ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

বাতায়ন থেকে খোলা দরজায়!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫
বাতায়ন থেকে খোলা দরজায়! ছবি: শাকিল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে হাতের ডান দিকে তাকালে হঠাৎ চমকে যেতে পারেন! ভড়কে যেতে পারে আপনার স্থির হৃদয়! ধাক্কা লাগতে পারে আপনার বিশ্বাসের দরজায়।
 
কারণ, স্বর্গলোক থেকে নেমে এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছায়াবিথিতলে কারুকার্যময় অর্ধেক খোলা কাঠের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন দেড় বছর আগে ইহলোক ছেড়ে যাওয়া নন্দিত কথাশিল্পী হমায়ূন আহমেদ।


 
মাথায় হ্যাট, গায়ে চেক শার্ট ও ছাই রঙের ওভারকোট, বোগলে বই, পরনে গ্যাবাডিন প্যান্ট, পায়ে স্যু-বুট। এ যেন চিরচেনা সেই হুমায়ূন আহমেদ; ছবির জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছেন।
 
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে এভাবেই হাজির হয়েছেন অকাল প্রয়াত নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ।
 
গত তিন দশক ধরে হুমায়ূন আহমেদের বই ছেপে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থার তকমা গায়ে লাগানো অন্যপ্রকাশ প্রতিবছরই হুমায়ূন ‘আবহে’ নিজেদের স্টল সাজিয়ে থাকে। ফলে মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্টল হিসেবে তাদের স্টলটিই বিবেচিত বা আলোচিত হয়।
 
২০১৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু পর  প্রথম আয়োজিত ২০১৪ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলাতেও নিজেদের স্টল হুমায়ূন আবহেই সাজিয়েছিলো অন্য প্রকাশ। সেবার হুমায়ূন আহমেদকে উপস্থাপন করা হয়েছিলো বাতায়নের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারার ভঙ্গিমায়।
 
এবার বাংলা একাডেমির কাছ থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে যায় অন্যপ্রাকশ। ‘বাতায়ন’ থেকে হুমায়ূন আহমেদকে কারুকার্যময় অর্ধেক খোলা কাঠের দরজায় এনে দাঁড় করিয়েছে তারা।
 
হুমায়ূন আহমেদের প্রিয়ভাজন শাকুর মজিদের আইডিয়া আর ইন্টোরিয়র আর্কিটেক্ট ইব্রাহিম খলিলের ডিজাইনে করা অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নটি তাই এবারের বই মেলায় প্রধান আকর্ষণ হিসেবে ধরা দিয়েছে পাঠক ও দর্শনার্থীদের চোখে। এটি দেখতে প্রতিদিনই মেলায় ভিড় জামাচ্ছেন নন্দনপিয়াসী মানুষ। তুলছেন সেলফি।
 
বৃহস্পতিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্যাভিলিয়নটির নিমার্ণশৈলীর খুঁটি-নাটি পরখ করতে গিয়ে দেখা যায়, চতুর্ভূজ আকৃতির প্যাভিলিয়নটির সম্মুখভাগের মাথার ওপর হুমায়ূন আহমেদের বিশাল আকৃতির একজি আলোকচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
 
এর ঠিক নিচে মূল স্তম্ভের গায়ে সুন্দর নকশায় বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের দু’টি পা-লিপির আলোকচিত্র। প্যাভিলিয়নের স্তম্ভ, দেওয়াল ও আড়া’র নকশা করা হয়েছে কাচা ইটের অনুকরণে। রঙের ব্যবহারে লাল, সাদা, কালো ও হলুদের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় লাইটিংয়ের ব্যবহার প্যাভিলিয়নটাকে করে তুলেছে নান্দনিক।
 
এটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে যাথারীতি- ইট, বালু, সিমেন্ট, বোর্ড, কাঠ, বোর্ড পেপার, লিয়ন পেপার, ডিজিটাল লিয়ন সাইন, ককশিট, স্ট্যাম বোড, এমএস বোর্ডসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী।
 
প্যাভিলিয়নটি চারপাশ-ই খোলা রাখা হয়েছে। ভেতরে জায়গাও প্রচুর। এক সঙ্গে ২০/৩০জন বিক্রয়কর্মী ভেতরে অবস্থান করতে পারেন। চারপাশ খোলা থাকায় একসঙ্গে কয়েক শ’ পাঠক-দর্শনার্থী বই কেনা ও দেখার সুযোগ পেতে পারেন।
 
হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো জনপ্রিয় লেখকদের বেশিরভাগ বই-ই অন্যপ্রকাশ থেকে বের হওয়ায় সব সময় এর প্যাভিলিয়নে ভিড় লেগে থাকে। অন্য বছরগুলোতে অন্যপ্রকাশের সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে বই কিনতে দেখা যায় পাঠকদের। এবার বিস্তৃত পরিসরে অনেকটা ফাঁকা জায়গায় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পাওয়ায় অন্য প্রকাশের কর্তৃপক্ষ ও বিক্রয়কর্মীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। পাঠকরাও কোনো প্রকার ঝামেলা ও ঠেলাঠেলির বিড়ম্বনা ছাড়াই অন্যপ্রকাশ থেকে তাদের প্রিয় লেখকের বই কিনতে ও দেখতে পাচ্ছেন।
 
কথা হয় বই কিনতে আসা চামেলী বসুর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি বছর মেলায় এসে অন্যপ্রকাশের স্টল খুঁজি। কারণ, অন্য প্রকাশের স্টলটা সব সময় মেলায় ভিন্নমাত্রা যোগ করে। এবারের প্যাভিলিয়নটাও ওরা চমৎকার করেছে।
 
অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা একদিকে যেমন মানসম্পন্ন বই পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি, অন্যদিকে প্রতি বছরই আমাদের স্টলটা নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করি। পাঠক ও দর্শনার্থীর ভালোলাগা ও সুবিধার বিষয়টিই আমরা প্রাধান্য দেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯,২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।