ধর্মশালা থেকে: তামিম ইকবালের ঝড়ো ১০৩ রান ও সাকিব আল হাসানের স্পিনঘূর্ণিতে ওমানকে হারিয়ে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ দশে ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বৃষ্টিবিঘ্নিত বাছাই পর্বের শেষ ম্যাচে ওমানকে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৫৪ রানে হারায় বাংলাদেশ।
প্রথমে ওমানের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮০ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। ১৮১ রানের দুর্ভেদ্য লক্ষ্যে খেলতে নামে ওমান। দুই দফা বৃষ্টির হানায় ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১২ ওভারে ১২০ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় তাদের সামনে। এ রান তাড়া করতে গিয়ে ৯ উইকেটে ৬৫ রান সংগ্রহ করে তারা।
এর আগে রোববার (১৩ মার্চ) হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসাসিয়েশন মাঠে বৃষ্টির চোখ রাঙ্গানি আর হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাছাইপর্বে ‘বি’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ওমানের বিপক্ষ খেলতে নামে বাংলাদেশ।
আগের দু’দিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় এদিন উইকেটের অবস্থা বিবেচনায় টসে জিতলে যেকোনো দলেরই ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। টসে জিতে তাই বাংলাদেশকে আগে ব্যাট করানোর ব্যাপারে ওমানের সিদ্ধান্তে তাই কোনো ভুল ছিল না।
ব্যাটিংয়ে নামলেন দুই টাইগার ওপেনার তামিম ও সৌম্য। ওমানের বোলার বিলালর খান ও আমির আলীদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ম্যাচের শুরুতে কিছুটা অশ্বস্তিতে পড়ে টাইগাররা। তবে সে অশ্বস্তি খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে অজয় লালচেতার ২য় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তামিম ইকবাল তুলে নিলেন টি-২০ ক্যারিয়ারের ১ হাজার রান। সঙ্গে হলেন বাছাই পর্বের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
দিনটি তামিমময় ছিল বলেই মাঠে হয়তো খুব বশিক্ষন থাকলেন না আরেক টাইগার ওপেনার সৌম্য সরকার। সপ্তম ওভারে ব্যক্তিগত ১২ আর দলীয় ৪২ রানে ওমান বোলার লালচেতার বলে বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলনে ফেরেন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির নামলে তাকে সঙ্গী করে সামনে ছুটতে থাকেন তামিম। ১৩তম ওভারে আমীর কলিমের প্রথম বলটি সীমানার বাইরে পাঠিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ আর এবারের বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক হাঁকান তিনি।
ক্রিজের এপাশ থেকে যেমন হাঁকাচ্ছিলেন তামিম, তেমনি আরেক পাশ থেকে সাব্বির। তবে সাব্বিরের ব্যাট খুব বেশিক্ষণ ধার দেখাতে পারেনি। তারপরেও যতটুকু দেখিয়েছে, তাইবা কম কী! ২৬ বলে ৪৪ রানের এক চোখ ধাঁধাঁনো ইনিংস খেলে খাওয়ার বলে বোল্ড আউট হন তিনি।
সাব্বিরের পর সঙ্গী হিসেবে বিশ্বসেরা টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে পান তামিম। এরপর যেন এক মহাকাব্যিক ইনিংসের দিকে যাত্রা শুরু করেন তামিম। সুলতান আহমেদ অ্যান্ড গংদের এক একটি বল সীমানা ছাড়া করে এগিয়ে যান টি-২০ ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের পথে।
