ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধেই নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫
বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধেই নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গ্রন্থমেলা মেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলার সব স্টলে বই বিক্রি হচ্ছে ২৫ শতাংশ কমিশনে। বাংলা একাডেমি মেলায় অংশ নেওয়া সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে বই বিক্রিতে এ নিয়ম বেঁধে দিয়েছে।

তবে এ নিয়ম মানছে না মেলার আয়োজক খোদ বাংলা একাডেমিই।

৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশনে বাংলা একাডেমি তাদের স্টলে বই বিক্রি করছে। এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকদের।

মেলা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, একই মেলায় দু’রকম কমিশনে বই বিক্রির কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে পাঠকের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন প্রকাশকরা।

বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ আনে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।

বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ওসমান গণি বলেন, ‘সব প্রকাশক ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করে, অথচ বাংলা একাডেমি ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করছে। এতে পাঠকের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন প্রকাশকরা। একই মেলায় দু’রকম কমিশনে বই বিক্রি করে বাংলা একাডেমি নিজেই মেলার নীতিমালা ভঙ্গ করছে বলে আমরা মনে করি।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, একাডেমি চত্বরে তিনটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে একাডেমির। সর্বোচ্চ কমিশন থাকায় চারটি কেন্দ্রেই উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে ক্রেতাদের। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা যায়, এ কমিশন থাকায় বিক্রির ক্ষেত্রে গতবারের রেকর্ডও ভেঙেছে বাংলা একাডেমি।

মেলায় ক্রেতারা বাংলা একাডেমির বই কিনতে পারছেন ৩০ শতাংশ ছাড়ে। ২০০০ সালের আগে প্রকাশিত বইগুলো বিক্রি হচ্ছে শতকরা ৭০ শতাংশ ছাড়ে।

সন্ধ্যায় একটি খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশক বাংলানিউজকে বলেন, একাডেমি তাদের ২০০০ সালের আগের বই ৭০ শতাংশ কমিশন দিয়ে বিক্রি করছে। আমাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম না থাকায় পুরনো বইগুলো আমরা স্টলেও তুলতে পারছি না। এরকম ছাড় থাকলে আমরাও গুদামে থাকা বই বিক্রি করতে পারতাম।

এদিকে বইমেলার ২৬তম দিন বৃহস্পতিবারও ছিল ক্রেতা-পাঠকদের উপচে পড়া ভিড়। দুপুর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পাঠক ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

সন্ধ্যায় অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি নিয়ে বই ‘চিত্রনাট্য ঘেটুপুত্র কমলা’। সম্পূর্ণ রঙিন এই বইটিতে ‘ঘেটুপুত্র কমলার’ পাণ্ডুলিপি ছাড়াও স্থান পেয়েছে দুর্লভ সব ছবি। বইটির দাম রাখা হয়েছে ৫০০ টাকা।

১৩৪ নতুন বই
২৬তম দিনে মোট বই প্রকাশিত হয়েছে ১৩৪টি। এর মধ্যে গল্পের বই ১৬টি, উপন্যাস ১৪টি, প্রবন্ধের বই ১৩টি, কবিতার বই ৪০টি, গবেষণা ৩টি, ছড়া ৮টি, শিশুসাহিত্য ৭টি, জীবনী ৩টি, বিজ্ঞান ৩টি, ভ্রমণ ৩টি, ইতিহাস ২টি, রাজনীতি ১টি, ধর্মীয় ১টি ও অন্যান্য ২০টি।

উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে এম শাহজাহান মিঞার লেখা ‘বিলাত বাংলাদেশ’, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘জাতীয়তাবাদ ক্ষমা সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি’, ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর ‘পিতা বনাম স্থপতি’, আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেকের ‘ফিরে চাই অরণ্য’, কবি প্রকাশনী থেকে অহ নওরোজের কবিতার বই ‘নীল নৌকার নারী’, তালাত মাহমুদের উপন্যস ‘আরেক বসন্ত’, অক্ষর প্রকাশনী থেকে সেলিনা হোসেনের ‘শামসুজ্জামান খান ৭৫ পূর্তি সংবর্ধনাগ্রন্থ’, কথাপ্রকাশ থেকে আনজীর লিটনের ‘প্রিয় হেডমাস্টার’, অনন্যা থেকে রাবেয়া খাতুনের ‘ছোটদের চার উপন্যাস’, প্রজ্জলন প্রকাশ থেকে আবদুল কাদের মুন্নার ‘ভাবনার ব্যালকনিতে...’ ভাষাচিত্র প্রকাশন থেকে পীর হাবিবুর রহমানের ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’।

মোড়ক উন্মোচন
গ্রন্থমেলার নজরুল মঞ্চে মোট ৮টি বইয়ের মোড়ক উন্মেচন হয়। ভোরের শিশির থেকে রিয়াদুল হকের ‘আমার মা’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন কবি আসাদ চৌধুরী। এছাড়া সায়মন প্রকাশন থেকে এদিন নজরুল মঞ্চে তিনটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়। এরমধ্যে হুমায়ূন কবিরের ‘বাঁধা পড়ে আছে’, ইখতিয়ার বি চৌধুরী ‘অধরা’, রমেন্দ্র হালদারের খুনসুটি’।

মূলমঞ্চের আয়োজন
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘গত বছরে বাংলাদেশের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান। আলোচনায় অংশ নেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং রেজাউদ্দিন স্টালিন। সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী অমিয় বাউল, খগেন্দ্রনাথ সরকার, বাবু সরকার, মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, রহিমা খাতুন, পল্লবী সরকার মালতী, মো. মিলন, সুধীর মন্ডল, বিমল বাউল, জাকির জাফরান এবং আব্দুল আলীম।

শুক্রবারের আয়োজন
এদিন বইমেলার দুয়ার খুলবে বেলা ১১টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার দেওয়া হবে।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। আলোচনায় অংশ নেবেন সাংবাদিক আবেদ খান, মুনীরুজ্জামান এবং হাসান হাফিজ। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সাখওয়াত আলী খান।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫

** স্টল-প্যাভিলিয়ন ভাড়া ফেরত চান প্রকাশকরা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।