ঢাকা: স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড বাজারে এনেছে ন্যাচারাল হারবাল ব্র্যান্ড ‘মায়া’। এই ব্র্যান্ডের দুটি পণ্য বাজারে আসছে; যার একটি আফ্রিকার মেরুলা ফল থেকে তৈরি ‘মায়া ট্রু হার্বস মেরুলা অয়েল’।
পণ্য দুটি নিয়ে সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় ‘মায়া’ ব্র্যান্ডের হারবাল বিভাগের প্রধান ডক্টর যোশির সঙ্গে। মায়ার দর্শন, কাজ, ভোক্তাদের সেরা ভেষজ পণ্য দেওয়ার জন্য যে প্রচেষ্টা, কী উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে, পণ্যগুলো তৈরি করতে কতটা গভীর গবেষণা করা হচ্ছে, সেসব বিষয় নিয়ে এ সময় কথা বলেন তিনি।
ড. যোশি বলেন, এখন মানুষ ভেষজ পণ্য ও প্রাকৃতিক সমাধানে বেশি আগ্রহী। প্রাকৃতিক সমাধানের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কসমেটিকস স্টোর, সুপারস্টোর থেকে ই-কমার্স; সবজায়গাতেই এই পণ্যগুলোর চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার ভিড়ে যেসব ব্র্যান্ড রয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কমই খাঁটি ভেষজ পণ্য খুঁজে পাওয়া যাবে, যা সত্যিই কাজ করতে পারে। কিছু আমদানিকৃত জিনিস আছে, তবে সেগুলোর দাম অনেক। এই সব কিছু দেখে এবং ভেবেই আমরা অনুপ্রাণিত হই এবং সাশ্রয়ী মূল্যে খাঁটি প্রাকৃতিক পণ্য আনতে কাজ করছি। আর আমাদের পণ্যগুলোও পাওয়া যাবে হাতের নাগালের মধ্যেই।
তিনি বলেন, ‘মায়া’ ব্র্যান্ডের অধীনে প্রাথমিকভাবে দু’টি নতুন পণ্য বাজারে আসছে। এর একটি আফ্রিকার মেরুলা ফল থেকে তৈরি ‘মায়া ট্রু হার্বস মেরুলা অয়েল’। এই তেলটি মূলত আমাদের ত্বক আর্দ্র রাখাবে, বলিরেখা দূর করবে, তারুণ্য ফিরিয়ে আনবে এবং চুলকে কোমল ও সিল্কি করবে। অন্য পণ্যটি ‘মায়া অল ন্যাচারাল হেয়ার অ্যান্ড স্ক্যাল্প অয়েল’। সঠিক কার্যকারিতার জন্য এটিতে আছে রুট অ্যাপ্লিকেটর; যা তেলকে চুলের গোড়ায় সরাসরি পৌঁছে দেয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
‘মায়া ট্রু হার্বস মেরুলা অয়েল’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে ড. যোশি বলেন, মেরুলা আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলের গাছ। এই গাছের ফল থেকেই আসে মেরুলা অয়েল। ত্বক, চুলের যত্ন আর অন্যান্য ঔষধি গুণাগুণের কারণে এই তেল ‘মিরাকেল অয়েল’ হিসেবে পরিচিত। এর ব্যবহারও অনেক পুরনো। ১০০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেও মেরুলা অয়েল ব্যবহারের ইতিহাস মেলে। হাজার বছর ধরে আফ্রিকার জুলু ও সোঙ্গা নারীরা ত্বকের যত্নে এই তেল ব্যবহার করে আসছেন। সেখানে তাপমাত্রা প্রচণ্ড এবং তারা অন্যকোনো প্রসাধনী ব্যবহার করেন না। শুধু মেরুলা অয়েল ব্যবহার করেই তাদের অসাধারণ ত্বকের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। তা ছাড়া আফ্রিকার পুরাণেও এই গাছের আধ্যাত্মিক ভূমিকার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা বাংলাদেশে এটি আনছি। যেহেতু মেরুলা আফ্রিকার ফল, তাই আমরা ভোক্তাদের সম্পূর্ণ খাঁটি পণ্যটি দিতে সেখান থেকে এটি আমদানি করবো। আর এটির মূল্যও খুব বেশি নয়, ৮৫০ টাকা, যা অন্য যে কোনো প্রসাধনীর তুলনাতেই কম। আমি মনে করি বাংলাদেশের জন্য প্রাকৃতিক সুস্থতায় মেরুলা অয়েল হবে একটি অনন্য নাম।
তিনি বলেন, এই তেল ব্যবহার করা খুব জটিল কোনো বিষয় নয়। তারুণ্যদীপ্ত, উজ্জ্বল ও সুস্থ ত্বকের জন্য প্রতিদিন কয়েক ফোঁটা মেরুলা অয়েল মুখ, ঘাড়, হাত ও যেখানে বাড়তি ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন সেখানে ব্যবহার করা যাবে। ডার্ক সার্কেল ও বলিরেখা দূর করতে চোখের নিচে ১/২ ফোঁটা মেরুলা অয়েল প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাবেন। চুলের ক্ষেত্রে হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা মেরুলা অয়েল ঘষে ভেজা পরিষ্কার চুলেও ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল আরও সুন্দর, ঘন-কালো, কোমল ও সিল্কি হবে।
