মিরপুর থেকে: অবশেষে স্বরূপে ফিরলো টাইগাররা। তাদের খুনে মেজাজের সামনে চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল সফরকারী আফগানরা।
টাইগারদের এই আক্রমনাত্নক মনোভাব যেমন ব্যাটিংয়ে দেখা গেছে তেমনি দেখা গেছে বোলিং ও ফিল্ডিংয়েও-যা বর্তমান ছিল তাদের শারিরীক ভঙ্গিতেও।
আর আক্রমনাত্নক এই তিনের সমন্বয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১৪১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ২-১ এ সিরিজ জয়ের পাশাপশি নিজেদের শততম ওয়ানডে জয়ের গৌরবও অর্জন করলো বাংলাদেশ। এই জয়েই ঘরের মাঠে টানা ষষ্ঠ ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিল লাল-সবুজের দল।
বাংলাদেশের দেয়া ২৮০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে আফগানরা অলআউট হয়েছে ১৩৮ রানে।
টাইগারদের হয়ে ১১৮ রানের বিষ্ফোরক এক ইনিংস খেলে এ ম্যাচ ব্যবধান গড়ে দেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের এই জয়ের দিনে আফগানদের বিপেক্ষে ব্যাট হাতে একমাত্র তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটসম্যানকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথম ম্যাচে ০ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ২০ রান করা সৌম্য সরকার এদিন ফেরেন ব্যক্তিগত ১১ রানে।
সৌম্যর আগে ইনিংসের সমাপ্তি ঘটতে পারতো তামিম ইকবালেরও। তবে ভাগ্য দেবী সহায় ছিল বলেই সেটা হয়তো হয়নি। কেননা তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ নবীর প্রথম ডেলিভারিটি তামিম তুলে দিয়েছিলেন মিডঅনে। বলটি উড়ে গিয়ে হাতে পড়েছিল অধিনায়ক আসগার স্তানিকজাইয়ের হাতে। কিন্তু সহজ ক্যাচটি ধরতে পারেননি আসগার। আর সেই সুযোগটিকে শতভাগ কাজে লাগান ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল।
দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির রহমানকে সাথে নিয়ে আফগান বোলারদের উপর এক রকম স্টিম রোলার চালাতে থাকেন তামিম। আগের ম্যাচে বল হাতে জ্বলে উঠা কাবুলিওয়ালা বোলারদের একরকম তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৩৪তম ওয়ানডে অর্ধশতক। তামিমের সঙ্গ পেয়ে এদিন গর্জে ওঠে তার ব্যাট্ও। আর সেই গর্জনের ধারাবাহিকতায় ২৭তম ওভারের পঞ্চম বলে সাব্বির থলিতে পুড়লেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে অর্ধশতক। ততক্ষণে হর্ষধনিতে কেঁপে উঠছে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
তবে হঠাৎ-ই যেন সাব্বিরের ছন্দপতন হলো। ৩১তম ওভারে রহমতউল্লাহর তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ৬৫ রানে নিজের ইনিংসের ফুলস্টপ টানলেন। ওয়ানডেতে এটি সাব্বিরের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ফিরে যাবার আগে দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সাথে জুটি গড়ে দলকে দেন ১৪০ রানের অসাধারণ এক জুটি। ওই জুটিই ভিত ভালো সংগ্রহের ভিত গড়ে দেয় বাংলাদেশকে। স শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ২২ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৭৯ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ।
আফগানদের হয়ে বল হাতে মোহাম্মদ নবী, মিরওয়েইস আশরাফ, রশিদ খান ২টি করে আর দৌলত যাদরান রহমত শাহ নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
জবাবে জয়ের জন্য ২৮০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নাম আফগানরা নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুতেই চলে যায় ব্যাকফুটে। তৃতীয় ওভারে মাশরাফির প্রথম বলটি ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদের অফ স্ট্যাম্পে আঘাত হানলে দলীয় ৫ রানেই আফগানদের প্রথম উইকেটের পতন হয় । আর এই উইকেট দিয়েই ওয়ানডে ক্রিকেটে আব্দুর রাজ্জাকের সমান সংখ্যক ২০৭টি উইকেট ছুঁয়ে ফেলেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
শেহজাদের পর দ্বিতীয় উইকেটে দলকে ৪৭ রানের সংগ্রহ এনে দিয়ে ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে মোশাররফ হোসেন রুবেলের বলে এলবির ফাঁদে পড়ে ব্যক্তিগত ৩৩ রানে নওরোজ মঙ্গল ক্রিজ ছাড়া হলে উল্লাসের উপলক্ষ্য ফেরে স্বাগতিক শিবিরে। এরঠিক তিন বল পরে আবার আঘাত হানেন রুবেল আর তাতেই দলীয় ৫২ ও ব্যক্তিগত ০ রানে ক্রিজ ছাড়া হন হাসমতউল্লাহ শাহেদি। মুলত এই ওভারটি থেকেই হারের গল্প শুরু হয় সফরকারী আফগানদের। আফগানদের হারের শেষ দৃশ্যটি লেখেন তাসকিন আহমেদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। রহমত শাহকে ব্যক্তিগত ৩৬ ও সামিউল্লাহ শেনওয়ারীকে ১৩ রানে তাসকিন, নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ব্যক্তিগত ২৬ রানে মোসাদ্দেক, রশীদ খানকে ১৭ রানে রিয়াদ ও দৌলত যাদরানকে ০ রানে শফিউল ক্রিজ ছাড়া করে ঘরের মাঠে টানা ষষ্ঠ ওয়ানডে জয়ের অনন্য রেকর্ড গড়ে তবেই মাঠ ছাড়েন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫১ ঘণ্টা, ০১ অক্টোবর ২০১৬
এইচএল/এসকে