ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

পাঠক শূন্যতায় লিটলম্যাগ কর্নার, বন্ধ্যাকাল ছোটকাগজের

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
পাঠক শূন্যতায় লিটলম্যাগ কর্নার, বন্ধ্যাকাল ছোটকাগজের ছবি: দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: অমর একুশে বইমেলায় সব স্টলেই কম-বেশি বিক্রি চলছে। ব্যতিক্রম কেবল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের লিটল ম্যাগ কর্নারটি।



একাডেমির বর্ধমান হাউজের পাশ দিয়ে ছোট্ট সরু গলির মতো জায়গা দিয়ে প্রবেশমাত্রই নজরে পড়বে বিশাল এক বহেড়া গাছ। আর এই গাছ কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে ‘লিটল ম্যাগ কর্নার’।

গেলো কয়েক বছর ধরেই বইমেলাস্থল বাংলা একাডেমির বহেড়া তলায় বসছে লিটল ম্যাগ কর্নার। যদিও এর কেতাবি নাম ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চত্বর’। কিন্তু পরিচিত লিটলম্যাগ কর্নার নামেই।

লিটলম্যাগ মানেই প্রথাবিরোধী অবস্থান। প্রাতিষ্ঠানিক ধারার বাইরে নিজের মতো করে অনেকটা দুঃসাহসিক ও খোলামেলাভাবে সাহিত্য চর্চা করেন লিটলম্যাগ লেখকরা। মূলত পাঠকই লিটলম্যাগের লেখক; লেখকই এর পাঠক।

বছর কয়েক আগেও লিটলম্যাগ নিয়ে মাতামাতি থাকলেও এখন সে চিত্র নেই। বিক্রিবাট্টায় ভাটা পড়ায় মেলা ঘিরে বিগত বছরগুলোর মতো এখন আর প্রকাশও হচ্ছে না এসব ম্যাগ।

মেলার ১৬তম দিন পর্যন্ত লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণে ঘুরে বিক্রির যে চিত্র পাওয়া গেছে তা অনেকটা হতাশাজনক। কয়েকটি স্টলে মেলার ১৬ দিনে ১৬টি সাহিত্য পত্রিকা বিক্রি না হওয়ার রেকর্ডও আছে। বেশিরভাগ স্টলেই পুরাতন বিভিন্ন প্রকাশনা দেখা গেছে।

‘আড্ডা’র স্টলের কর্ণধার সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এবার লিটলম্যাগ অন্য বছরের তুলনায় কম প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া তেমন ক্রেতাও নেই।

মেলা ঘুরে দেখা গেলো, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার দুই প্রাঙ্গণ জমলেও জমেনি লিটলম্যাগ চত্বর। এর কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লিটলম্যাগকেন্ত্রিক যারা সাহিত্যচর্চা করতেন তারা এখন অনলাইনে সাহিত্য চর্চা করছেন। ফেসবুক, বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা, সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন পোর্টালে লিখে পাঠকের সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। তাই অনেকেই অনলাইনকেই লেখালেখির মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

এসব বিষয়ে কথা হয় লিটলম্যাগ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কবি শাবিহ মাহমুদের সঙ্গে। অনলাইনের কারণে লিটলম্যাগকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চা কমে গেছে- এমনটা স্বীকার করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এটা আসলে খুব পীড়া দেয়। অনলাইনের বড় একটা প্রভাব রয়েছে লিটলম্যাগের পাঠক কমার ক্ষেত্রে। একসময় মেলা ঘিরে অসংখ্য ছোট কাগজ বের হতো। এখন হচ্ছে না।
লিটলম্যাগ চত্বরে কথা হয় তরুণ সাহিত্যিক সুমন্ত পালের সঙ্গে। বলেন, তারুণরা এখন অনলাইনকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া-মন্তব্য পাওয়া যায় তাই লিটলম্যাগের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এখন অনলাইনে লিখছেন।

লিটলম্যাগ চত্বরে বিক্রিতে মন্দাভাব থাকলেও সন্ধ্যায় এ প্রাঙ্গণে কিছু তরুণ সাহিত্যকর্মীর দেখা মেলে।