‘মায়া অল ন্যাচারাল হেয়ার অ্যান্ড স্ক্যাল্প অয়েল’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে ড. যোশি বলেন, চুলের গোড়ায় চুলের জন্য সঠিক পুষ্টি পৌঁছে দিতেই মায়া অল ন্যাচারাল স্ক্যাল্প অ্যান্ড হেয়ার অয়েল। ৫০০০ বছরের প্রাচীন শিরপাক বিধিতে তৈরি এই তেলে আছে ১৭টি ভেষজ উপাদান। আর রুট অ্যাপ্লিকেটর থাকায় এই তেল সহজেই পৌঁছে যায় চুলের গোড়ায়। তাই স্ক্যাল্প থাকে স্বাস্থ্যকর এবং চুলের গোড়া হয় শক্ত। আর এটি এতটাই স্বাভাবিক যে, আমরা কোনো কৃত্রিম সুগন্ধিও ব্যবহার করিনি।
তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে চুলের যত্নে ব্যবহৃত হচ্ছে আমলকি। এতে আছে ফাইটো-নিউট্রিয়েন্ট, ভিটামিন ও খনিজ যা, চুলের বৃদ্ধিতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়া ভৃঙ্গরাজ চুলের পরম বন্ধু। যুগ যুগ ধরে এই ভেষজ উপাদানটি চুলের যত্নে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভৃঙ্গরাজ স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন করে, চুল পড়া রোধ করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আবার স্ক্যাল্প ও চুলের জন্য কারি পাতা খুবই উপকারী। কারি পাতায় প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যা স্ক্যাল্পকে ময়েশ্চারাইজ করে, চুলের মৃত কোষ দূর করে ও চুলের গোড়া মজবুত করে। এছাড়াও কারি পাতায় আছে প্রোটিন ও বেটা ক্যারোটিন। তাই চুলে পৌঁছায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি। কালোজিরার তেল চুল পড়া কমায়, স্কাল্প ভালো রাখে ও মাথার ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করে। এই উপাদানগুলোসহ মোট ১৭টি ভেষজ উপাদানে তৈরি আমাদের মায়া অল ন্যাচারাল স্ক্যাল্প অ্যান্ড হেয়ার অয়েল। মায়া অল ন্যাচারাল স্ক্যাল্প অ্যান্ড হেয়ার অয়েল এবং মায়া ট্রু হার্বস মেরুলা অয়েল; উভয় পণ্যই গ্রাহকদের কাছ থেকে অত্যন্ত ইতিবাচক পর্যালোচনা পাচ্ছে।
পণ্যের মান এবং দাম নিয়ে ড. যোশি বলেন, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বড় দলের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এই ভেষজ পোর্টফোলিওর জন্য কাজ করছে। আমরা পণ্য সরবরাহের কার্যকারিতার ওপর আরও ফোকাস করছি যাতে ভোক্তারা প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির মঙ্গল অনুভব করতে পারে এবং ভেষজগুলি প্রকৃত সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। আমরা এই বাজারের জন্য অত্যন্ত কার্যকর কিন্তু অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য আনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি এবং মায়াকে প্রাকৃতিক সমাধানের একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছি। মায়া থেকে আমরা উতোমধ্যে দুটি পণ্য চালু করেছি। ভোক্তাদের বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে আরও পণ্য পাইপলাইনে রয়েছে। আমরা এটি বাজারে চালু করার আগে ব্যাপক গবেষণা করছি। আর দামটাও অন্য যে কোনো ব্র্যান্ডের তুলনায় হাতের নাগালে।
ছোটবেলা থেকেই গাছ ভালোবাসতেন ড. যোশি। সেই ভালোবাসাতেই অনুপ্রাণিত হয়ে উচ্চশিক্ষাসহ ক্যারিয়ার গড়েছেন আয়ুর্বেদ নিয়ে। সেই ভালোবাসা থেকে তিনি বলেন, আমরা আসলে ব্যবসা নয়, মানুষের জন্য মায়া নিয়ে এসেছি। মায়া মানে স্নেহ করা, কেয়ার করা, যত্ন করা। আমরা মানুষের প্রতি প্রকৃতির মায়াটাকেই আমাদের পণ্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চাই। আর আমাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গিই এই ব্র্যান্ডটির নামের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
এইচএমএস/এমজেএফ