আবহাওয়াবিদরা প্রাক-বর্ষায় বেশি বৃষ্টিপাতের পরিমাণকে অস্বাভাবিক বলছেন। আর বৃষ্টিপাতের ভৌগোলিক যে পরিবর্তন হয়েছে তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চল, সিলেট ও হাওরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উন্নয়ন কাজের জন্য বৃষ্টিতে ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ভীত-সন্ত্রস্ত্র করে তুলেছে মানুষের জীবন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে সারা দেশে ৩৬ দশমিক ৭ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। সারাদেশে গড়ে ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও এই মাসে হয়েছে মোট ১৭৩ দশমিক ৭ মিলিমিটার, বৃষ্টিপাত হয়েছে মাসের ২৮ দিনই।
এপ্রিলে ঢাকায় ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, সিলেটে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ১০৯ দশমিক ৪ শতাংশ, রংপুরে ৫৭ শতাংশ, খুলনায় ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বরিশালে স্বাভাবিকের তুলনায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুয়ায়ী, মে মাসে সারাদেশে গড়ে ১৭ দিনে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তবে এ মাসে ১৫-২০ দিনে ২৫০-৩১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আর এ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬ শতাংশ বেশি।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, এপ্রিলে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মে মাসে এখন পর্যন্ত ১৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে মে মাসে হয়তোবা বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এই সময়ে (মার্চ-মে) পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। এবার মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমা লঘুচাপ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় ও স্থায়ীভাবে বিরাজ করছে।
প্রাক-বর্ষায় দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে বাতাস আসে। পশ্চিমা বায়ু প্রবাহের সঙ্গে পূবালী বায়ুর সংমিশ্রণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী (৪৪-৮৮ মিলি) থেকে অতিভারী (৮৮ মিলি এর বেশি) বৃষ্টিপাত হয়েছে।
৩০ বছরের বৃষ্টিপাতের গড় থেকে স্বাভাবিক ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে আবহাওয়া অফিস। তবে এবছর দুই মাসে ৩০ বছরের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ মল্লিক।
প্রাক-বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভৌগোলিক দিক পরিবর্তনের কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, সাধারণত এই সময়ে উত্তরাঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হলেও গত দুই বছর ধরে তার ব্যত্যয় ঘটছে। গত বছরের মতো এ বছরও মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তবে এটি সত্যিই ব্যতিক্রম কি-না, তা বুঝতে শত বছরের বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদ মল্লিক।
বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু বা বর্ষাকাল জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় জানিয়ে আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, বর্ষাকালে পশ্চিম-দক্ষিণ দিক থেকে টানা বাতাস আসবে। এই বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
জুন মাসে স্বাভাবিক ৪৮৩ মি.মি. বৃষ্টি হয়ে থাকলেও ৪৩৫-৫৩০ মি.লি. বৃষ্টিপাত এবং জুলাইয়ে স্বাভাবিক ৫১৯ দিনের স্থলে ৪৬৫-৫৭০ মি.লি. বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর এটাকে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বলছে।
আর জুলাইয়ের প্রথমার্ধে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। জুন মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি মৌসুমি নিম্নচাপ ও জুলাইয়ে ২টি মৌসুমি লঘুচাপের ১টি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস