ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

এরশাদের আত্মকথনে ‘আমার কর্ম আমার জীবন’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
এরশাদের আত্মকথনে ‘আমার কর্ম আমার জীবন’

‘আমার জীবনে ফলাও করে প্রচার করার মতো ঘটনা অনেকই ঘটেছে!’ এমন একটি সাহসী কথা দায়িত্ব নিয়ে ক’জনই বলতে পারে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পারেন।

তিনি কেবল পারেনই না, বলেছেনও। কোথায়? কখন? সে প্রশ্ন উঠবেই। আর উত্তরটি হচ্ছে- তার আত্মজীবনীতে।

এবারের বই মেলায় ঢাউশ একখানা বইয়ে এরশাদকে তুলে ধরা হয়েছে। যাকে তিনি আবার আক্ষরিক অর্থে কোনও আত্মজীবনী বলতে নারাজ। বলেছেন, এটি তার সুদীর্ঘ জীবনের খণ্ডাংশের চিত্র মাত্র।

নিজের জীবনকে সুদীর্ঘ বলতে পারাটাও একটি ব্যতিক্রম। দেশের মানুষের গড় আয়ু যেখানে ৬৫ বছর সেখানে এই বসন্তে নিজের জীবনের ৮৬তম বসন্তটি পার করলেন তার রূপ-রস-গন্ধ উপভোগ করেই।

নব্বইয়ের কাছাকাছি পৌঁছে এবার প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার ঢাউশ গ্রন্থে তিনি নিজেকেই উন্মোচিত করলেন। হোক সে খণ্ডচিত্র। এটি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আত্মজীবনী। নাম- ‘আমার কর্ম আমার জীবন’।

নিজের জবানিতে টানা বলে গেছেন নিজের জীবনের কাহিনী। সঙ্গে সব ছবি। সেই সাদাকালোর যুগ থেকে তা রঙিন হয়ে ক্রমেই আরও আরও রঙ ছড়িয়েছে। শুরুটা ‘আত্মপক্ষ’ দিয়ে। তাতে বলেছেন: ‘ফলাও করে প্রচার করার মতো ঘটনা আমার জীবনে অনেকই ঘটেছে। কিন্তু তার সবকিছুই অর্থপূর্ণও নয়। ছিয়াশি বছরের সিঁড়িতে পা দিয়ে মনে হয়, এ জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কিছু ঘটনা নিরর্থক, অসঙ্গত এবং কখনো কখনো অনাহুতও বটে। ’

কবিতা এরশাদ লিখেছেন, কবি হিসেবে পরিচিতিও পেয়েছেন। কিন্তু গদ্যেও যে তার হাত রয়েছে, রয়েছে শব্দের গাঁথুনিতে দক্ষতা তা এই বইয়ের লাইনে লাইনে প্রকাশ পেয়েছে।
 
তবে আত্মজীবনী তুলে ধরাই যার উদ্দেশ্য তার সাহিত্যগুন নিয়ে আলোচনার সুযোগ কম। বইয়ের আধেয়ই এর ভেতরে পাঠককে টেনে নেবে। এতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে পারিবারিক বিস্তারের নানা দিক এনেছেন। এনেছেন শৈশব কৈশরের দিনগুলো। দিনহাটায় তার সেই স্কুলের দিনগুলোর পথ ধরে কারমাইকেল কলেজে জীবনের সোপান কীভাবে রচিত হয়েছিলো।

প্রেমিক পুরুষ এরশাদ সেকথাও সর্বজন বিদিত। আর সে প্রেমতো তারুণ্যেই ধরা দেবে। কিন্তু কিভাবে। প্রথম পাওয়া সেই প্রেমের চিঠিখানির কথা তিনি বলে গেছেন অকপটে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হয়ে বাবার অজ্ঞাতেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া। আর অতপর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং তারপর আরও কতকিছু। সব রয়েছে এই বইয়ে।

এরশাদের নিজেকে তুলে ধরার আরেক নাম অন্তত দশটি বছরের বাংলাদেশকে তুলে ধরা। এই বইয়ে পাঠক সেই সময়ের অনেক কথাই জানতে পারবেন। সে সময়ের রাজনীতি, অর্থনীতি সামাজিক প্রেক্ষাপটও উঠে এসেছে তারা বিষয়ভিত্তিক আলোচনাগুলোতে।  

১৯৩০ থেকে ২০১৬ এই দীর্ঘ সময়ের বাংলাদেশকে নিজের স্বাধীন, সার্বভৌম সময়ের বাইরেও থাকতে হয়েছে ব্রিটিশ শাসনাধীন আর নিষ্পেশিত হতে হয়েছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতেও।   জেনারেল এরশাদের এই বইয়ে সেই দীর্ঘ ক্যানভাসে একটি বাংলাদেশের উত্থান-পতনের খতিয়ান মিলবে। তবে তিনি বেশিই জোর দিয়েছেন নিজের শাসনামলের সময়টিতে।

দীর্ঘ জীবনে নিজের কৃতকর্মে তিনি নিন্দিত হয়েছেন, নন্দিতও হয়েছেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে তার ফিরে আসা পদোন্নতির পর পদোন্নতির ধাপ বেয়ে সেনা প্রধানের পদে আসীন হওয়া আর একই সময়ে দেশে সেনাবাহিনীর হাতে ঘটে যাওয়া দুটি প্রধান হত্যাযজ্ঞসহ আরও নানান ঘটনা নিয়ে এই বইয়ে কিছুটা হলেও আলোকপাত রয়েছে। যেসময়টিতে এরশাদ নিজেই বলেছেন ‘কিছুটা স্পষ্ট কিছুটা অস্পষ্ট’। বলেছেন, এসব নিয়ে অনেক কথাই আমার বলার ছিলো। বলতেও ইচ্ছা করে।  

এসব কথারই ফাঁক-ফোঁকরে অবধারিতভাবেই স্থান করে নিয়েছে তার প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদসহ ব্যক্তিগত বর্ণিল জীবনের নানা কাহিনী। আরও রয়েছে তার নিজের দল জাতীয় পার্টির ভাঙ্গা-গড়ার দীর্ঘ ইতিহাসের নানা প্রেক্ষাপট।

তবে এরশাদ নিজেই স্বীকার করেছেন তার জীবনের কিছু ঘটনা নিরর্থক, অসঙ্গত এবং কখনো কখনো অনাহুতও ছিলো। কী সেসব ঘটনা! তাতে কী বর্ণিত হয়েছে! জানতে হলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ পড়তে হবে পাঠককে।

বাংলাদেশ সময় ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।