ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

মেলার জন্য বইয়ের প্রস্তুতি

প্লেট প্রিন্টিং বাইন্ডিংয়ে ব্যস্ত প্রেসপাড়া

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
প্লেট প্রিন্টিং বাইন্ডিংয়ে ব্যস্ত প্রেসপাড়া ছবি: রানা- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘এই প্ল্যাট হইছে দ্রুত প্রিন্টিংয়ে দে, আর যেগুলোর প্রিন্ট বাইর হইছে সেগুলো বাইন্ডিংয়ে নিয়া যা...’ ফকিরাপুলের সিলভার প্রিন্টার্স অ্যান্ড বাইন্ডিংয়ের সুপারভাইজার কবির হোসেন ছাপাখানার এক কর্মীকে এভাবেই তাড়া দিচ্ছেন। তার এমন নির্দেশনায় ছাপাখানা কর্মী হাসানও বললেন, ‘ঠিক আছে ওস্তাদ...’
 
এদিকে ছাপাখানার সামনে বসা মালিক খায়রুল আলম পান চিবুতে চিবুতে সুপারভাইজারকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘সবাইরে কও হাত জলদি চালাইতে’।

রাজধানীর বিভিন্ন ছাপাখানা ঘুরে দেখা গেছে কাজের এমন তোড়জোড়।
 
ফকিরাপুল, বাংলাবাজার, প্যারীদাস রোড, সূত্রাপূর, আরামবাগ, পল্টন ও বাবুবাজারের ছাপাখানা ও বাইন্ডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন ব্যস্ত দৃশ্যই বলে দিচ্ছে, দুয়ারে একুশের বইমেলা।
 
শনিবার সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন ছাপাখানা ঘুরে দেখা গেছে, বিরামহীন খটখট আওয়াজে কাজ চলছে ছাপার। মুদ্রণযন্ত্রে একদিক দিয়ে কাগজ ঢুকছে, অন্যদিক দিয়ে ছাপা হয়ে বেরিয়ে আসছে। বাঁধাই হয়ে নতুনের ঘ্রাণ নিয়ে বই হয়ে চলে যাবে অমর একুশে বইমেলায়।
 
বর্তমানে রাজধানীর মুদ্রণ যন্ত্রগুলোতে দিনে তো কাজ হচ্ছেই, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে সারা রাত অবিরাম কাজ চলছে।
 
মুদ্রণ যন্ত্রের কারিগর ও বাঁধাইয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা জানান, ডিসেম্বর থেকে কাজ পেলেও জানুয়ারির শুরু থেকেই বইমেলার কাজ নিয়ে তারা তুমুল ব্যস্ত। বইমেলার কারণে কাজের চাপ বেশি থাকায় মেশিন চালক ও বাঁধাইয়ের সঙ্গে জড়িত অনেক শ্রমিকেরই ছুটি বাতিল হয়েছে। তবে ছুটি বাতিল হলেও অসন্তুষ্ট নন তারা।
 
বাবু বাজারের শোভা প্রিন্টার্সের ছাপাখানা কর্মী ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাড়তি কাজের জন্য ওভার টাইম হিসেবে অতিরিক্ত মাইনে তো পাচ্ছিই...’
 
পুরান ঢাকার বাবুবাজারে রাস্তা থেকেই রঙের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া গেল। একপাশে ছাপা ফর্মা স্তূপ করে রাখা। ছাপাখানার কর্মীরা জানান, শীতের দিনে বিদ্যুৎ কম যায়। তাই একটানা কয়েক ঘণ্টা কাজ করা যায়।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, বড় বড় কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ছাপাখানা থাকলেও মেলায় নির্দিষ্ট সময়ে বই সরবরাহ করার জন্য তাদেরও বিভিন্ন ছাপাখানার ওপর নির্ভর করতে হয়। এ জন্যই মূলত এ সময়ে সারা বেলা ব্যস্ত থাকে ছাপাখানাগুলো।
 
একুশে বইমেলার মুদ্রণ কাজের বিষয়ে কথা হয় ফকিরাপুল ঝর্ণা প্রিন্টার্সের কর্ণধার আবুল কালামের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয়, বই মুদ্রণে ছাপাখানার প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘পেনড্রাইভ বা সিডিতে পাণ্ডুলিপি পাওয়ার পর ফর্মা অনুযায়ী প্লেট ঠিক করি, এরপর প্ল্যাট বাহির করে মুদ্রণে দেওয়া হয়। মুদ্রণ হওয়ার পর বাইন্ডিংয়ে যায়। ’

বই ছাপার কাজের শুরু থেকে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত সময়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধরা যাক কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ১ হাজার কপির বই ছাপাবে। এতে সাধারণত ৬ থেকে ৭ দিন সময় লাগে। প্রথম দিন প্লেট ও প্রিন্টিং বের হলেও পরের ৩ থেকে ৫ দিন লাগে বাইন্ডিংয়ে। ’
 
বইমেলা শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্ডার দেয় ছাপাখানাগুলোতে। সেই অনুপাতেই বই তৈরির কাজ শুরু হয়। এ ছাড়া বইয়ের  সঙ্গে এর মলাট তৈরির কাজেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যস্ততা সমানতালে বেড়ে যায়। বইকে নান্দনিক রূপ দিতে তাদের চেষ্টাও এ সময়ে কম থাকে না। ছাপাখানাগুলোর পাশাপাশি সমানতালে ব্যস্ত বই বাঁধাই করার প্রতিষ্ঠানগুলোও।
 
বাংলাবাজারের রাতুল বুক বাইন্ডার্সের ম্যানেজার রাসেল খান বাংলানিউজকে জানান, জানুয়ারির শুরু থেকেই বইমেলার বই বাঁধাইয়ের কাজ চলছে। বই মজবুত করার জন্যই এসব কাজও করতে হয় যত্ন নিয়ে।

লেখা, কম্পোজ, অলংকরণ, ছাপা, পেস্টিং, বাইন্ডিং এগুলোর পৃথক কাজের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এক একটি বই পাঠকের হাতে আসে। সেই বই কিনতেই গ্রন্থানুরাগীদের সমাবেশ ঘটবে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশের বইমেলায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এডিএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।