ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার শেষরাত (২০ মে) থেকে বুধবার (২০ মে) বিকেল/সন্ধ্যা নাগাদ এটি উপকূল অতিক্রম করবে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতি কমে গিয়ে আম্পান অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে গত ১৪ মে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে রূপ নিয়ে ১৮ মে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়। সুপার সাইক্লোনের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ২২০ কিলোমিটারের বেশি হয়। আম্পানের কেন্দ্রে যা ২৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যায়। তবে সেটা শক্তি হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ছাড়িয়ে যেতে পারে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমটার। যেটা হয়েছিল ঠিক ১২ বছর আগে সিডরের সময়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঐতিহাসিক ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় দেখা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডর আঘাত হানার সময় কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ২২৩ কিলোমিটার। অর্থাৎ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই আঘাত হেনেছিল। যে শঙ্কা করা হচ্ছে আম্পানের বেলায়ও।
অন্যদিকে, সিডর যেসব এলাকায় তার প্রয়ঙ্কারী রূপ নিয়ে আছড়ে পড়েছিল, আম্পানের ক্ষেত্রেও একই এলাকাগুলোর কথা সামনে চলে এসেছে।
স্মরণকালের ভয়াবহ সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল- বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন গ্রাম।
আম্পানের ক্ষেত্রে আবহাওয়া অফিস বলছে- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের কথা।
আবহাওয়াবিদ মুহম্মদ আরিফ হোসেন জানিয়েছেন, এসব এলাকা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।
সিডর পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে আঘাত হানেনি। তবে আম্পানের সে শঙ্কা রয়েছে। এদিক থেকে পশ্চিমবঙ্গে শক্তি হারিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী আনন্দ কুমার দাশ জানিয়েছেন, এটি পশ্চিমবঙ্গে দিঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মাঝামাঝি কোনো স্থান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যা নাগাদ। এ সময় সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ১৭০ থেকে ২৩০ কিমি পর্যন্ত। এরপর বৃহস্পতিবার শক্তি আরও হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে।
সিডরের পর বাংলাদেশে আর কোনো ঝড়ে এত বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সরকারি হিসেবে সে সময় ৯০৮ জন মারা গিয়েছিলেন। নিখোঁজ হয়েছেন ৭৬ জন।
এরপর আইলা এসেছিল ২০০৯ সালের মে মাসে। সেটা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ছিল। কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। আর ২০১৯ সালের এপ্রিলের ফণী অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে এলেও উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গেই শক্তি হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। তাই তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। একই বছরের নভেম্বরে বুলবুল এসেছিল। সেটারও তেমন কোনো প্রভাবে পড়েনি দেশে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২০
ইইউডি/টিএ