ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

চট্টগ্রামে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের বিশেষ সেশন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
চট্টগ্রামে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের বিশেষ সেশন

ঢাকা: সম্প্রতি চট্টগ্রামের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য এক বিশেষ সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সেশনে দেশের শীর্ষস্থানীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা উপস্থিত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, কনটেন্ট ক্রিয়েশন এবং ব্র্যান্ডিং বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।

 

চট্টগ্রামের ক্রিয়েটরস হাবে আয়োজিত এই ক্লোজড-ডোর ইভেন্টটি ছিল একটি  ব্যতিক্রমী গেট-টুগেদার, যেখানে চট্টগ্রামের ৫০ জন প্রতিষ্ঠিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর অংশ নিয়েছেন।  

এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং বৃদ্ধি, ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে ধারণা শেয়ার করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সফল হওয়ার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা।

Legit Banda এবং Umbrella এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা থেকে তিনজন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর: সিহাব হোসেন নিয়ন, আমিন হান্নান, এবং মুকিত জাকারিয়া। তাদের প্রত্যেকের সেশনই ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা উপস্থিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

সেশন ১: সিহাব হোসেন নিয়ন – ‘ইন্টারন্যাশনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার রেসিপি’

প্রথম সেশনটি পরিচালনা করেন সিহাব হোসেন নিয়ন, যিনি একজন ইন্টারন্যাশনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি তার সেশনে কিভাবে একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের পরিচিতি অর্জন করতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি জানিয়ে দেন, কনটেন্ট ক্রিয়েশন প্রক্রিয়া কেবলমাত্র স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; বরং একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেন, যদি তারা সঠিক কৌশল অবলম্বন করেন। নিয়ন  তাঁর সফলতার গল্প শেয়ার করেন, যেটি উপস্থিতদের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল।

তিনি তাদের জানান, কনটেন্ট সৃষ্টির জন্য কীভাবে সময়মত ট্রেন্ড ফলো করা যায়, ভিডিও কোয়ালিটি কিভাবে বাড়ানো যায় এবং আলাদা স্টাইল প্রয়োগ করে কনটেন্টকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।

এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়া অনেকখানি গুরুত্ব বহন করে। কারণ এর মধ্য দিয়ে Globally দর্শক বাড়ে। একটি আন্তর্জাতিক অডিয়েন্স আপনাকে নতুন নতুন আয়ের পথ খুলে দিতে পারে, ইন্টারন্যাশনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র দেশের ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পারবেন না বরং বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে কোলাবোরেশন করে অনেক বেশি ইনকাম করতে পারবেন।

এছাড়াও একাধিক প্ল্যাটফর্মে গ্লোবাল রেভিনিউ জেনারেটিং সুযোগ পাওয়া সম্ভব হবে। নিজের একটি শক্তিশালী ইমেজ ক্রিয়েট করতে অবশ্যই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের দৃষ্টিকোণটা বুঝতে হবে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং করার ইচ্ছেটাও থাকতে হবে। এগুলো আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্রিয়েটরদের আরও শক্তিশালী করবে।

নিয়ন  আরও বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনার কনটেন্ট ছড়িয়ে দিতে পারবেন। তাই নিজের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য এবং ক্রিয়েটিভিটিকে প্রাধান্য দিতে কনটেন্টে নতুনত্ব আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ’

এই সেশনটি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য একটি মূল্যবান দিক-নির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে, যেহেতু বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে সাড়া জাগানো সম্ভব।

সেশন ২: আমিন হান্নান – ‘কনটেন্ট ক্রিয়েশন থেকে রেভিনিউ জেনারেশন’

দ্বিতীয় সেশনটি ছিল আমিন হান্নানের, যিনি সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট ক্রিয়েশন থেকে কীভাবে আয়ের সুযোগ তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

আমিন হান্নান জানিয়ে দেন, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য আয়ের অন্যতম একটি উৎস হলো বিজ্ঞাপন।  

সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্রিয়েটররা তাদের কনটেন্টে বিজ্ঞাপন যুক্ত করে রেভিনিউ জেনারেট করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি YouTube এর কথা উল্লেখ করেছেন। আমাদের দেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ইউটিউবের মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করার পর, Google AdSense থেকে আয় করতে পারেন, যেখানে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট হয়।

এছাড়াও ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে Sponsored Posts বা Facebook Ads এর মাধ্যমে আয় করা যায়। এর মাধ্যমে ব্র্যান্ড বা কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারণা চালায়, এবং ক্রিয়েটরদের এই বিজ্ঞাপন থেকে আয় হয়।

