ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

নতুনদের উত্থান, কমেছে সাকিব-তামিম নির্ভরতা

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
নতুনদের উত্থান, কমেছে সাকিব-তামিম নির্ভরতা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি সাফল্য নিয়ে ২০১৫ সাল শেষ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। শুরুর সাফল্যের ট্রেন বছরের শেষভাগেও ছিল গতিশীল।

বছরজুড়ে ধারাবাহিক সাফল্যে দেখিয়ে ২০১৫ সালকে অনেক অর্জনের বছরে রূপ দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। সাফল্যের এ ধারায় সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিল ওয়ানডের বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্যভাবে ১৮ ম্যাচের ১৩টিতে জয় পেয়েছে মাশরাফিবাহিনী। বিশ্বকাপে তিনটি জয়। এরপর সাফল্যের ধারাপাতে দেশের মাটিতে টানা চারটি  (পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে) ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে টিম বাংলাদেশ।   

সাফল্যের বছরটিতে অনেক অর্জনের মাঝে রয়েছে আরও এক অজর্ন। একটা লম্বা সময় পর্যন্ত সাকিব আল ‍হাসান ও তামিম ইকবাল হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি, পোস্টারবয়। মাঠ ও মাঠের বাইরে এ দু’জনের ছিল একচেটিয়া ‍আধিপত্য, প্রভাব। ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ, বিজ্ঞাপন-সবখানেই একফ্রেমে থাকতেন এ দুই বন্ধু। একটা সময়ে ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাবখানাও তাই এসে যাচ্ছিলো তাদের মধ্যে! জনপ্রিয়তা আর খ্যাতিতে তারা পেছনে ফেলেছিলেন অন্য সবাইকে। দলের ভেতরে এ দু’জনের প্রতিযোগী কেউ ছিলেন না সে অর্থে।

অন্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাদের দূরত্বের প্রভাব পড়েছিল দলের পারফরম্যান্সেও। নামি-দামি ক্রিকেটার থাকতেও দল হিসেবে জ্বলে ওঠাও হচ্ছিল না বাংলাদেশের। দল হয়ে খেলতে না পারায় ২০১৪ সালে যাচ্ছেতাই পারফর্ম করতে হয়েছে। এ ‍নিয়ে দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও। বেক্সিমকো কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মধ্যে এ ভাঙনের কথা তিনিই প্রথম জানিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমকে।

দলের মাঝে নেতিবাচক এ জালের জট খোলে দ্রুতই।   জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর ২০১৫ সালের শুরুতে বিশ্বকাপের জন্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার পর থেকেই পাল্টাতে থাকে টাইগার শিবির। বিসিবির কঠোরতা ও নতুন তারকা ক্রিকেটারদের উত্থানে দলের মাঝে শুরু হয় অনিন্দ্য সুন্দর এক প্রতিযোগিতা।

সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব-তামিম-মাশরাফি-মুশফিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের হাল ধরেন সৌম্য-তাসকিন-সাব্বিররা। নতুনদের মধ্যে লিটন কুমার দাসও বাংলাদেশ দলে জায়গা করে নিয়েছেন। নিজেকে অতটা মেলে ধরতে না পারলেও ভালো টিমমেট হওয়াতে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন লিটন।

আলাদা করে লিখতেই হচ্ছে টাইগারদের পেস ‍আক্রমণের নতুন অস্ত্র মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে। মুস্তাফিজ সংক্রান্ত আলোচনা এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের আকাশে-বাতাসে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মৌসুমে মুস্তাফিজুর ছাড়িয়ে গেছেন কল্পনার সীমানা। গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে এই ‘কাটার স্পেশালিষ্ট’কে। টাইগারদের এ পেসার হয়েছেন আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য।

অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে অসাধারণ এক ক্রিকেট দল এখন বাংলাদেশ। সর্বশেষ আবু হায়দার রনি বিপিএলে ঝলক দেখিয়ে জানান দিলেন, আমিও জায়গা চাই জাতীয় দলে!  পুরোনোদের সঙ্গে নতুনরাও হাল ধরতে চাইছেন। দলে ঢোকার এ সুস্থ প্রতিযোগিতায় কখনো কখনো বেশি এগিয়ে থাকছেন নতুনরাই।

ক্রিকেটারদের পাইপলাইন সমৃদ্ধ হওয়ায় মাঠে ‍পারফরম্যান্সের প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য সব প্রতিযোগিতা এখন বন্ধ। টিমে থাকা, একাদশে ‍জায়গা পাওয়াতেই ফোকাস করছেন ক্রিকেটারা। ‘উদ্ধত্য’ ধরনের কিছু আপনা-আপনিই পালিয়ে গেছে ক্রিকেটারদের ভেতর থেকে। সাফল্য ধরে রাখাটাই মূল চ্যালেঞ্জ এখন ক্রিকেটারদের।

কোনো একটি সিরিজে চ্যালেঞ্জ নিতে ব্যর্থ হলে দল থেকেই ছিটকে পড়তে পারেন দলের সেরা ক্রিকেটারটিও। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব-তামিম এ দুটি নামের প্রতি মাত্রাতিরিক্তি নির্ভরতা কমে আসা যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাওয়ার বার্তাই বহন করে। ফর্মহীনতার পরও লিটনকে সুযোগ দিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বুঝিয়ে দিয়েছেন ভালো টিমমেট হওয়াও একটা বড় গুন। যেটা টিম হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এমন অধিনায়কের সামনে সব উদ্ধত্যতা আপনা-আপনিই নেই হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫
এসকে/এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।