রোববারও (১২ জুলাই) থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো ভারী কখনো মাঝারি আবার কখনো ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টিতে নগরজীবনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ছন্দপতন ঘটছে।
আষাঢ়ের বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাজশাহীর পদ্মা নদীতেও বাড়ছে পানি। রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা হচ্ছে- ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর রোববার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৫ দশমিক ২৬ মিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার মাত্র ৩ দশমিক ২৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ক্রমাগত পানি বাড়ায় এবার নদীর তীরে ভাঙনেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তীরে আছড়ে পড়ছে উত্তাল স্রোত। রাজশাহী পবা, চারঘাট-বাঘা ও গোদাগাড়ীতে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে পানি বাড়লে ভাঙনও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষ।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, এবার শুরু থেকে মৌসুমি বায়ু সক্রিয়া থাকায় স্বরূপে ফিরেছে বর্ষা। মৌসুমের শুরু থেকেই স্বাভাবিক বর্ষণ হচ্ছে। মাঝখানে কয়েক দিন বৃষ্টি হয়নি। তবে সামান্য বিরতি দিয়ে আবারও বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আবহাওয়া কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন- গত জুলাই থেকে রাজশাহীতে বর্ষণ বেড়েছে। এর মধ্যে গত ৬ জুলাই রাজশাহীতে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এরপর ৭ জুলাই ২ মিলিমিটার, ৮ জুলাই ৪৮ মিলিমিটার, ৯ জুলাই ৫ মিলিমিটার, ১০ জুলাই ২৫ মিলিমিটার, ১১ জুলাই ৫৬ মিলিমিটার এবং আজ ১২ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছিল দুপুর দেড়টায়। ফলে এই সাতদিনের মধ্যে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল ১১ জুলাই ৫৬ মিলিমিটার।
এক প্রশ্নের জবাবে আবদুস সালাম বলেন, আরও দু’দিন এমন বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। রোববার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা সকাল ৬টায় এবং সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ৯৭ শতাংশ। যোগ করেন রাজশাহীর এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
এদিকে, বৃষ্টিতে ফুঁসে উঠছে পদ্মা। পানি উন্নয়নের বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা মাপা হয়েছে ১৫ দশমিক ২৬ মিটার। এর আগের দিন শনিবার ছিল ১৫ দশমিক ৬ মিটার। এছাড়া গত শুক্রবার (১০ জুলাই) পানির উচ্চতা ছিল ১৪ দশমিক ৯৩ মিটার। ফলে আবারও ১০ জুলাই থেকে পানি বাড়ছে। বর্তমানে পদ্মার বিপৎসীমার (১৮.৫০) মাত্র ৩ দশমিক ২৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা।
পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, পানি বাড়া নিয়ে এখনই উৎকণ্ঠার কিছু নেই। গেল ১৭ বছরে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে মাত্র দু’বার। এর মধ্যে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। কেবল ২০০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মার সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৮৫ মিটার। এরপর ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই বছর পদ্মার উচ্চতা দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। এরপর আর এই রেকর্ড ভাঙেনি বলেও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
এসএস/এএ