ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

মেলা এখনও ঢের বাকি!

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
মেলা এখনও ঢের বাকি! ছবি: দীপু মালাকার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ‘শনিবারে হলুদ ও রোববারে লাল, এই ভাবে জমে যাবে মেলা লালে লাল!’ ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এভাবে ছন্দ মিলিয়ে ছড়া কাটলেন অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা। সোহরাওয়ারর্দী উদ্যানের চার নম্বর প্যাভিলিয়নটি তাদের।



সেখানে থরে থরে বই সাজানোর কাজ চলছিলো তখনও। ভ্যানে করে রাজধানীর ৩৮, বাংলাবাজার থেকে নতুন কিছু বই এসেছে। যার ভ্যানচালক রেজাউল।

এদিকে মেলা শুরু হয়ে গেছে। বাইরে খানিক ভিড় করে থাকা লোকজনও প্রবেশের পেয়েছেন অনুমতি। রেজাউলকে চলে যেতে অনুরোধ পুলিশ সদস্যদের। এসব কোলাহলের মধ্যেই বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ব্যবস্থাপক মাসুদের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি রোম্যান্টিক সুরে বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে (রোববার-১৪ ফেব্রুয়ারি) লালে লাল হবে গ্রন্থমেলা। হাতে হাত রেখে মেলায় ঘোরা এবং অন্তত একটি করে বই উপহার দেওয়ার দিন সেটি। তার আগের দিন শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ‘পহেলা ফাল্গুন’ (বসন্তের প্রথম দিন)। পুরো মেলা মাঠ সেদিন সরিষার মতো হলুদ খেতে পরিণত হবে। এছাড়া তার আগের দিন শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি), সরকারি ছুটি। সব মিলিয়ে বিক্রি-বাট্টা ভালোই হবে। সুতরাং মেলা তো এখনও ঢের বাকি!

তিনি পরিসংখ্যান দিয়েও কথাটিকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন। জানালেন, অবসর প্রকাশনী থেকে এখন পর্যন্ত ৪০টি বই এসেছে। আরও ২৫টি বই আসার অপেক্ষায়। প্রায় সবগুলো প্রকাশনীরই একই অবস্থা। সবার ৯০/৯৫ শতাংশ বই এসে গেলে মেলার গমগমে পরিস্থিতি তো তখনই তৈরি হবে।

তিনি বলেন, গেলো শুক্র-শনি ছুটির দিন তো কিছুই ছিলো না। এরচেয়েও লোক সমাগমের চমক বাকি। এখনও অনেকেই ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাননি, সেটি হাতে বা ব্যাংকে ঢুকলেও অনেকে মেলায় ছুটে আসবেন।

শোভা প্রকাশনীর পরিচালক, প্রকাশক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মেলা সুন্দর হচ্ছে। বোধ করি আরও জমবে। আমরা আরও ২৫টি বই আনবো। ইতোমধ্যে এসে গেছে ৭৫টির মতো। আমাদেরই বই প্রকাশের সেঞ্চুরি হলো না! এর আগে মেলা জমে কী করে!

তম্রলিপি প্রকাশনীর কোষাধ্যক্ষ মো. শাহাদত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দশ দিনে ৪১টি বই এসেছে। আরও ১শটি আসবে। এখনও না আসার পরিমাণই তো বেশি। তাও মানুষজন আসছেন, নতুন নতুন যে বইগুলোই এসেছে তাই দেখছেন।

মেলার সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণ অভিমুখে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই নেসার উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মেলার বিশেষ দিনগুলোতে ফোর্স সংখ্যা বাড়বে। তখন অতিরিক্ত ভিড়ের কথা মাথায় রেখে আমাদেরও কর্ম-পরিকল্পনা রয়েছে। ডিএমপির একটি বিশেষ শাখা থেকে সাদা পোশাকে জনবল বাড়ানো হবে বলে শুনেছি।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য বাংলানিউজকে জানান, চুলচেরা বিশ্লেষণে কাজ চলছে তাদের। আর এখন থেকে ছুটির দিন বা বিশেষ দিনগুলাতে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে। সে জন্য আরও বেশি মাঠে থাকছে ডিবি, এনএসআই, ডিজেএফআই, র‌্যাবসহ সাধারণ পুলিশরাও।

উত্তরা থেকে সপরিবারে এসে মেলা ঘুরছিলেন জহুরুল হক। বিশেষভাবে ছুটি নিয়ে এদিন তার গ্রন্থমেলায় আসা। প্রশ্ন ছিল শুক্র-শনিবারে ছুটি নেই? উত্তরে বলেন, ‘ওই দিন ভিড় হবে ভাই, তাই পরিবার নিয়ে চলে আসলাম। এতোগুলো বই কিনবো আর একটা ছুটি পাবো না তা কি হয়! সঙ্গে তিন হাজার টাকা নিয়ে এসেছি। বিশাল অংকের খরচায় পুরো পরিবারের বইয়ের বাজার হবে আজ!’

তার স্ত্রী শামীমা, দুই ছেলে স্বপ্নিল এবং অমি জানান, সবাই যে যার মত মতো বই কিনবেন। ঘুরে ঘুরে পছন্দ মতো কেনাকাটায় সরকারি কর্মদিবস বেশ উপকারী।
মেলা খুলে গেলেও লোক দেখা যাচ্ছে না বাংলা একাডেমি অংশের লিটল ম্যাগ চত্বরে। এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। কেন? কারণ কী? এ বিষয়ে জানতে কথা হয় লিটল ম্যাগ প্রান্তস্বরের মেলা সমন্বয়কারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার এখনও জমে ওঠেনি এই চত্বর। আশা হারাইনি, সামনে কী হয় দেখা যাক।

ঠিক তার বিপরীতে স্টল লিটল ম্যাগ খড়ি মাটির। সেখানকার ব্যবস্থাপক আশরাফ জায়েদ বাংলানিউজকে বলেন, তুলনামূলক ভিড় পাচ্ছি না আমরা। সব জোয়ার চলে যাচ্ছে মনে হয় ওইপারে সোহরাওয়ার্দীতে। তবে এই জায়গাটা কবিদের প্রাণের। আর যারা ছোট কাগজ পড়েন তাদেরও টান আছে। সুতরাং সমস্যা নেই। তিনি জানালেন, কেবল দশ দিন চলছে। মেলা তো এখনও ঢের বাকি…!

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
আইএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।