ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

৬ মার্চ ফেসবুকে শুধুই মাশরাফি!

স্পোটর্স ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
৬ মার্চ ফেসবুকে শুধুই মাশরাফি! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: ৬ মার্চ (রোববার) বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ‘ঐতিহাসিক’ দিন। ওইদিন ক্যাপ্টেন মাশরাফির দিন।

বাংলাদেশি টাইগারদের দিন। এদিন এশিয়া কাপের ফাইনালে টি-টোয়েন্টির টপ র‌্যাংকিংয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে টাইগারদের মহারণ!

আরব আমিরাত, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা, দু’বারের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে উঠেছে মাশরাফি বাহিনী।

এরই মধ্যে ক্যাপ্টেন মাশরাফিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। টাইগার ভক্তরা মাশরাফিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা লিজেন্ড হিসেবে ঘোষণারও দাবি জানাচ্ছেন। এছাড়াও ৬ মার্চের ফাইনালকে ঘিরে সবার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে শুধুমাত্র মাশরাফির ছবি দেওয়ার জন্য পোস্ট দিচ্ছেন। অনেকে এমন পোস্টে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিক প্রোফাইলের ছবি পরিবর্তন করে ফেলছেন।

মূলত তারা মাশরাফির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ ক্যাম্পেইন করছে। যে ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এত সাফল্য, তার প্রতি ভক্তদের কেন আবেগ, ভালবাসা থাকবে না। যেকোনো মুহূর্তে পঙ্গু হয়ে শেষ হয়ে যেতে পারে মাশরাফির ক্যারিয়ার। হাঁটুতে ৭টি অপারেশন নিয়ে খেলছেন তিনি। বলও করছেন ১২৫-১৩০ কিলোমিটার গতিতে। যে খেলোয়াড় নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সারাক্ষণ মগ্ন, তাকে শ্রদ্ধা জানাবে না তো কাকে জানাবে?

ফেসবুকের কিছু স্ট্যাটাস আর টাইগার সমর্থকদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশের নমুনা তুলে ধরা হলোঃ

** সব অর্থেই ব্যতিক্রম মাশরাফি। একাধিকবার চোট-আঘাতের পরেও মনের প্রবল জোরে ফিরে আসতে পারেন দলে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের মোড় একা- হাতে ঘোরানোর পরে ভনিতার আশ্রয় না নিয়ে মাশরাফির পক্ষেই বলা সম্ভব, ‘ফাইনালে উঠতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। তবে এখনই তো সব শেষ হয়ে যায়নি। ফাইনাল এখনও বাকি। উৎসব করার দিন তো পড়েই রয়েছে। ’

** আচ্ছা,আগামী ৬ তারিখ যদি আমাদের সবার প্রোফাইল পিকে মাশরাফি ভাইয়ের পিক থাকে তাহলে কেমন হয়?? নিঃশ্চয়ই এই ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না। যেই লোকটা ৭ বার হাঁটুর অস্ত্রোপাচার হবার পর আরেকবার ইনজুরি হলে শিউরলি পঙ্গু হয়ে যাবার আশঙ্কা কে দূরে ঠেলে
দিয়ে ১৩৫-১৪০ কি.মি/ঘন্টা গতিতে বল করে যাচ্ছেন, নড়বড়ে এবং খারাপ সময় পার করতে থাকা একটা দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বক্রিকেটের উচ্চ-পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রতি আমরা কী একটু শ্রদ্ধা জানাতে পারিনা?

আমরা প্রত্যেকেই তাকে অনেক ভালবাসি এবং শ্রদ্ধা করি। কিন্তু,তার প্রতি ভালবাসা প্রকাশের এবং বিশ্ববাসীরর কাছে মাশরাফির প্রতি আমাদের ভালবাসা reveal করতে তাই আগামী ৬ই মার্চ বাংলাদেশ বনাম ভারতের মধ্যকার এশিয়া কাপের ফাইনালের দিন সবাই প্রোফাইল পিকে মাশরাফির ছবি দেওয়ার বিনীতভাবে সেই অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি আপনার আইডিতেও এরকম একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আপনার বন্ধুদেরকেও এই ব্যাপারটি সুনিশ্চিত করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে
সবার সাহায্য কামনা করছি ধন্যবাদ।

