ঢাকা: তিনদিন ধরে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে সিলেট অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বেড়ে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার (১৬ জুন) পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানির উচ্চতা বাড়ছে। অপরদিকে গঙ্গা নদীর পানির উচ্চতা স্থিতিশীল আছে, যা আগামী সোমবার (১৯ জুন) পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
এ ছাড়া উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
এই সময়ে এসব অঞ্চলের নদ-নদীর (সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই-কংশ, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা) পানির উচ্চতা বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা অতিক্রম করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
এ দিকে শনিবার পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের তিস্তা ও ধরলা অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময়ে এসব নদীর পানি সমতল সময়বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ হতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
শনিবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। খুলনা বিভাগসহ রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নিকলীতে ১১৫ মিলিমিটার, সিলেটে রেকর্ড করা হয়েছে ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
আগামী দুদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
আরেক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
ইইউডি/আরএইচ