ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

দীর্ঘ বিরতি তাইজুলের জন্য যেভাবে ‘শাপেবর’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
দীর্ঘ বিরতি তাইজুলের জন্য যেভাবে ‘শাপেবর’ ছবি : উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম থেকে : ‘মুমিনুল-মাহমুদুল ছয় মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে। এটাই এক ফরম্যাটের ক্রিকেটারদের চ্যালেঞ্জ...’ এমন হাহাকার ছিল হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কণ্ঠেই।

দীর্ঘ সময় ধরে রানে নেই টেস্ট দলে নিয়মিত দুজনের। সংশয় তাদের নিয়ে তাই ছিল, চট্টগ্রাম টেস্টের একাদশে শেষ অবধি জায়গা হয়নি কারও।  

তাদের দুজনের মতো ‘এক ফরম্যাট ক্রিকেটার’ তাইজুল ইসলামও। এই স্পিনারের নিবেদনের কমতি ছিল না কখনোই, পারফরম্যান্সও করেছেন নিয়মিত। তবুও একাদশ থেকে বারবার ছিটকে যেতে হয় ‘কম্বিনেশনের’ কারণে। যখনই সুযোগ পান, নিজেকে মেলে ধরতে মরিয়া থাকেন তিনি।  

চট্টগ্রাম টেস্টেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন চলতি বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর সাত মাসের লম্বা বিরতি। টি-টোয়েন্টি মৌসুমে তাইজুলরা স্বাভাবিকভাবেই থেকেছেন আড়ালে। মাঝে ‘এ’ দলের হয়ে খেলেছেন। ফাঁকে ফাঁকে ৮ বছরের ক্যারিয়ারে ৩৯ টেস্ট খেলে ১৬১ উইকেট নেওয়া তাইজুলকে প্রায়ই দেখা গেছে ‘নিঃসঙ্গ’ অনুশীলনে।  

শেরেবাংলার মূল মাঠে যখন জাঁকজমক আর ছুটে চলার দৌড়। পাশের একাডেমি মাঠে তাইজুল তখন ব্যস্ত থেকেছেন ‘নতুন কিছুর চেষ্টায়’। কখনো তার সঙ্গে থেকেছেন স্পিন বোলিং কোচ সোহেল ইসলাম। কখনো আবার তাইজুল একাই হাত ঘুরাচ্ছেন, দৌড়াচ্ছেন অথবা ঠিক করছেন কবজির মোচড়। বেল্ট পরে পেছন থেকে কেউ তাইজুলকে টেনেছেন, শক্তি খরচ করে বল ছুড়ছেন তিনি; দেখা গেছে এমন দৃশ্যও।  

এসবের ফল কী? তাইজুল প্রস্তুত থেকেছেন সবসময়। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেও যেমন তিনি পেয়েছেন তিন উইকেট। এদের মধ্যে ছিলেন বিরাট কোহলি কিংবা উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া চেতেশ্বর পূজারাও। সংখ্যার চেয়েও তাইজুলের বড় ব্যাপার ছিল ধৈর্য ধরে বল করার মানসিকতা।  

কোহলিকে যে বলটিতে আউট করলেন। শার্প টার্ন করে বল ছুটেছিল স্টাম্পের দিকে। কোহলি লেগ সাইডে খেলতে গেলেও দিশা খুঁজে পাননি। নিখুঁত লেন্থের বল স্কয়ার টার্ন করে বল আঘাত হেনেছে একদম মিডল স্টাম্পে।

তাইজুলের আসল ধৈর্যের পরিচয় মিলেছে চেতেশ্বর পূজারার উইকেটে। দিনজুড়েই দারুণ বোলিং করেছেন। অফস্টাম্পের বাইরে ফেলে বল ঢুকাতে চাচ্ছিলেন বারবার। কিন্তু অল্পের জন্য কয়েকবার মিস করে গেছেন স্টাম্প। তাইজুল ধৈর্য হারাননি।  

অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে হালকা টার্ন করে শেষ বিকেলে ততক্ষণে ২০৩ বল খেলে ফেলা পূজারাকে করেছেন বোল্ড। দিনশেষে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল পূজারার কাছেই। তিনি বলছিলেন, ‘তাইজুল খুব ভালো বল করেছে। এটা এমন পিচ বোলার হয়েও এখানে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। সে লাইন-লেন্থে ধারাবাহিক ছিল। আজকের দিনের অন্যতম কঠিন বোলার ছিল। ’

তাইজুল বোলিংয়ের মতো কথায়ও ধৈর্য ধরতে পারেন। পূজারাকে আউট করার প্রশ্নে জবাব দেন ছোট ছোট বাক্যে, ‘পূজারার আউটে লাইন-লেন্থটা খুব ভালো ছিল আর কী। হয়তো কয়েকটা মিস করেছে। দেখা গেছে ওটা একটু বেশি টার্ন করেছে, টার্নটা খুব সুক্ষ্ম ছিল। ও সোজার জন্য খেলছে, হালকা টার্ন থাকায় স্টাম্প আঘাত করেছে। ’

এই যে ‘হালকা টার্ন’ এর জন্য নিশ্চয়ই ঘাম ঝরাতে হয় তাইজুলকে। একাডেমি মাঠে অথবা অন্য কোথাও। দীর্ঘদিন বাইরে থাকতে হয় ক্রিকেটেরও। এই সময়ে নিজেকে মানসিকভাবে ঠিক রাখা, স্কিল ঝালাই করা নিয়মিত; বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই। সবসময় তো বিরতিকে নেতিবাচক চোখেই দেখা হয়। কখনো কি হয় শাপেবরও?

তাইজুল জবাবে বলছিলেন, ‘আপনি দেখবেন যে সময় একজন ক্রিকেটার ফ্রি থাকে, তখন নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। ম্যাচের মধ্যে কাজ করা কঠিন হয়। আজকে একটা নতুন কাজ করলাম, কালকে ম্যাচে গিয়ে সেটা প্রয়োগ করলাম; এমন হবে না। ফাঁকা সময় থাকলে নাড়াচাড়া করা যায়...’

তাইজুলকে নিয়ে প্রশংসার স্তুতি ছুটেছে অনেকবারই। পারফরম্যান্স দিয়ে আদায় করেছেন তিনি। তবে তাইজুলকে ব্যাখ্যা করতে চট্টগ্রাম টেস্টের আগে ডমিঙ্গোর কথাগুলোই যথার্থ হয়তো।

‘এক ফরম্যাটে খেলা ক্রিকেটারদের জন্য এটা কঠিন। কিন্তু তাইজুলের আচরণ দুর্দান্ত, সবসময় বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চায়। যখন দলে ফিরে আসে, ১১০ শতাংশ দেয় দলকে। ঘরোয়া অথবা ‘এ’ দলের হয়ে অনেক বল করে। সবসময় চায় উন্নতি করতে। সে আমাদের জন্য ট্রাম্প কার্ড। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৯৪৯ ঘণ্টা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২
এমএইচবি 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।