ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

‘এক খণ্ড’ নিরাপত্তা বলয় বইমেলায়

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬
‘এক খণ্ড’ নিরাপত্তা বলয় বইমেলায় ছবি: দীপু মালাকার /বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ‘ডিউটি আজ পড়েছে মেলায়। কাল কোথায় হয় কে জানে।

তবে এখানে ডিউটিতে উপর থেকে কড়া নির্দেশ আছে, যেন সব সময় তৎপর থাকি। সারাদিন রাত মিলিয়ে তিন শিফটে আমাদের কাভার করতে হচ্ছে বইমেলা, সঙ্গে টিএসসি এবং দোয়েল চত্বর এলাকাও রয়েছে’।

মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি মূল ফটকে দাঁড়িয়ে এক পুলিশ সদস্য বাংলানিউজকে ঠিক এমনই তথ্য দিলেন। তিনি আরও বললেন, কাল তো উদ্বোধন গেলো, আমাদের হিসেবে আজ থেকে মূল মেলা শুরু, প্রতিদিন এমনই পুলিশি বলয় থাকবে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে, দিন বিশেষে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

দলবেঁধে প্রবেশ করছেন মানুষ। একদিকে টিএসসি গেট, অন্যদিকে দোয়েল চত্বর গেট দিয়ে প্রবেশ। যার আগে অনেকটা দূর পর্যন্ত পুলিশি উপস্থিতি সার্বক্ষণিক। যাকে বলা যায়, পুলিশের কড়া নিরাপত্তা। এরপর মেলার দুই প্রাঙ্গণ তথা বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এলেই ১২টি স্ক্যানার। আর স্টলে স্টলে ঘুরে বেড়ানোতেও উপস্থিতি পুলিশের।

এই যেমন বাংলা একাডেমি মঞ্চের ঠিক আগে সারি সারি দাঁড়িয়ে পুলিশ সদস্যরা। তাদের মধ্যে একজন কনস্টেবল জামাল। তার সঙ্গে পরিচয় দিয়ে অনেকটা সময় কথা হয়। তিনি জানালেন, গতবারের চেয়ে পুলিশ এবার মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক বেশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

তার পাশে থাকা আরেক কনস্টেবল মান্নান বলেন, আমাদের টিম ভাগ ভাগ হয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। টিএসসির আগে থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা অংশ, ওই দিকে দোয়েল চত্বর গেট- সবখানে রয়েছে পুলিশ।

বইমেলায় বাংলা একাডেমি অংশে পুলিশের নিরাপত্তার সমন্বয়ক বা ইনচার্জ, শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুরো মেলা ও তার আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন পোস্টের ৫শ’র কাছাকাছি পুলিশ সদস্য সব সময় দায়িত্বে রয়েছেন। যারা তিনটি শিফটে ৮ ঘণ্টা করে কাজ করছেন। আমি নিজে একাডেমি অংশে যার সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।

নারী-পুরুষ উভয় পুলিশ সদস্যই দায়িত্বে নিয়োজিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রায় শ’খানেক নারী পুলিশ মেলায় কাজ করছেন। আর পর্যাপ্ত পুরুষ সদস্য তো আছেনই। প্রতিদিনেই এমন সংখ্যা থাকবে, তবে বিশেষ দিনগুলো এবং ছুটির দিনকে কেন্দ্র করে এই নিরাপত্তা আরও বাড়তে পারে।

এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে পুলিশের নিরাপত্তার সমন্বয়ক বা ইনচার্জ, শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন ফরাজি বাংলানিউজকে বলেন, সব দিক থেকে এবার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। ছোট্ট কোনো ব্যত্যয়ও আমরা সহ্য করবো না। এক খণ্ড নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছি, আরও সাজিয়ে-গুছিয়ে তোলা হচ্ছে। আগত বইপ্রেমীরা যেন এসে নিরাপদরোধ করেন, স্বস্তিতে ঘোরেন এসব দায়িত্ব আমাদের।

