তবে একইদিনে একাধিক পরীক্ষায় শিডিউল পড়ে যাওয়ায় একজন আবেদনকারী একাধিক অবেদন করেও শুধুমাত্র একটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।
টাকা খরচ করে আবেদন এবং প্রস্তুতি থাকলেও একাধিক চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করতে পেরে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বছরের শুরু থেকে প্রথম তিন চার মাস সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া গতি পায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়। শুধুমাত্র চলতি এপ্রিল মাসেই অন্তত অর্ধশত চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে ক্ষোভ জানিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
ফেসবুকে পাওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে সরকারি চাকরির পরীক্ষা ৪৩টি। এরমধ্যে একদিনই রয়েছে ১২টি। অরেকদিন ৮টি পরীক্ষা রয়েছে। গত ২০ এপ্রিল সকালে জীবন বীমা কর্পোরেশনের জুনিয়র অফিসার, সোনালী ব্যাংকের অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষা, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড, পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদ, ২০১৪ সালের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য সেবা কর্মকর্তা পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
একইদিন বিকেলে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এর বিভিন্ন পদ, বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তরের কারা সহকারী, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার নিয়োগ পরীক্ষা ছিলো।
এদিকে আগামী ২৭ এপ্রিল সকাল-বিকেল মিলে রয়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা। সকালে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ডাটা এন্ট্রি পদের লিখিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার পদের প্রিলিমিনারি, পুলিশ হেডকোয়াটারে কম্পিউটার অপারেটর, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরীক্ষা রয়েছে। বিকেলে সোনালী ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদের এমসিকিউ পরীক্ষা, উত্তরা ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার পদের পরীক্ষার সূচি নির্ধারিত রয়েছে।
রুপালী ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদের পুনঃপরীক্ষা, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের ট্রেইনি অফিসার পদের পরীক্ষা রয়েছে ২৮ এপ্রিল। এছাড়াও এই মাসে অন্তত ২৩টি পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চাকরিপ্রত্যাশীদের ব্যাংক ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবগুলোতেই আবেদন করার সময় অর্থ খরচ করতে হয়। জীবন বীমা কর্পোরেশনের জুনিয়র অফিসার পদে ফি ৪০০ টাকা, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড এর নিয়োগ পরীক্ষায় ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়েছে।
প্রস্তুতি নিয়ে ও টাকা খরচ করে একইদিনে পরীক্ষা হওয়ায় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করে মেসে থেকে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে প্রায় প্রতি শুক্রবারই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, পড়ালেখা শেষ করে আবারও মেসে থেকে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। একইদিনে একাধিক পরীক্ষা পড়ায় টাকা খরচ ও প্রস্তুতি নিয়ে কোনো সুফল পাচ্ছেন না। তিনি আরো বলেন, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ৪০০-৫০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার করতে বলে। কিন্তু একইদিনে একাধিক পরীক্ষা পড়ায় কাঙ্ক্ষিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়ে উঠে না।
সরকারি চাকরির নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশনের মতো নিয়োগ কর্তৃপক্ষ থাকলে চাকরি প্রার্থীরা লাভবান হবে বলে মনে করেন আবেদনকারীরা।
রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া এলাকায় একটি ছাত্রাবাসে থেকে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নাইমুর রহমান। একইদিনে একাধিক পরীক্ষা না ফেলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের দাবি তুলে বলেন, তাহলে চাকরিপ্রার্থীরা কোন না কোন চাকরিতে সুযোগ পাবেন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সমন্বয় প্রয়োজন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস