পাথরঘাটা (বরগুনা): ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এই দিনে উপকূলে বয়ে গিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর। সিডরে অনেক প্রাণহানি হয়েছিল তখন।
সিডরের রাতের লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ ফুলবরু বেগম। ফুলবরু পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের মোস্তফা হাওলাদার স্ত্রী।
সিডরের রাতের ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। তিনি বলেন, সিডরের রাতে যখন প্রচণ্ড ঝড় শুরু হচ্ছিল। তখন প্রতিবেশীরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করে। আমার মেয়ে জাকিয়া তখন গর্ভবতী। ওইদিন রাতেই তার ভেলিভারি হওয়ার সময়। এমন অবস্থায় ঘর থেকে নামাও ঝুঁকি। তারপরও জীবন বাঁচাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পানির স্রোতে জাকিয়া হাত থেকে ছুটে যায়। এ সময় রাস্তায় একটি গাছ ভেঙে পড়ে। গাছের নিচেই আমি চাপা পরি। তখন মনে হয়েছিল হয়ত আমি আর বাঁচবো না। অল্পের জন্য আমি রক্ষা পেয়েছি। তবে আমার স্বামী, মেয়ে জামাই রক্ষা পায়।
তিনি আরও বলেন, আমার হাত থেকে জাকিয়া ছুটে যাওয়ায় তখন খোঁজাখুঁজি করার সুযোগ হয়নি। আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পর স্বামী ও মেয়ে জামাই দুই ঘণ্টা পর খুঁজে পেয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসে। আল্লাহ সহায় রাত ১১টার দিকে আশ্রয় কেন্দ্রে আমার মেয়ের ডেলিভারি হয়। একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম হয়। আশ্রয় কেন্দ্রে বাচ্চা প্রসব করায় নাম হয় সিডর বেবি। পরদিন বাড়িতে এসে দেখি ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সিডরে।
সিডরে তার অনেক আত্মীয় স্বজন মারা গেছেন এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাল ফ্যাল করে কেঁদে দিলেন। বলেন, নিজের ঘর বাড়ি ঠিক করমু না প্রতিবেশী, স্বজনদের মরদেহ দেখতে যামু।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, সিডরের ক্ষত আজও আমরা ভুলতে পারিনি। মরদেহের সারি এখনও চোখে ভাসছে।
তিনি আরও বলেন, সিডরের রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে মারিয়া নামে এক কন্যা সন্তান প্রসব হয়। তার নাম সিডর বেবী হিসেবে পরিচিত। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
এসএম