রাজশাহী: বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী পৌষ আসতে এখনও দু’দিন বাকি। সাধারণত হেমন্তের হিমবাতাস শীতের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
রাজশাহীর উপর দিয়ে এরই মধ্যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
ফলে হিমালয় ছুঁয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলেছে উত্তরের জনপদের মানুষগুলোকে। বিশেষে করে পথের ছিন্নমূল মানুষগুলোর সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করেই শীত হামলে পড়ায় নিদারুণ কষ্টে দিন-রাত কাটছে তাদের। দুপুরে সূর্যের সোনালি রোদও বেশিক্ষণ উষ্ণতা ছড়াতে পারেনি শীতার্ত মানুগুলোর শরীরে।
সকালে পথের ধারে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে ছিন্নমূল মানুষদের। নিম্ন আয়ের মানুষেরা শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মহানগরীর বিভিন্ন ফুটপাতে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকানগুলোতে।
চলতি সপ্তাহে সরকারি, সেবরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে জানিয়েছেন শীতার্তরা।
মহানগীর ভদ্রা রেলওয়ে বস্তির জয়তুনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, গত শুক্রবার একদল যুবক কম্বল নিয়ে এসেছিল। কিন্তু লোক বেশি থাকায় অনেকেই তা পায়নি। যাওয়ার সময় জানিয়ে গেছে তারা অবার আসবে। এর পর কেউ আসেনি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ ঠাণ্ডায় আজ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের অনেকেই ডাইরিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানান তিনি।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাজিব খান বাংলানিউজকে জানান, রাজশাহীতে গত সপ্তাহ থেকেই তাপমাত্রা কমছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ছিল ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার (১১ ডিসেম্বর) ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সোমবার (১২ ডিসেম্বর) ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তপমাত্রা বলে জানান রাজিব খান।
এক প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের এই জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক বলেন, তাপমাত্রা কমে আসায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমছে। তাপমাত্রা সাধারণত ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে মৃদু, ৮ ডিগ্রির নিচে নামলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
আবহাওয়ার পূর্ভাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, চলতি ডিসেম্বরের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর রাজশাহীর উপর দিয়ে শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ার সময় এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পরে বলেও জানান রাজিব খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
এসএস/এমজেএফ/এমজেএফ