ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

রোদেলা প্রকাশনীর স্টল খুলে দেয়ার দাবি তরুণ লেখক সমাজের

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
রোদেলা প্রকাশনীর স্টল খুলে দেয়ার দাবি তরুণ লেখক সমাজের

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় রোদেলা প্রকাশনীর স্টল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের তরুণ লেখক সমাজ। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘একটি অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশের অভিযোগে বইমেলায় রোদেলার মতো খ্যাতনামা একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল এভাবে বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত হয়েছি।

রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন যে, একজন ইরানি লেখকের এই বইটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি কিছু জানতেন না, সরল বিশ্বাসেই তিনি অন্যান্য সকল অনুবাদগ্রন্থের মতো করেই এটি প্রকাশ করেছেন, কোনো গোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কোনো অভিপ্রায় তাঁর ছিল না। এতদসত্ত্বেও নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর আপত্তি ও হুমকির মুখে তিনি বইটির প্রকাশনা বাতিল করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। এরপরও গ্রন্থমেলায় রোদেলার স্টল বন্ধ করে রাখার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। বাংলা একাডেমি কোনো লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্টল বন্ধ করেনি, বইটি পড়ে দেখারও প্রয়োজনও বোধ করেনি, শুধু একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হুমকির মুখে একাডেমি কর্তৃপক্ষ প্রকাশনীটির স্টল বন্ধ করে দিয়েছে। মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতার জন্য একাডেমির এই সিদ্ধান্ত বড় ধরনের হুমকি।

আশা করি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবং প্রকাশকদের সংগঠন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি অবিলম্বে রোদেলার স্টল খুলে দেয়ার ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে দেশের অনেক প্রবীণ-নবীন লেখকের বই বেরিয়েছে। স্টল বন্ধ করে দেয়ায় শুধু প্রকাশক নন, লেখকরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। হুমকির মুখে স্টল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে এটি একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ দেশের কোনো প্রকাশক ভবিষ্যতে মুক্তচিন্তার কোনো বই প্রকাশ করার সাহস পাবেন না। তাদের ভেতর একটা ভয় কাজ করবে, স্টল বন্ধ হওয়ার ভয়। অনাগত দিনে তারা মোল্লাতন্ত্রের কাছে নতজানু হয়ে থাকবে। তাতে মুক্তচিন্তার দরজা এ দেশে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। আশা করি বাংলা একাডেমি এমন একটা ক্ষতি করবে না। আমরা রোদেলা প্রকাশনীর স্টল খোলা দেখতে চাই। জ্ঞানগৃহ উন্মুক্ত চাই।

তরুণ লেখক সমাজের পক্ষে বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন প্রাবন্ধিক আজফার হোসেন, কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক কল্লোল মোস্তফা, প্রাবন্ধিক জব্বার হোসেন, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান, কবি জুয়েল মাজহার, কবি সৈয়দ তারিক, কবি চঞ্চল আশরাফ, কবি মাসুদ পথিক, কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান, প্রাবন্ধিক বিধান রিবেরু, কবি তুষার কবির, কবি জাহেদ সরওয়ার,  কবি সাইয়েদ জামিল, প্রাবন্ধিক সালেক খোকন,  কবি মাইনুল শাহিদ, কবি নওশাদ জামিল, কবি জাহানারা পারভীন, কবি রিসি দলাই, কবি অঞ্জন আচার্য, কবি শিমুল সালাহ্উদ্দিন, গল্পকার মোজাফফর হোসেন, গল্পকার হামীম কামাল, কবি রাহেল রাজিব, কবি শোয়েব সর্বনাম, কবি ফকির ইলিয়াস, কবি বীরেন মুখার্জি, কবি আনোয়ার কামাল, গল্পকার রাজিউল হাসান, গল্পকার মেহেদি হাসান, কবি দেবজ্যোতি ভক্ত, সুদীপ বাঙালি, তানভীর আহসান, কাসিফুর রহমান, সানজিদা হক মিশু প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ইরানের বিখ্যাত লেখক আলি দস্তির ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে রোদেলা প্রকাশনী।   বইটি ভাষান্তর করেছেন আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী। বইটি প্রকাশের অভিযোগে রোদেলা প্রকাশনীর ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে একটি ইসলামি হ্যাকার গ্রুফ। রোদেলা প্রকাশনীর প্রকাশক রিয়াজ খান তাৎক্ষণিকভাবে বইটি তার বইমেলার স্টল এবং বাংলাবাজারের অফিস থেকে সরিয়ে নেন এবং বইটির প্রকাশনা বাতিল ঘোষণা করেন। তিনি সবিনয়ে স্বীকার করেন, ‘বইটিতে নবী মুহাম্মদের বিরুদ্ধে কোনো কথা থাকতে পারে এমনটি আমার ধারণায় ছিল না। যেহেতু ভুল করেছি, তাই অপরাধ স্বীকার করে আমি বইটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। ’ তবু একটি ধর্মান্ধগোষ্ঠী বাংলাবাজারে রোদেলার অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, প্রকাশক রিয়াজ খানকে ফোন করে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বিভিন্ন উগ্র সংগঠন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।