বইমেলায় দায়িত্বে থাকা নারী পুলিশ সদস্য রেহানা জানান, সন্দেহজনক কোনো আচরণ বা পরিস্থিতি তারা নজর রাখছেন। এড়াছা ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে মেলার দু’প্রাঙ্গণ। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই মূল কাজ।

জানা যায়, মেলা ও মেলার আশপাশে পুলিশের তিন শিফটে দায়িত্ব ভাগে ভাগে পালিত হচ্ছে। সকালে আছেন সাড়ে চারশ’ জন। দুপুর সিফটে প্রায় নয়শ’। আর রাতে দায়িত্বে প্রায় দুইশ’ সদস্য। সব মিলিয়ে ১৬শ’র কাছাকাছি পুলিশ এই মেলাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছেন। সেই সঙ্গে ৪টি ওয়াচ টাওয়ার সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে। মেলার দুই ফটকে এপিসি ও জলকামান রয়েছে ২টি করে মোট ৪টি। ঢোকার পথে রয়েছে ১২টি স্ক্যানার, প্রয়োজনে যা আরও বাড়বে। এছাড়া দুই শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা তো রয়েছেই।

এর পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মীরা তো আছেনই। যা সবখানে ছড়ানো-ছিটানো। আরও আছেন গোয়েন্দা সদস্যরা।

পুলিশের পাশাপাশি মেলায় রয়েছে র‌্যাবেরও ক্যাম্প। যার অবস্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, মেলার ভেতর ৩৭ জন র‌্যাব সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। মেলার বাইরে দু’টি টহল ইউনিটে ৮ জন করে আছেন ১৬ জন। এছাড়া রয়েছে ২টি ওয়াচ-টাওয়ার।

দ্বিতীয় দিন ঢাকা কলেজের মাধ্যমিক শেষবর্ষের কয়েকজন বন্ধু নাজিমউদ্দিন, অভি, সাব্বির, মিলন, নাহিদ, নীরব, রাজু একত্রে আসেন মেলায় ঘুরতে। তাদের কাছে একই রকম প্রশ্ন ছিল নিরাপত্তা বলয় কেমন দেখছেন মেলায়- এর জবাবে নাজিমউদ্দিন বলেন, অনেক পুলিশ। তারা তো স্টলে-স্টলে পাশে পাশে ঘুরছেন। বাইরে রাস্তাতেও তাদের উপস্থিতি কম নয়। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে খেয়াল রাখা দরকার, সব কিছু বেশি হলেই কিন্তু ভালো নয়।

নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশ্ন ছিল তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা), লেখক-পাঠকরা নিরাপদ মনে করলেই পুরো মেলাই নিরাপদ। তবে জঙ্গিবাদি দানবের কোনো বাছ-বিচার নেই। তাদের চক্রান্ত চলমান। এসব থেকে আমাদের সব সময় সতর্ক চোখ রাখা দরকার।

সু্ষ্ঠুভাবে এবারের বইমেলা চলবে এবং পাঠক-লেখকের সত্যিকারের মিলনমেলায় পরিণত হবে বলেও মত দেন তথ্যমন্ত্রী। বাংলানিউজকে তিনি আরও বলেন, সবাই সচেতন এবং সতর্ক থাকবেন।

সাহিত্যিক-সাংবাদিক রেজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এবার আয়োজনটা অনেক বড়। তাই পুলিশ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশি হবে তা স্বাভাবিক। এবার বেশ ভালোই সাজানো হয়েছে মেলা, বাংলা একাডেমিতে প্রশাসনিক কাজ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব স্টল। এতে নিরাপত্তাতেও সুবিধা, আর বই কেনাবেচাতেও সুবিধা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬
আইএ/জেডএম

** পরিসর-নিরাপত্তায় স্বস্তিতে নারীরা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।