১৯তম ওভারে বিলাল খানের চতুর্থ বলটিকে সীমানাছাড়া করে তামিম তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। আর এই শতক হাঁকাতে তিনি খেলছেন ৬০ বল। যার মধ্যে ছিল নয়টি চার আর পাঁচটি দৃষ্টি নন্দন ৬’র মার। আর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৬৪.৪০।
সন্দেহ নেই, তামিমের ক্যারিয়ারে এটি একটি মহাকাব্যিক ইনিংস। একে তো প্রথম টি-টোয়েন্ট শতক। তাও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে। তবে ইনিংসটি শুধু তামিমের জন্যই নয়, মহাকাব্যিক হয়ে থাকলো বাংলাদেশের জন্যও। কেননা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র শতকের মালিক তামিমই।
এখানেই থামেননি তিনি। খেলেছেন একেবারে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। ২০ ওভার শেষে ৬৩ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আর সাকিবর থাকেন ১৭ রানে অপরাজিত।
১৮১ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলীয় ১৪ রানেই ওমান খুইয়ে বসে দলের দুই ওপেনার জিশান মাকসুদ ও খাওয়ার আলীকে। তাসকিনের বলে ব্যক্তিগত শূন্য রানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জিশান। আর আল আমিনের বলে ব্যক্তিগত ৮ রানে মাশরাফির তালুবন্দি হন খাওয়ার।
তৃতীয় উইকেটে আদনান ইলিয়াস ও জোতিন্দ্র সিংয়ের ব্যাট কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও সপ্তম ওভার শেষে হানা দেয় বৃষ্টি। ভাগ্য নির্ধারিত হয় ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে।
প্রথম দফার বৃষ্টির পর ১৬ ওভারে ওমানের জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ১৫২ রান। সেই লক্ষ্যে রাত ১০টা ৪২ মিনিটে ব্যাটিংয়ে নেমে অষ্টম ওভারে মাশরাফির চতুর্থ বলে ব্যক্তিগত ১৩ রানে রান আউটের ফাঁদে পড়েন আদনান ইলিয়াস।
মাশরাফির ঠিক পরের ওভারেই ওমানদের উপর আঘাত হানেন সাকিব। দলীয় নবম ওভারে তার দ্বিতীয় বলে ব্যক্তিগত শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন সহ-অধিনায়ক আমীর কলিম।
আমির যখন ফিরে গেলেন, ঠিক তখনই আবার দ্বিতীয়বারের মতো হানা দেয় বৃষ্টি। এবারের হানায় নতুন করে লক্ষ্য নির্ধারিত হল ১২ ওভারে ১২০ রান।
শেষ সময়ের চ্যালেঞ্জিং এ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামলে সাকিবের ওভারের পঞ্চম বলে থেমে যায় ব্যক্তিগত ৪ রানে থাকা আমীর আলীর যাত্রা। মুশফিকের হাতে স্ট্যাম্পড হন তিনি।
আমীর ফিরে যাবার পরের ওভারেই আবার মাশরাফি আঘাত। আর তাতেই ব্যক্তিগত ২৫ রানে সোজা প্যাভিলনে জোতিন্দার সিং।
এরপর ওমানের উপর রীতিমত চড়াও হন সাকিব। ১১তম ওভারে তাঁর তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ৩ রানে মাহমুদউল্লাহর তালু বন্দি হন মেহরান খান। আর এরপর ব্যক্তিগত ১ রানে সাকিবের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক সুলতান আহমেদ।
এরপর আর সাকিব কিংবা মাশরাফি নন, ওমানকে বিদ্ধস্ত করার গুরু দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় টাইগার ব্যাটসম্যান সাব্বিরকে। আর বোলিংয়ে এসেই তিনি লালচেতাকে শিকার করেন।
বিশ্বকাপের মূল পর্বে যেতে তখন বাংলাদেশের বাকি মাত্র একটি বল। সাব্বিরের সে ঘূর্ণি বলে ওমানের ব্যাটসম্যানরা তুলতে পারলেন মাত্র এক রান। আর তার সঙ্গেই থেমে গেল তাদের বিশ্বকাপের মূলপর্বে যাওয়ার মিশন।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সাকিব ৪টি, তাসকিন, আলআমিন, মাশরাফি ও সাব্বির নিয়েছেন ১টি করে উইকেট। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
আরএইচ