ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

একি অপূর্ব বইপ্রেম...

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
একি অপূর্ব বইপ্রেম... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক চক্কর দিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢুকতেই মূল মঞ্চের সামনে দাঁড়ানো সত্তরোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, নজরুলমঞ্চটা কোথায়?  লোকটির কথা বলার ঢং, পোশাক-পরিচ্ছদ ও নজরুলমঞ্চ না চেনায় বুঝতে পারলাম তিনি ওপারের। মানে ওপার বাংলার।



কলকাতার ডায়মন্ডপার্ক থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসে প্রাণের আবেগ আর ধরে রাখতে পারছেন না ভদ্রলোক। সংবাদকর্মী হিসেবে নিজের পরিচয়টা প্রকাশমাত্রই বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো বলতে শুরু করলেন তিনি।

‘আপনাদের ভালোবাসার কী জোর। মাতৃভাষার প্রতি কী অপূর্ব প্রেম। গতকাল আমি টিএসসিতে ছিলাম। ওখানে একটা ককটেল ফাটলো। ভেবেছিলাম আর লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু কী অবাক করা কাণ্ড! ওটাকে কোনো পাত্তাই দিলো না কেউ! প্রাণের মেলায় তার কোনো আছরই পড়লো না!‘

ভদ্রলোক শুধু বলেই যাচ্ছেন। কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দিচ্ছেন না। এবার একটু বিরতি। সুযোগ পেয়েই জিজ্ঞেস করলাম তার নামটা।

‘শ্যামল সোম। এসেছি কলকাতা থেকে। বাসা ডায়মন্ড পার্কে। এই ৭২ বছর বয়সেও আপনাদের প্রাণের মেলার টান উপেক্ষা করতে পারলাম না। সর্বশেষ এসেছিলাম ৩০ বছর আগে। তাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না নজরুলমঞ্চটা- এক নিশ্বাসে বলে গেলেন।

নজরুলমঞ্চ পেছনে রেখে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামল সোমকে সেটি দেখিয়ে দিতেই ‘আহ! কী সুন্দর ব্যবস্থাপনা আপনাদের। সব কিছু মুগ্ধ হওয়ার মতো- বলে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন নজরুলের আবক্ষ মূর্তিটির দিকে।

দাদা, আমি ব্যস্ত। আমাকে এখন আমার প্রতিষ্ঠানের স্টলে ফিরতে হবে। মেলা কাভার করছি। অফিসে নিউজ পাঠাতে হবে।

তাহলে চলুন আপনার সঙ্গে স্টলেই যাই- বলে হাটতে শুরু করলেন শ্যামল সোম।   

বাংলানিউজের স্টলে ফিরে কলতাকার অতিথিকে বসতে দিয়ে লিখতে শুরু করি। এর ফাঁকে ফাঁকেই চলে কথা।

বয়সের ভাড়ে নুব্জ্য শ্যামল সোম বলেন, এই বুড়ো বয়সে মেলায় আসতেই দিতে চায়নি আমার পরিবার। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে চলে এসেছি। বিশ্বাস করেন পথে কোনো সমস্যা হয়নি। সেই বেনাপোল থেকে পুলিশ আমাদের গাড়ি কর্ডন করে নিয়ে এসেছে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর আপনাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব রঞ্জিত কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে ফোন দিতে বলেছেন। কিন্তু কোনো সমস্যায় না পড়ায় তাকে ফোন দেইনি।

সহকর্মী ফটোগ্রাফারকে দিয়ে কয়েকটি ছবি তুলে শ্যামল সোমকে বিদায় জানাতেই বাংলানিউজের স্টলে হাজির ফারহানা হৃদয়িনী।

কুষ্টিয়া থেকে পরশু ঢাকা আসা হৃদয়িনী শ্যামল সোমকে খুঁজতে বাংলানিউজের স্টলে এসেছেন। কারণ, একটু আগে মোবাইলে এখানেই তাকে আসতে বলেছেন শ্যামল সোম।

মেলার ৭ম দিন থেকে ১৭তম দিন পর্যন্ত যে ক’জন প্রকাশকের সঙ্গে কথা হয়েছে প্রত্যেকেই বলেছেন, হরতাল অবরোধের জন্য ঢাকার বাইরে থেকে লোক আসতে পারছে না। তাই মেলায় বই বিক্রি কম। কেবল ঢাকার পাঠকরাই মেলায় আসছেন, বই কিনছেন।

কিন্তু মেলার ১৮তম দিন কলকাতা থেকে আসা শ্যামল সোম ও কুষ্টিয়া থেকে আসা ফারহানা হৃদয়িনীর সঙ্গে কথা বলার পর মনে হলো ঢাকার বাইরের পাঠক ও বইপ্রেমীদের সম্পর্কে প্রকাশকদের ধারণা আংশিক সত্য; সম্পূর্ণ নয়।

মেলায় ঢোকার আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় ফরিদপুর থেকে আসা কলেজ শিক্ষক রবিউল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বলেন, বইয়ের সঙ্গে যাদের প্রেম আছে তারা মেলায় আসবেই। সব প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা বই থেকেই মেলে।

প্রতিদিনের মতো বুধবারও মেলায় মেলা গেট উন্মোচন করা হয় বিকেল ৩টায়। এর আগেই আগ্রহী পাঠক ও দর্শনার্থীরা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার দরজায় ভিড় জমায়।

৪টায় মেলার মূলমঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। আজকের বিষয়বস্তু ছিলো সদস্য প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামসুল ওয়ারেস। আলোচনায় অংশ নেন রবিউল হুসাইন ও তানজিনা হোসেন। সভাপতিত্ব করেন মুস্তাফা মনোয়ার।

একই মঞ্চে সন্ধ্যায় শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলা চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।