‘প্রতিটি কনটেন্টের মধ্যেই একটি সম্ভাবনা থাকে। যদি আপনি নিয়মিতভাবে সঠিক কনটেন্ট তৈরি করেন, তবে তা আপনাকে শুধুমাত্র দর্শক নয়, বরং ব্র্যান্ডের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করবে, যা থেকে আয় করা সম্ভব’ – এই বিষয়গুলো নিয়েই মূলত আলোচনা করেন আমিন হান্নান।  

তিনি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আরও পরামর্শ দেন যে, তাদের কনটেন্টে ক্রিয়েটিভিটি আনতে হবে, কারণ মানুষ যদি তাদের কনটেন্টের সাথে রিলেট করতে হবে তাহলে ব্র্যান্ড এর সাথে  কোলাবোরেশনে যাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যায়।  

সেশন ৩: মুকিত জাকারিয়া – ‘দুই সময়ের কনটেন্ট: পার্থক্য এবং পরিবর্তন’


তৃতীয় সেশনটি পরিচালনা করেন মুকিত জাকারিয়া, যিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা। মুকিত জাকারিয়া তার সেশনে টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মিডিয়ার কনটেন্টের মধ্যে পার্থক্য এবং পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘টেলিভিশনে কনটেন্ট সাধারণত দীর্ঘ পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে তৈরি হয়। একটি প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান তৈরির জন্য অনেক সময় লাগে, সেট নির্মাণের জন্য প্রচুর বাজেট প্রয়োজন হয়, এবং সেটি বড় আকারের টিমের মাধ্যমে নির্মিত হয়। যেমন, নাটক, সিনেমা, টক শো, নিউজ প্রোগ্রাম, স্পোর্টস ইভেন্ট ইত্যাদি। এসব কনটেন্ট সাধারণত বড় স্কেল এবং স্টুডিও সেটআপের মধ্যে তৈরি হয়। ’

অন্যদিকে ডিজিটাল মিডিয়ায় কনটেন্ট অনেক বেশি  দ্রুত তৈরি হয়।

বর্তমানে, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টিকটক, এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা সহজেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরি করে আপলোড করতে পারেন।

এই কনটেন্টগুলো সাধারণত খুব ছোট, স্পষ্ট এবং দ্রুত গ্রহণযোগ্য হয়।

মুকিত জাকারিয়া বলেন, ‘এখনকার সময়ের কনটেন্ট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, আর আমরা ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে সেটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। এই নতুন ডিজিটাল যুগে কনটেন্টে নতুনত্ব আনতেই হবে। ’

প্যানেল ডিসকাশন: ইনফ্লুয়েন্সারদের ভবিষ্যত

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ ছিল প্যানেল ডিসকাশন, যেখানে দেশের শীর্ষ কনটেন্ট ক্রিয়েটররা আলোচনা করেন কীভাবে ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের কাজের মান আরও উন্নত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা কেমন হবে।  

প্যানেল ডিসকাশনে অংশগ্রহণ করেন Opu TheSpider, Choto Diary a.k.a Saif Waheed, Munmuni Chakma Moon, Shipon, Sama Islam, Mehedi Hasan Sakil, এবং Fahim Shahriar সহ আরও অনেকেই।

প্যানেলটি ছিল অত্যন্ত তথ্যবহুল এবং গঠনমূলক, যেখানে আলোচকরা একমত হন যে ইনফ্লুয়েন্সারদের সামনে আরও অনেক নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তারা বলছিলেন, ‘ডিজিটাল যুগে কনটেন্টের মান এবং ক্রিয়েটরের প্রফেশনালিজম ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ’

এছাড়াও তারা আলোচনা করেন, কনটেন্ট ক্রিয়েটররা কিভাবে তাদের কাজের গুণগত মান বাড়াতে পারে, তাদের কনটেন্টকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারে।

এই প্রোগ্রামে ফাহাদ লোকমান, যিনি চট্টগ্রামে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের পথিকৃৎ, হাজারো মাইল দূর থেকে এই আয়োজনকে শুভকামনা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে আয়মান সাদিক এবং মুনজেরিন শহিদ সরাসরি চট্টগ্রাম যেতে পারেননি, তবে তারা সেশন প্ল্যানিং এবং কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।

এছাড়াও টেক বাই আকরাম, ফায়েদ আবরার মজুমদার, রিয়াদ মোরশেদ, সামা ইসলাম, রাইজিং কনটেন্ট ক্রিয়েটর মেহেদী হাসান সাকিল, নভো রশ এর ফাহিম শাহরিয়র প্রমুখরা আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন এবং দারুণ একটা সময় উপভোগ করেছেন।

এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে ধারণা শেয়ার করা এবং একে অপরের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ তৈরি করা।

এই প্রোগ্রামটি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা কনটেন্ট ক্রিয়েশন এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

Legit Banda এবং Umbrella এর আয়োজনে এ সেশনটি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং শিক্ষণীয় ছিল।

বাংলাদেশের কনটেন্ট ক্রিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এই সেশনটি সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতারই অংশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।