ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

মেলায় প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের যত বই

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫
মেলায় প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের যত বই

গ্রন্থমেলা থেকে: কোনো এক মনীষীর বাণী, ‘পা থাকলে ভ্রমণ করা যায়, হাত থাকলেই লেখা যায় না, লেখার কাজটি বড় শক্ত। ’
 
এই ‘শক্ত’ কাজটি রাজনীতিবিদদের জন্য আরো শক্ত।

জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে সদাতৎপর থেকে নানা রকম ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যে লেখা-লেখির মতো সৃজন ও মননশীল কাজ চালিয়ে যাওয়া কম কথা নয়।
 
তবে আরেকটি প্রবাদও তো আছে, ‘যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাধেন। ’ আধুনিক ব্রিটেনের জনক উইনস্টন চার্চিল রাজনীতিবিদ হয়েও সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের লেখা-লেখালেখির খবর কে না জানে।
 
এরও আগে এই উপমহাদেশে জাতিসত্ত্বা গঠন ও রাজনৈতিক ইতিহাস বিনির্মাণে যারা স্বপ্ন পুরুষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন, বদলে দিয়েছিলেন সব হিসাব-নিকাশ, তাদের অনেকেই ছিলেন একাধারে রাজনীতিক, জ্ঞানতাপস, পণ্ডিত, লেখক।
 
এবারের বইমেলায় আসা বর্তমান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর বইয়ের খবর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা যাক।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৃজনশীলতা সম্পর্কে কম-বেশি সবাই জানি। সেই আশির দশক থেকেই নিয়মিত লিখছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। জীবনে বেশ কয়েকটি বড় ট্রাজেডির শিকার আজকের প্রধানমন্ত্রী এখনো নিয়মিত লিখছেন।
 
এবারের বইমেলায় নতুন-পুরনো মিলিয়ে এক ডজনের ওপরে বই এসেছে শেখ হাসিনার। এর মধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকেই বেরিয়েছে ১১টি বই। ‘মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তচেতনা দু’য়ের প্রত্যয়ে আমাদের প্রকাশনা’ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দেশের এই ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনী থেকে বের হওয়া ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইটি এবারের মেলায় সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে।
 
এছাড়া একই প্রকাশনী থেকে বের হওয়া শেখ হাসিনার ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘ওরা টোকাই কেন’, ‘সহেনা মানবতার অবমাননা’, ‘সাদা কালো’, ‘বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা’, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ: কিছু চিন্তা ভাবনা’, ‘ডেমোক্রেসি ইন ডিসট্রেস: ডিমান্ড হিউম্যানিটি’, ‘পিপল অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’, ‘লিভিং ইন দ্যা টিয়ারস’, ‘ডেমোক্রেসি পোভারটি ইলিমিনেশন অ্যান্ড পিচ’ বইগুলোর বিক্রিও আশা জাগানিয়া।
 
লেখা-লেখির ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুদল মুহিতও কম যান না। এক কালের ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র বর্তমানের অর্থমন্ত্রী সৃজন ও মননশীল দুই ধারার লেখ-লেখিতেই সিদ্ধহস্ত। এবারের বইমেলাতেও তার বেশ কয়েকটি বই এসেছে।
 
এর মধ্যে সময় প্রকাশন বের করেছে ‘বসবাসের উপযুক্ত বাংলাদেশ চাই’ ও ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়’। এ বই দু’টির ভালো কাটতি রয়েছে মেলায়।
 
মন্ত্রীদের মধ্যে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়ধারার লেখক হয়ে উঠছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হকের মতো জনপ্রিয় লেখকদের বইয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার দু’টি বই মেলায় এসেছে।
 
দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা সংস্থা সময় প্রকাশন থেকে বের হওয়া ওবায়দুল কাদেরের উপন্যাস ‘গাঙচিল’ ও স্মৃতিকথা মূলক গ্রন্থ ‘জীবন স্মৃতি: সব মনে নেই’ বই দু’টি এবারের বইমেলায় সাড়া জাগিয়েছে। এই বই দু’টি তাকে জনপ্রিয় লেখকদের কাতারে দাঁড় করিয়েছে।
 
প্রতিদিনই তিনি মেলায় আসছেন। বসছেন সময় প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে। দিচ্ছেন ভক্ত ও পাঠককুলকে অটোগ্রাফ।
 
এছাড়া আগামী প্রকাশনী থেকে বের হওয়া ওবায়দুল কাদেরের ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ বইটিও রয়েছে পাঠকের পছন্দের তালিকায়।
 
এবারের মেলায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বেশ কয়েকটি বই এসেছে। এগুলোর মধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকে ‘শিক্ষা নীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ এবং চারুলিপি থেকে ‘শিক্ষা: লক্ষ্য অর্জনে যেতে হবে বহুদূর’ বই দু’টি উল্লেখযোগ্য।
 
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর বই প্রকাশ হয়েছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। কারো কারো বই হয়েছে পুনঃমূদ্রণ।
 
মন্ত্রীদের বই প্রকাশ  সম্পর্কে জানতে চাইলে আগামী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ওসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, রাজনীতিবিদদের বই বেশি করে ছাপা দরকার। এর ভেতর দিয়ে ওনাদের দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। রজানীতিবিদরা মুখে যা বলেন, অন্তরে তা বিশ্বাস করেন কি না, অথবা ক্ষমতার বাইরে থেকে যা বলেন, ক্ষমতায় আরহণের পর তার চর্চা করেন কি না; সেটি বোঝা যায় লেখনির মধ্য দিয়ে।
 
তাছাড়া সভা-সমাবেশে দেওয়া রাজনৈতিক বক্তব্য কালের কপোলতলে হারিয়ে গেলেও বইয়ের পাতায় থাকা বক্তব্য, ধ্যান ধারণা, তথ্য ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্ট কোনো কিছুই হারায় না। সে করণেই আমি মনে করি রাজনীতিবিদদের বই বেশি করে ছাপানো প্রয়োজন- বলেন ওসমান গণি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।