** ডেভ হোয়াটমোর বলেছিলেন, মাশরাফির সাথে পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড় এর তুলনা চলে না, তার তুলনা সে নিজেই"! কারন,নিউজিল্যান্ডের গতিদানব 'শেন বন্ড' দুইবার সার্জারির পরই ভয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেন!! বিশ্ববিখ্যাত ইংলিশ অলরাউন্ডার 'এন্ড্রু ফ্লিনটফ' মাত্র একটি সার্জারির ভয়েই ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছেন!! একমাত্র ক্রিকেটার যিনি পরপর ৭টা মারাত্মক সার্জারি করেও এখনো ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন! বিশ্বের কোন ফার্স্ট বোলারই দুইবারের বেশি সার্জারি করে খেলতে পারেননি। কিন্তু মাশরাফিই অসাধ্য ব্যাপারটি সাধ্য করেছেন!  একমাত্র পরিশ্রমী ক্রিকেটার যার ওজন বেড়ে যাচ্ছে বলে ক্রিকেট ছাড়ার আশংকা ছিল তাই তিনি ১ মাসে ১২ কেজি ওজন কমিয়ে সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়েছিলেন। যেকোন আঘাতে তাঁর বাম পা পঙ্গু হয়ে যেতে পারে এমন রিস্ক থাকা সত্ত্বেও তিনিই একমাত্র সাহসী মানব যিনি প্রতিটি ম্যাচে এখনো হিংস্র বাঘের মতো বোলিং করে যাচ্ছেন! তিনিই সত্যিই দেশপ্রেমিক যার একমাত্র আদরের ৫ মাস বয়সী ছেলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে টাইফয়েডের সঙ্গে যুদ্ধ করেন, অথচ দেশের স্বার্থে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে একমাত্র ছেলের সুস্থতার জন্য দু'হাত তুলে দোয়া করে বিশ্বকাপে দেশের জন্য মাঠে নেমেছেন। ম্যাশ একমাত্র ক্রিকেটার যিনি প্রতি ম্যাচ শেষে হাঁটুতে জমে যাওয়া পানি নিজে সিরিঞ্জ দিয়ে বের করে ফেলেন। তিনি সেই ক্রিকেটার যার প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গার পর ১৫ মিনিট সময় লাগে হাঁটু ভাঁজ করে বিছানা থেকে নামতে। আমাদের একমাত্র প্লেয়ার যে কিনা ইনজুরি বিধ্বস্ত অবস্থায় বোলিং এর কষ্টকে ভুলতে নিজেকে সান্ত্বনা দেন এই বলে "মুক্তিযোদ্ধারা পায়ে গুলি নিয়েও যুদ্ধ করে যেতে পারলে আমি কেনো সামান্য অপারেশন নিয়ে বোলিং করতে পারবো না।

** (ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যকে দেয়া মাশরাফির সাক্ষাতকারটির কিছু অংশ) মাশরাফি: ক্রিকেট তো ক’দিনের। ভাল মানুষ হিসেবে যেন সবার মনে বেঁচে থাকতে পারি। তাই বলে চোট রয়েছে, সাত বার অপারেশন হয়েছে এই সহানুভূতি নিয়ে ক্রিকেট খেলতে চাই না। সবচেয়ে বড় হিরো আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের জন্যই তো আজ স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা রয়েছি। আমি ওদের অসম্ভব সম্মান করি। আমি সম্মান করি বৈজ্ঞানিকদের। ওঁদের এক-একটা আবিষ্কার জাতিকে কত বছর আগে নিয়ে যায়। আমি সম্মান করি ডাক্তারদের। যাঁরা মানুষের জীবন বাঁচান। এর চেয়ে মহত্ কাজ আর কী হতে পারে। আমাদের নিয়ে যত নাচানাচিই হোক, আমরা কি কারও জীবন বাঁচাতে পারছি?

** ১৪ বছরে দু'পায়ে ১০ টি সার্জারি। ডান হাঁটুতে ৩ বার, বাম হাঁটুতে ৪ বার। আর দু'পায়ের গোড়ালীতে আরো ৩ বার মিলিয়ে মোট ১০ বার। দু'পায়ে ১০ টি অস্ত্রপাচার থাকা সত্ত্বেও এখনো ম্যাশ লড়ে যাচ্ছেন বীরের বেশে। এইগুলা শুধু একজন ম্যাশের পক্ষেই সম্ভব। সালাম তোমায় মি. ক্যাপ্টেন।

ইতোমধ্যেই ‘মাশরাফি বিন মর্তুজা ফ্যানস গ্রুপ’ নামের একটি পেজের প্রায় প্রত্যেক অ্যাডমিন তাদের ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে মাশরাফির ছবি দিয়েছেন। এরকম আরও বেশ কিছু ফেসবুক পেজে দেখা গেল একই রকম উন্মাদনা। কেউ কেউ তাদের নিজেদের প্রোফাইল পিকচারে মাশরাফির ছবি ইতোমধ্যেই আপলোড দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ০৫ মার্চ ২০১৬
এমআর/
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।