মিরপুর থেকে: ইমরুল কায়েসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পরও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ২১ রান হার মানলো বাংলাদেশ। ইংলিশদের দেওয়া ৩১০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ইমরুলের সেঞ্চুরির সঙ্গে সাকিব আল হাসানের হাফসেঞ্চুরিও বিফলে গেল।
শফিউল ইসলামের রান আউটের পর তাসকিন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে জ্যাক বলের বলে আউট হলে হার নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। এর আগে জবাবে খেলতে নেমে সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল কায়েস আদিল রশিদের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন। ১১৯ বলে ১১চার ও দুই ছক্কায় ১১২ রান করা এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এর আগে এই রশিদের বলেই ব্যক্তিগত ১ রান করে আউট হন মাশরাফি বিন মর্তুজা। জ্যাক বল অভিষেকেই পাঁচ উইকেট তুলে নেন।
দুর্দান্ত ব্যাটিং করে বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল কায়েসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাটিং করেন তিনি। পরে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফসেঞ্চুরি। তবে ৫৫ বলে ১০ চার ও একটি ছক্কায় জ্যাক বলের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। এর পরের বলেই একই বলারের চতুর্থ ডেলিভারিতে বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
অসাধারণ ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিলেন ইমরুল কায়েস। তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। ১০৫ বলে ১১টি চার ও দুটি ছক্কায় তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান।
এর আগে ইমরুল কায়েসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দলীয় ২০০ রান পার করে বাংলাদেশ। তবে পেশীতে টান পড়ায় ইনজুরি নিয়েই ব্যাটিং করেন তিনি।
মুশফিকুর রহমানের বিদায়ের সঙ্গে দলীয় চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১২ বলে এক চারে সমান ১২ রান করে আদিল রশিদের দ্বিতীয় শিকার হন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান।
ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ভালো খেলতে থাকা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২৫ রানে ফিরে যান। ২৬ বলে দুই চারে ব্যক্তিগত ২৫ রানে আদিল রশিদের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
দলে সুযোগ পেয়েই ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফসেঞ্চুরি করলেন ইমরুল কায়েস। এরই সঙ্গে দলীয় ১০০ রান পূরণ হয় বাংলাদেশের।
ওপেনার তামিম ইকবালের পর বিদায় নিলেন সাব্বির রহমান। ১১ বলে তিনটি চারে ১৮ করা সাব্বির জ্যাক বলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। ছয় হাকাতে গিয়ে একেবারে বাউন্ডারি লাইনে ডেভিড উইলি তার ক্যাচটি লুফে নেন।
৯.৫ ওভারে অভিষিক্ত জ্যাক বলের বলে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিওনে ফেরেন ড্যাশিং এ ওপেনার ইকবাল। এ সময় টাইগারদের রান ছিল ৪৬।
বেন স্টোকসের সেঞ্চুরি ও জস বাটলারের ঝড়ো অর্ধশতকে আট উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করিয়েছে ইংল্যান্ড। এ ম্যাচটি জিতলেই ইংলিশদের বিপক্ষে ‘হ্যাটট্রিক’ ওয়ানডে জয়ের কীর্তি গড়বে টাইগাররা।
এর আগে শুক্রবার (৭ অক্টোবর) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওডিআইতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে সফরকারীরা। আন্তর্জাতিক অভিষেকেই ব্যাট হাতে আলো ছড়ান তরুণ ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট (৬০)। আউট হওয়ার আগে চতুর্থ উইকেটে স্টোকসের সঙ্গে ১৫৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন ২১ বছর বয়সী এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
শেষদিকে তিন চার ও চার ছক্কায় ৬৩ রানের (৩৮ বল) বিধ্বংসী ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন বাটলার। ৫০তম ওভারের চতুর্থ বলে তিনি সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। ইনিংসের শেষ বলটিতে ক্রিস উকসের (১৬) রান আউটে অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে।
দুই ক্যাচ মিসের সুবাদে ক্যারিয়ারের প্রথম ওডিআই সেঞ্চুরি উদযাপন করেন স্টোকস। ১০১ রান করে থামেন ২৫ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডার। ৪২তম ওভারে মাশরাফি বিন মর্তুজার বলে সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
মাহমুদউল্লাহ-মোশাররফের ক্যাচ মিসে ব্যক্তিগত ৬৯ ও ৭১ রানে দু’বার জীবন পান স্টোকস। ৩১তম ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে মিডঅনে সহজ ক্যাচটি ফেলে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পরের ওভারেই মাশরাফির স্লোয়ারে ডিপ কাভারে হাওয়ায় ভাসানো ক্যাচটি হাতছাড়া করেন মোশাররফ হোসেন।
এর আগে অষ্টম ওভারে ইংল্যান্ডের দলীয় ৪১ রানের মাথায় বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন শফিউল ইসলাম। ১৬ রান করে মাশরাফি বিন মর্তুজার তালুবন্দি হন ওপেনার জেমস ভিঞ্চি। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জেসন রয়কে (৪১) সাব্বিরের ক্যাচে পরিণত করেন সাকিব আল হাসান। পরের ওভারেই রান আউটের ফাঁদে পড়েন জনি বেয়ারস্টো (০)।
দু’টি করে উইকেট নেন মাশরাফি, সাকিব ও শফিউল।
এ ম্যাচটি জিতলেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘হ্যাটট্রিক’ ওয়ানডে জয়ের উল্লাসে মাতবে বাংলাদেশ। সবশেষ চারবারের দেখায় তিন ম্যাচেই শেষ হাসি হাসে টিম বাংলাদেশ। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে যায় ইংলিশরা। একদিনের ক্রিকেটে তাদের বিপক্ষে আগের তিনটি জয় আসে ব্রিস্টল, চট্টগ্রাম ও অ্যাডিলেডে। এবার মিরপুরে প্রথমবারের মতো ইংলিশ-বধের অপেক্ষায় স্বাগতিক ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে (২-১) ইংল্যান্ড সিরিজের প্রস্তুতি সেরে নেয় বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচে ছন্দে না থাকলেও তৃতীয় ম্যাচেই ১৪১ রানের দাপুটে জয় তুলে নেয় মাশরাফিবাহিনী। যা নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ১০০তম ওয়ানডে জয়। এর মধ্য দিয়ে দেশের মাটিতে টানা ষষ্ঠ ওডিআই সিরিজ জেতার গৌরব অর্জন করে টিম বাংলাদেশ।
ফতুল্লায় অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরির (১২১) সুবাদে তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী ইমরুল কায়েস। বাদ পড়েছেন ফর্মহীনতায় ভোগা সৌম্য সরকার। পেসার আল অামিন হোসেন ও নাসির হোসেনের একাদশে জায়গা হয়নি। এছাড়া, আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের একাদশটি অপরিবর্তিত।
নিজেদের শেষ ওয়ানডে থেকে ছয়টি পরিবর্তন আনে ইংলিশরা। অ্যালেক্স হেলস ও ইয়ন মরগান বাংলাদেশ সফরে আসেননি। ওডিআই সিরিজে বিশ্রামে জো রুট। ইনজুরিতে মার্ক উড ও বাদ পড়েছেন ক্রিস জর্ডান। হেলসের জায়গায় ওপেনিংয়ে জেমস ভিঞ্চি। এদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছেন ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। আর একটি টেস্ট খেলা পেসার জেক বল এবার ওয়ানডেতেও পা রাখলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৬
এমআরএম/এমএমএস