মধ্যাহ্নভোজের বিরতি চলছে, মিডিয়া ব্লকের ছাদে দাঁড়িয়ে তিনি তাকিয়ে ছিলেন মাঠে। হাতে বিয়ারের বোতল।
টেস্ট ক্রিকেটে ক্যারিয়ার খুব একটা সমৃদ্ধ নয় এই লেগ স্পিনারের। ৭ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। যদিও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও তার সঙ্গে দেখা সাদা পোশাকের সূত্র ধরেই। বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে ধারাভাষ্য দিতে এসেছেন তিনি। গলায় হেডফোন, গায়ে সাদা শার্ট পরে ব্র্যাড হগ বলেছেন লাল বলে বাংলাদেশের উন্নতির পথ। তার কথা শুনেছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মাহমুদুল হাসান বাপ্পি।
বাংলানিউজ : এখানে টেস্টের সূত্র ধরে এসেছেন। এ নিয়েই কথা বলতে চাই। বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে দুই যুগের বেশি কাটিয়ে দিলো। এখন কেমন দেখছেন তাদের?
হগ : বাংলাদেশের কিছু তরুণ পেস বোলার এসেছে। টেস্ট ক্রিকেটে তাদের উন্নতির ছাপ বোধ হয় এটাতেই সবচেয়ে বেশি পরিষ্কার। এ বছরই তো নিউজিল্যান্ডকেও তাদের মাটিতে হারালো। তাসকিন, খালেদ, এবাদত; তাদের খুব উপভোগ করছি দেখে। রেজাউর রহমান রাজা, ওয়ানডেতে হাসান মাহমুদ খেললো। আরেকটা ছেলের নাম ঠিকঠাক মনে করতে পারছি না, মুশফিক বা এমন...
বাংলানিউজ : পেসার মুশফিক হাসানের কথা বলছেন?
হগ : হ্যাঁ, মুশফিক হাসান। পেসার।
বাংলানিউজ : তাকে কোথায় দেখলেন? এখনও তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি...
হগ : নেটে দেখেছি দুয়েকবার। পরে হাইলাইটসও দেখলাম। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে খেলেছে। ভালো গতি আছে। সুইং করাতে পারে। শুনেছি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও নাকি দারুণ করছে। লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হবে মনে হচ্ছে...
বাংলানিউজ : আচ্ছা! টেস্টে ফিরে আসি...বাংলাদেশকে কেমন দেখছেন?
হগ : যেটা বলেছি, পেসাররা তো বেশ ভালো এখন। স্পিনের গভীরতা সবসময়ই ছিল বাংলাদেশের। খুব ভালো হয় যদি তারা একটা লেগ স্পিনার খুঁজে পায়। ব্যাটারদের কথা যদি বলি, আজকেই জাকিরকে দেখুন। খুব মুগ্ধ হচ্ছি ওর ব্যাটিংয়ে। এমন তরুণরা নিয়মিতই উঠে আসছে তাদের। আফিফকে যেমন দেখলাম সাদা বলে, তার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা। দূর থেকে দেখে বাংলাদেশকে দেখে ভালোই মনে হচ্ছে কিন্তু...
বাংলানিউজ : আপনি নিজে তো রিস্ট স্পিনার ছিলেন। বাংলাদেশ এমন বোলার পায় না কেন?
হগ : দেখুন, এটা তো আসলে প্রকৃতি প্রদত্তভাবেই আসতে হবে। এমন বোলারের সংখ্যা সব জায়গাতেই কম। কিন্তু আপনি যদি পেয়ে যান, যত্ম নিতে হবে। তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে হবে। জানি না আসলে বাংলাদেশে কেমন এসব ব্যাপারে!
বাংলানিউজ : জাকিরের কথা যদি আরেকটু বলতেন। প্রথম ম্যাচেই তার ইনিংসটা সামনে থেকে দেখলেন...
