সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার ধরন এবং প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ভোলা দৌলতখান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মোঃ হামিদ পারভেজ।
সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
কি পড়বেন ও কিভাবে পড়বেন:
শুরুতে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে সরকারি কর্ম কমিশনের অধীনে যতগুলো পরীক্ষা হয়েছে সেই প্রশ্নগুলো খুব ভালভাবে দেখে নিন। এতে পিএসসির প্রশ্ন সম্পর্কে একটা ধারনা হবে। পরীক্ষায় এসব প্রশ্ন থেকে কিছু কমনও পাবেন। এবার আসা যাক বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতিতে-
বাংলা:
বাংলা অংশে ব্যাকরণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে পারেন। ব্যাকরণে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানান শুদ্ধি, পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন আসে। সাহিত্য অংশে জানতে হবে কবি সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে। এসএসসি বোর্ড বইয়ের লেখক পরিচিত ও কবি পরিচিতি অংশটুকু পড়তে হবে। পিএসসি নির্ধারিত এগোরো জন সাহিত্যিক সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে রাখা ভালো। সাহিত্যের যুগ, গল্প বা উপন্যাসের রচয়িতা, ছদ্মনাম, বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, কবিতার লাইন উল্লেখ করে কবির নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মোটকথা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে খুব ভাল ধারণা থাকতে হবে।
ইংরেজি:
ইংরেজি গ্রামারের Right forms of verb, Tense, Number, Gender, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- থেকে প্রশ্ন আসে। যে কোন গ্রামার বই থেকে গ্রামারের এই টপিকসগুলো উদাহরণসহ পড়ুন। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idoims, Synonym, Antonym। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদও পড়তে হবে। ইংরেজি সাহিত্য থেকে লেখকদের নাম, তাদের যুগ, তাদের বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, কিছু লিটারেরি টার্মস, কে কে নোবেলজয়ী, কোন নাটক, উপন্যাস বা কবিতা কে লিখেছেন এবং এসব নাটক বা উপন্যাসের বিখ্যাত লাইন ও বিভিন্ন চরিত্র থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে বেসিক ধারণ নিবেন।
গণিত:
গণিতে মার্কস পাওয়া তুলনামূলক সহজ। প্রতিদিন কমপক্ষে তিন ঘণ্টা গণিত প্র্যাকটিস করা দরকার। পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদকষা, লাভক্ষতি, ভগ্নাংশ থেকে প্রশ্ন আসে। বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলী থেকে প্রশ্ন থাকে। মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে ফল বের করার প্র্যাকটিস করতে হবে, যাতে প্রশ্ন দেখামাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে ফল বের করা যায়। জ্যামিতির জন্য ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ প্রাকটিস করবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবই যেমন অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলে ভালো হবে। এছাড়া বাজারে গনিতের অনেক বই পাওয়া যায়। একটি বই ভাল করে অনুশীলন করুন।
মানসিক দক্ষতা:
মানসিক দক্ষতা থেকে ভাষাগত যৌক্তিক বিচার, সমস্যা সমাধান, বানান ও ভাষা, যান্ত্রিক দক্ষতা, স্থানাঙ্ক সম্পর্ক, সংখ্যাগত ক্ষমতা এবং সম্পর্ক (রক্ত, সময়) ও দিক নির্নয় ক্ষমতা থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। মানসিক দক্ষতার একটি বই নিয়ে বিগত বছরে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় আশা প্রশ্নগুলো ভালভাবে অনুশীলন করলে আশাকরি ভাল মার্কস পাবেন।
সাধারণ জ্ঞান:
বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ, জাতীয় দিবস, বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। আর আন্তর্জাতিক অংশে বৈশ্বিক ইতিহাস, ভূ রাজনীতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, দেশ, মুদ্রা, রাজধানী, আন্তর্জাতিক দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা ও বিশ্বের চলমান ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে প্রশ্ন থাকে। নবম দশম শ্রেণীর টেক্সট বইয়ের সাথে একটি রেফারেন্স বই বা গাইড বই থেকে এগুলো পড়তে পারেন। সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন।
নিয়োগ প্রস্তুতির জন্য বাজারে অনেক বই পাওয়া যায়। বিসিএস প্রিলির জন্য বিষয়ভিত্তিক বই কিনতে পারেন। সাথে রাখতে পারে ভালোমানের একটি ডাইজেস্ট। মাসে তিন থেকে চারটি মডেল টেস্ট দেয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিদিনই পড়তে হবে। ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারিতে ১৩০ থেকে ১৪০ নম্বর পাওয়া মানে সেইফ জোনে থাকা। তবে এটা নির্ভর করে প্রশ্নের মানের উপর আর পিএসসির সিদ্ধান্তের উপর। ভাইভায় পাস মার্ক ২০।
প্রস্তুতির পরামর্শের পাশাপাশি আপনার নিজের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে যেভাবেই হোক প্রচুর পড়তে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। প্রত্যেক বিষয়ের জন্যই আলাদাভাবে এবং ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। অবহেলা করা যাবেনা। কারন আপনাকে কয়েক লক্ষ প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
ত্রিশ বছর যে চাকরি করে আপনার জীবন চলবে সেই চাকরির জন্য অন্তত দৈনিক ১২-১৫ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করুন। চাকরিজীবীদের কাজের ফাঁকে সময় বের করে নিতে হবে। যারা নেগেটিভ কথা বলবে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। ভালোভাবে বুঝে পড়লে সেটা ঠিকই কাজে লাগবে। পড়ালেখা কখনো বৃথা যায়না। যেকোন ভাবে এর সুফল আপনি পাবেনই। ভালো প্রস্তুতেই ভালো পরীক্ষা, আর এর মাধ্যমেই ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব। তাই নিজের ও পরিবারের স্বপ্নপূরনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন। সবার জন্য শুভকামনা। #
পরামর্শ দিয়েছেন
মোঃ হামিদ পারভেজ
৩৪ তম বিসিএস (নন ক্যাডার)
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)
দৌলতখান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ভোলা
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
আরএএ/এডিবি