বরগুনা: ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় আমতলী উপজেলায় ১১১টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তত রাখা হয়েছে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ও মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে উপজেলা দুর্যোগ প্রস্ততি কমিটির জরুরি সভায় নদী তীরবর্তী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সাইক্লোন সেল্টারে নিয়ে আসার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব প্রস্ততি সম্পন্ন করে ২ হাজার ৮৮০ জন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠ পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় আমতলী ও তালতলী উপজেলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে গুমট আবহাওয়া বিরাজ করছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, মৃদু বাতাস বইছে। শহরে মানুষের তেমন একটা আনাগোনা নেই।
হামুন মোকাবিলায় আমতলী তালতলীসহ উপকূলীয় এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আমতলী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় গতকাল সোমবার বিকেলে ও আজ সকাল ১১টায় দুই দফা প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। সভায় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন।
হামুন মোকাবিলায় আমতলীর বিভিন্ন এলাকায় এনএসএস ও দাতা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং দুর্যোগের বার্তা প্রচার করছে বলে জানিয়েছেন নজরুর স্মৃতি সংসদ (এনএনএসএস) -এর নির্বাহী পরিচালক শাহাবুদ্দিন পান্না।
আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেলী পারভীন মালা বলেন, নদী তীরবর্তী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য আমি নিজে এলাকায় কাজ করছি। তবে বালিয়াতলী, পশুর বুনিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিতে থাকায় মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
আমতলী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মেতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, আমতলী সদর ইউনিয়নের লোছাসহ কিছু এলাকা পায়রা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় সেখানকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি ২৩৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগের বার্তা প্রচারসহ নদী তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা সরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে।
আমতলী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান বলেন, পৌরসভার পাশ দিয়ে প্রমত্তা পায়রা নদী প্রবাহিত। এই নদী তীরবর্তী ১, ৪, ৫, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড অবস্থিত হওয়ায় এখানকার প্রায় ৭ হাজার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এ সব মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে এজন্য আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার, খিচুড়ি এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত আনোয়ার তুম্পা বলেন, হামুন মোকাবিলায় মঙ্গলবার সকালে জরুরি সভা করে সব ধরনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। উপজেলার ৫৫টি সাইক্লোন সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১ হাজার ১৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার কাজ করছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে।
আমতলী ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, জরুরি সভা করে হামুন মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। এজন্য ১১১টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তত করে সেখানে নদী তীরবর্তী সব মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নিয়ে আসার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিপিপি এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের ২ হাজার ৮৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠ পর্যায়ে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং অন্যান্য সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে।
এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মুহা. রফিকুল ইসলাম ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, জেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রায় ৩ লাখ মানুষ এতে আশ্রয় নিতে পারবেন। ৪৩০ মেট্রিক টন চাল এবং সাড়ে ৬ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। খোলা হয়েছে সাতটি কন্ট্রোল রুম।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
এসআরএস