অস্বাভাবিকহারে পানি বাড়ায় দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে কুড়িগ্রাম জেলার নয়টি উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রামের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সোমবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার, দুধকুমরের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম অঞ্চলে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এবং নদ-নদীর পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজারহাট কৃষি গবেষণা আবহাওয়া কেন্দ্রের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র রায়।
ধরলা ও দুধকুমার অববাহিকার কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষজন। দ্বিতীয় দফা বন্যায় মানুষের জীবনযাপন এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছেন। তারা অনেক কষ্টে পাকা রাস্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচল সংকট দেখা দেওয়ায় কলাগাছের ভেলা বা ডিঙি নৌকায় চলাচল করছে। দুই দফা বন্যায় অনেক পরিবার ফসল ও গবাদিপশুসহ সহায় সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা অববাহিকার মধ্যকুমোরপুরের অভ্যন্তরীণ পাকা সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। ডুবে গেছে দোকান-পাট। দুর্ভোগকে সঙ্গী করে হাঁটু বা কোমর পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন নারী-পুরুষ।
বন্যাকবলিত কাইম বড়াইবাড়ী এলাকার হোসেন আলী বাড়িতে পানি ওঠায় নৌকায় করে এসেছেন কিছু জরুরি নিত্যপণ্য কিনতে। তিনি জানালেন, বাড়িতে পানি, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে আছে। তাই অগত্যো কিছু সদাইপাতি কিনতে এসেছেন।
এদিকে ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সকালে বাঁধটি ভেঙে প্রবল পানির তোড়ে পাঁচটি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে আসবাবপত্রদি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঘর-বাড়িতে পানি উঠতে শুরু করায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের হলোখানার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোক্তার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, প্রবল স্রোতের কারণে মানুষজনকে সরিয়ে নিতে নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না। তীব্র স্রোতের মুখে বাঁধটি ভেঙে হলোখানা, ভাঙামোড়, কাশিপুর, বড়ভিটা ও নেওয়াশি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে ফুলবাড়ী ও কুড়িগ্রাম জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সারডোব এলাকার পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে দুটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বাঁধটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। তবে বিকল্প বাঁধটি রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছিলো। কিন্তু পানির প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত বাঁধটি ভেঙে যায়।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। ৪০০ মেট্টিক টন চাল, ১১ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদশে সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
এফইএস/এএটি