হগ : আগেও বলেছি, তার ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এক কথায় বললে- ক্ষুধার্ত। দেখে মনে হচ্ছে রানের জন্য সত্যিকারের ক্ষুধা তার ভেতর আছে। নতুন বোলার আসার পর নিজেকে যেভাবে শান্ত রেখেছে, এটা আমার পছন্দ হয়েছে। মার্ক নিচ্ছে, গার্ড নিচ্ছে, মাথাকে ঠিক করে নিচ্ছে এই বোলারকে সে কীভাবে খেলবে। আমার মনে হচ্ছে সে ভবিষ্যতে অনেক বড় ক্রিকেটার হতে পারবে। কিন্তু তার নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে হবে, সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোও জরুরি।
বাংলানিউজ : মাঝেমধ্যে জয় তো এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে উন্নতির ছাপ রাখতে পারেনি টেস্টে। আপনার এত ক্রিকেট খেলার ও দেখার অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলতেন- টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য সবচেয়ে জরুরি কী?
হগ : কোচরা চেষ্টা করছে কিন্তু বাংলাদেশের। তারা ভালো কাজ করছে। হ্যাঁ, তাদের অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের বড় চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করার। সবকিছুই হচ্ছে মানসিকভাবে তৈরি থাকা। যদি আপনার মধ্যে প্রতিভা থাকে- ভালো ক্রিকেটার, দারুণ ক্রিকেটার ও গড়পড়তা ক্রিকেটারের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে মানসিকতায়।
বাংলানিউজ : এখন তো টেস্ট ক্রিকেটের সংজ্ঞা বদলে গেল। ইংল্যান্ডের মতো করে কী খেলা যায়....
হগ : না না, একদমই না। বাংলাদেশ কেন ইংল্যান্ডের মতো করে খেলবে! অন্য দেশ কীভাবে খেলছে সেটা নিয়ে তো চিন্তাই করা উচিত না। আপনার নিজের ধরনে খেলতে হবে। ইংল্যান্ডের তাদের মতো ধরন আছে। ওদের ক্রিকেটাররা শারীরিকভাবে শক্তিশালী, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তো তেমন না।
কথাটা অনেকে ভুল বুঝতে পারে, একটু ব্যাখা করে দেওয়া দরকার। আসলে আমি বুঝাতে চাচ্ছি- ইংল্যান্ড যত সহজে বাউন্ডারি পাবে, বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেটা পাবে না। কারণ ইংলিশদের খেলায় পেশিশক্তির ব্যবহার বেশি। এখানে বাংলাদেশের নজর দিতে পারে; তাদের খেলোয়াড়দের শারীরিকভাবে উন্নতি কীভাবে করা যায়।
বাংলানিউজ : এখন বাংলাদেশ যেভাবে টেস্ট খেলছে এটা কী ঠিক আছে?
হগ : দেখুন, তারা এখন অন্য দেশগুলোর কাছে ভালোই গুরুত্ব পাচ্ছে। খুব ভালো হয় যদি বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেস্ট খেলতে পারে, যেটা আমার ক্রিকেট বোর্ড! ইংল্যান্ড বা এমন জায়গাগুলোতেও যাওয়া দরকার উন্নতির জন্য। ইতিবাচক দিক আছে অনেক।
এখন কেবল মানসিকতার ব্যাপার। যখন আমরা কথা বলছি, বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটারই খুব ভালো করছে। কিন্তু একটা ব্যাপার হচ্ছে—উন্নতির জন্য আলাদা কন্ডিশনে খেলতে হবে। এই একটা ব্যাপার বাংলাদেশের জন্য জরুরি। আশা করি তারা অন্য বোর্ডগুলোর কাছ থেকেও সাড়া পাবে।
বাংলানিউজ : শেষ প্রশ্ন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে আপনি কীভাবে দেখেন?
হগ : তারা এই ইনিংসে কিন্তু ভারতকে ভালোই পরীক্ষায় ফেলছে। প্রথম ইনিংসে তাদের ভেতর ধৈর্য ছিল না। এমন হলে হবে না, ধারাবাহিকতা দরকার। বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করতে হবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো করতে। তারা এখন এই আসর বা পরেরটিকে আলাদা করে রাখতে পারে।
তাদের ভাবতে হবে—এই ক্রিকেটারদের নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে কি না। সাত-আট বছর পর তারা নিজেদের কোথায় থাকতে চায়। আমার মনে হয় তরুণ ক্রিকেটারদের একটা দল একসঙ্গে করতে হবে তাদের। এদের তৈরি করতে হবে আগামী আট বছর ধরে। আশা করি এই সময়ের পর তারা বড় দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৪৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
এমএইচবি/এএইচএস