)।

শুক্রবারের আয়োজন
শুক্রবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে।

সকাল সাড়ে ৭টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে রয়েছে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাঙালি সংস্কৃতিতে মানবতাবাদ শীর্ষক’ অমর একুশে বক্তৃতানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদের একক বক্তব্য প্রদানের কথা রয়েছে।

স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

যথারীতি সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।