এবার ৫৬টি লিটলম্যাগ স্টল দিয়ে সাজানো হয়েছে লিটলম্যাগ চত্বর। চত্বরে অবস্থিত স্টলগুলোর মধ্যে আছে শব্দপাঠ, এবং মানুষ, তুষারধারা, চারকোণ, মারমেইড, আড্ডা, মেঘফুল, কৃষাণ, দোলফ, চন্দ্রছাপ, মেঘ, লোক, চৈতন্য, চিহ্ন, অবাক, চালচিত্র, কবিতাচর্চা, প্রান্তস্বর, আগুনমুখা, উন্মুক্ত, ধমনি, ম, কবি, ভিন্নচোখ, শব্দগুচ্ছ, দ্রষ্টব্য, কবিতাবাংলা, শালুক, চর্যাপদ, মত ও পথ, থিয়েটার, গল্পকথা, তৃতীয়চোখ, নন্দন, সুন্দরম, প্রতিবুদ্ধিজীবী, নিসর্গ, গাণ্ডীব, ঊষালোক, কালেরধ্বনি, সাম্প্রতিক, খেয়া, দিগন্ত, অনুপ্রাণ, হুচ, কবিতাপত্র, শিরদাঁড়া এবং মাঝখানে গোল করে একটি উন্মুক্ত স্টল রাখা হয়েছে। সেখানে যে কেউ বিক্রির জন্য লিটলম্যাগ রাখতে পারেন।
১৬তম দিনের চিত্র
বইমেলার দুয়ার খোলার সময় বাংলা একাডেমির প্রবেশপথে দেখা গেলো আগতদের দীর্ঘ লাইন। নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা দর্শনার্থীদের বুক-পকেট-ব্যাগে তল্লাশি চালাচ্ছেন। কিন্তু ভেতর ঘুরে অতটা ভিড় দেখা গেলো না। মেলার প্রথম দিন থেকে জোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। মেলার ১৬তম দিনে একটুও কমতি নেই তাতে। এ জন্যই ভেতরের চাইতেও প্রবেশপথে ভিড় বেশি।

বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এসেছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। আর তিনি আসা মানেই অটোগ্রাফ শিকারিদের ভিড়। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

অটোগ্রাফ প্রত্যাশীরা যাতে হুমড়ি খেয়ে না পড়ে সেজন্য এক পুলিশ সদস্য অনেকগুলো বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা ওই পুলিশের হাতে বই তুলে দিচ্ছিলেন আর লেখক তার হাত থেকে বই নিয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন- কিন্তু এতেও হুল্লোড় থামানো যায়নি!
মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাহমুদ নূরুল হুদা জন্মশতবর্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বরোচিষ সরকার। আলোচনায় অংশ নেন ড. নেহাল করিম, হাশেম সূফী, শামসুজ জাহান নূর, এবং মাহমুদ নুরুল হুদার ভ্রাতুষ্পুত্র এইচ এইচ মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন ড. এনামুল হক।

বক্তারা বলেন, মাহমুদ নূরুল হুদা ছিলেন একজন নিঃশব্দ বিপ্লবী। তিনি বিশ্বাস করতেন, সংস্কৃতিই জাগরণের প্রথম সূত্র। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন ভীষণ রাজনীতি সচেতন ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির একজন মানুষ।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাঁধনহারা’, নবীন কিশোরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম’ এবং ঝর্ণা আলমগীরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা।  
নতুন বই
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, মঙ্গলবার মেলায় এসেছে ৮৪টি নতুন বই। এর মধ্যে গল্প ১৮, উপন্যাস ১১, কবিতা ২৪, ছড়া ৪, শিশুতোষ ৭, জীবনী ২, রচনাবলী ১, নাটক ১, বিজ্ঞান ২, ইতিহাস ১, চিকিৎসা ১, কম্পিউটার ২, ধর্মীয় ২ ও অন্যান্য বিষয়ের বই এসেছে ৮টি।

উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে অবসর থেকে সৈয়দ শামসুল হকের ‘নির্বাচিত সেরা সাত’, অন্যপ্রকাশ থেকে আরিফ মঈনুদ্দিনের ‘ভালোবাসার দিনে প্রেমের পঙক্তিমালা’,  মাওলা ব্রাদার্স থেকে হাবীবুল্লাহ সিরাজীরা ‘যে শ্রেষ্ঠ একা’, জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ‘স্বপ্নে সীমানায় পারাপার’, আহমদ জসিমের উপন্যাস ‘লালু অপেরার কইন্যা’, অ্যাডর্ন এনেছে তুষার আব্দুল্লাহর ‘তোমরা, সুন্দর হও,’ ঝিনুক প্রকাশনী এনেছে ‘গল্পগুলো ডাইনোসরের’, বাংলাপ্রকাশ এনেছে মাসুদা ভাট্টির ‘প্রেম ও মৃত্যুর গল্প,’ শব্দশৈলী এনেছে মোজাম্মেল হক নিয়োগীর ‘শরণার্থী শিবির থেকে সম্মুখযুদ্ধে’, স্টুডেন্ট ওয়েজ এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘মিশ্রগদ্য’, পুথিনিলয় এনেছে হায়াৎ মামুদের ‘ভিনদেশের রূপকথা’, অনন্যা এনেছে মোস্তফা মামুনের ‘ভালোবাসার কালিতে ক্রিকেটের গল্প’, আগামী থেকে প্রকাশিত মাহমূদ সাইয়েদের ‘বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ইতিকথা, একই প্রকাশনী থেকে ড. চিত্তরঞ্জন দাশের ‘ভিক্টোরিয়া থেকে নায়াগ্রা : জানা অজানার পথে পথে’, অবসর থেকে হাসান ইকবালের ‘ভাষা, নারী ও পুরুষপুরাণ’।
বুধবার মূল মঞ্চের আয়োজন
বুধবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘শওকত ওসমান জন্মশতবর্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। আলোচনায় অংশ নেবেন মঈনুল আহসান সাবের, জাকির তালুকদার, নুরুল করিম নাসিম এবং জয়দুল হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। এছাড়া প্রতিদিনকার মতো সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এডিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।