ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

শহীদ মিনারের মানবস্রোত মিলেছে বইমেলায়

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
শহীদ মিনারের মানবস্রোত মিলেছে বইমেলায় শহীদ মিনারের মানবস্রোত মিলেছে বইমেলায়, ছবি: শাকিল আহমেদ

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: ‘মাগো, ওরা বলে সবার কথা কেড়ে নিবে/তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না/ বলো, মা, তাই কি হয়? তাইতো আমার দেরি হচ্ছে/ তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে তবেই না বাড়ি ফিরবো।’

না, এরপর আর তার বাড়ি ফেরা হয়নি। ঘাতকের বুলেট ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল ছেলের বুক।

কালো পিচঢালা পথ ভিজেছিল বুকের সে রক্তে। বুক পকেটে রাখা মা’র কাছে লেখা চিঠিও ভিজেছিল সেদিন। তবে তার মান রাখছে আজকের সন্তানরা। তাইতো সেদিন মায়ের জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে ফেরা না হলেও আজ ফিরছেন, বইমেলা থেকে নেওয়া বইয়ের ভাঁজে গুচ্ছ গুচ্ছ শব্দ নিয়ে। শহীদ মিনারের মানবস্রোত মিলেছে বইমেলায়, ছবি: শাকিল আহমেদবৃহস্পতিবার ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকেই বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতি স্মরণ করছে আমাদের ভাষাশহীদদের। ভাষার জন্য আমাদের আত্মদানকে স্মরণ করেই আমরা ঋণী হই, ধন্য হই, প্রত্যয়ী হই ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার ব্যঞ্জনা আজ বিশ্বব্যাপী। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হচ্ছে। বইমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়, ছবি: শাকিল আহমেদএকুশের প্রথম প্রহর থেকেই মানুষের ঢল নামে শহীদ মিনারে। নগ্ন পায়ে, মৌন ধীর গতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে হাজার হাজার মানুষ। রাতভর শহীদ মিনারে চলে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ। রাত ভোর হতেই অন্যরকম এক দৃশ্য।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ অথবা ‘মোদের গৌরব মোদের আশা/আমরি বাংলা ভাষা’ গাইতে গাইতে চারদিক থেকে স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকে শহীদ মিনারে। আর প্রভাতফেরি শেষ করে প্রায় সবাই ছুটে আসছে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত রাস্তা একাকার মানুষের পদচারণায়।

বৃহস্পতিবার বিশেষ এই দিনটিতে বইমেলা শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়েই খোলা হয় মেলার প্রবেশ দ্বার। তখন থেকেই হাজারো বইপ্রেমী মেলায় আসতে শুরু করে। তবে মেলায় কেবল শুধু ঘুরতে আসা নয়, অনেকেই প্রিয় লেখকের বইটি কিনে উপহার দিচ্ছেন প্রিয়জনকে। মোড়কের নিচের সাদা কাগজে লিখে দিচ্ছেন একুশের প্রিয় পঙক্তি।

একুশের শোক আর শ্রদ্ধায় আজ প্রায় সবাই পরেছে সাদাকালো পোশাক। একুশের দিনে মেলায় আগতদের মার্জিত পরিপাটি পোশাকে আছে একুশের স্পষ্ট ছাপ। বর্ণমালা স্থান পেয়েছে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের পোশাকে। সাদা আর কালো রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি-ফতুয়ায় যেমন ফুটে উঠেছে ভাষাশহীদদের হারানোর ব্যথা, ঠিক তেমনিভাবে বিভিন্ন রঙের বড় বড় অ আ ক খ বর্ণগুলো জানান দিচ্ছে আমাদের মাতৃভাষার গৌরবময় ইতিহাস। অনেকে আবার লাল শাড়িও পরেছেন। আর তরুণীদের মাথায় আছে ফুলের টায়রা। বইমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়, ছবি: শাকিল আহমেদকেউ কেউ রঙ-তুলির আঁচড়ে হাতে, গালে এঁকেছেন বাংলা বর্ণমালার নানা অক্ষর। কেউবা গালে অংকন করেছেন শুধুই ২১। বাদ যায়নি ছোট ছোট শিশুরাও। তাদের গালে-কপালে আঁকা জাতীয় পতাকা ও শহীদ মিনারের প্রতীক।

রাজধানীর আজিমপুর থেকে মেলায় এসেছেন রুমানা আফরোজ রুপা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী পড়েন বাংলা বিভাগে। রুপা আজ পরেছেন কালো পাড়ের সাদা শাড়ি। শহীদ মিনারে বন্ধুদের সঙ্গে ফুল দিয়ে সরাসরি ঢুকেছেন মেলায়। কিনেছেন হেলাল হাফিজের কবিতার বই। আর জানান, ফেরার পথে বই কিনে নিয়ে যাবেন মায়ের জন্যও।

রুপার মতো হাজারো তরুণ-তরুণীর ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ যেমন মিশে গেছে শহীদ মিনারে। তারা আজ উদযাপন করে ভাষাকে ভালোবাসবেন। ঘরে ফিরবেন মায়ের জন্য হাজারো কথার শব্দ নিয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।