ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বিগ ব্যাশে খেলার স্বপ্ন রুমানার

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
বিগ ব্যাশে খেলার স্বপ্ন রুমানার

ঢাকা: ব্যাট-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে সীমানা কেবলই বাড়াচ্ছেন অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে রুমানার স্বপ্ন এখন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে খেলার।



নারী ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে বিগ ব্যাশ চালু হয়েছে গত মৌসুমে। দ্বিতীয় মৌসুম (২০১৬-১৭) শুরু হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। এবারের মৌসুমে রুমানা কোনো দলে চুক্তিবদ্ধ না হলেও তার বিশ্বাস, ২০১৭-১৮ মৌসুমে বিগ ব্যাশে দল পেয়ে যাবেন বাংলাদেশ দলের চার-পাঁচজন ক্রিকেটার।

এবারের আসরেই দল পাওয়ার আভাস পেয়েছিলেন রুমানা। আভাসটা কীভাবে এসেছিল সেটির বিস্তারিত না জানালেও চীন ও থাইল্যান্ডের নারী ক্রিকেটাররা বিগ ব্যাশের দলে ডাক পাওয়ায় আশা‍টা বড় হচ্ছে তার, ‘চীন থেকে ছয়টা প্লেয়ার গেছে। থাইল্যান্ড থেকে দুইজন। একটু একটু আভাস পেয়েছি যখন দল গোছানো হচ্ছিলো তখন আমাদের খেলাও ছিল যার কারণে...এ ব্যাপারে বোর্ড চিন্তা-ভাবনা করবে। পরের বার খেলতে পারবো আশা করা যায়। ’

২০১১ সালে বাংলাদেশের অভিষেক ওয়ানডেতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়া রুমানা ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন ওয়ানডে স্পেশালিস্ট। ব্যাট-বলে রুমানা এখন দলের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান ও উইকেট এখন তার দখলেই।

টি-২০ ফরম্যাটে ব্যাট-বল দুটিতেই বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রুমানা। ক্রিকেটের এ সংক্ষিপ্ত সংস্করণে সবচেয়ে সফল সালমা খাতুন। রুমানা যেভাবে এগিয়ে চলেছেন তাতে সালমাকে টপকে যাওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু নয় রুমানার জন্য। ব্যাটিংয়ে সালমার থেকে মাত্র ২৪ রানে পিছিয়ে রুমানা। উইকেটের পার্থক্য ১০টি।

রুমানার হাত ধরেই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট পড়েছে গৌরবের এক মনিহার। গত মাসে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছেন এ লেগস্পিনার। হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতান খুলনার এই মেয়ে।

মেয়েদের ক্রিকেটে যেকোনো সংস্করণেই বাংলাদেশের এটি প্রথম হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে ১৭তম, আর ওয়ানডেতে নবম। একটা দিক দিয়ে রুমানার হ্যাটট্রিকটা বিশেষ। কেননা পরপর তিন ব্যাটসম্যানই পড়েছেন এলবিডব্লুর ফাঁদে। যেটির নজির নারী ক্রিকেটে দ্বিতীয়টি নেই।

হ্যাটট্রিকের প্রসঙ্গ আসতেই চকচকে হাসি রুমানার মুখে। বিদেশের মাটিতে অমন কীর্তির পর ম্যাচ জয়, কেমন লাগছিল তখন? রুমানা বলতে লাগলেন, ‘এমন একটা সাফল্য আসবে আমি কল্পনাই করতে পারিনি। তখন ‌ আমাদের টিমের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বেশি রান করতে পারিনি আমরা। আমি খুব লাকি ছিলাম তিন বলে তিনটা উইকেট। সবগুলোই এলবিডব্লু। হ্যাটট্রিক বলটা যখন ব্যাটসম্যানের প্যাডে লাগলো জোরালো আপিল করলাম। দেবে কী দেবে না একটা অনিশ্চিয়তা। আমি কিন্তু আপিল ছাড়িনি। যতক্ষণ আউট দেয়নি আমি আপিল ধরে রেখেছি। আমাদের অন্য প্লেয়াররা সবাই আপিল ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু আমি এতটাই নিশ্চিত ছিলাম যে আপিল ছাড়িনি। প্রথমটা যতক্ষন আউট না দিয়েছে আপিল ধরে রেখেছিলাম পরে আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দিয়েছে, তৃতীয়টাতেও তাই। ’

‘নিজের কাছে খুব ভালো লাগছিলো যে দেশের হয়ে একটা হ্যাটট্রিক করলাম। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের একটা নাম লেখা থাকলো। তারপরও দুশ্চিন্তা কাজ করছিল ওদের রান তো আর বেশি বাকি নেই। অল্প রান লাগে, ওদের একটা পার্টনারশিপ হয়ে যাচ্ছিলো। আরও দু্ইটা উইকেট নিতে হবে। ম্যাচ নিয়ে খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কী হয় কী হয়। ’-যোগ করেন রুমানা।


আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতে আসায় দলের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে গেছে বলে জানান রুমানা, ‘আয়ারল্যান্ডে ম্যাচ খেলার পর আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আগে যদি ৬০ থাকে তবে এখন ৭০। আত্মবিশ্বাস অন্তত ১০ ভাগ অর্জন করেছি। আমাদের এখন টিমস্পিড বাড়ছে। নতুন কোচ এসেছে। আসন্ন এশিয়া কাপ ও তারপর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আশা করি ভালো করতে পারবো। ’

রুমানার আক্ষেপের জায়গা পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলতে না পারা। এ নিয়ে আক্ষেপ থাকাটা স্বাভাবিকই। কেননা, ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঝের দুই বছর বাংলাদেশ দল খেলেছে মাত্র দুইটা ওয়ানডে ও পাঁচটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

রুমানার দাবি বাংলাদেশ দল ধীরে ধীরে উন্নতি করছে কিন্তু দীর্ঘ বিরতিতে ম্যাচ খেলায় সেটির প্রতিফলন সেভাবে দেখা যাচ্ছে না, ‘দিন দিন আমরা কিন্তু উন্নতি করছি। তবে আমাদের উন্নতি অতটা বোঝা যাচ্ছে না কারণ আমরা পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলছি না। ঘরোয়া লিগ কম খেলছি আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচও কম খেলছি। এ জন্য অনেকে ভাবছে আমাদের তো উন্নতি নেই! আমরা যদি খেলার উপর থাকতাম তাহলে হয় হারতাম নয় জিততাম। একটা কিছু তো হতো। খেলতে খেলতে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতাম। এবং আমরা ভালো একটা পর্যায়ে যেতে পারতাম যেটা বাইরের দেশগুলো করে যাচ্ছে। ’

রুমানা আরও বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা আমাদের সাথে হারে তারপরও কিন্তু ওরা ছেড়ে দেয় না, খেলার মধ্যে থাকে। কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচ খেললো। প্রত্যেকটা টিমই খেলছে। ব্যক্তিগতভাবে বলবো আমরা অন্য দলের তুলনায় খারাপ না। আমরা যদি ম্যাচের মধ্যে থাকি। আমাদের ফোকাসটা বেশি বাড়তো। প্রমাণ করতে পারতাম যে আমরাও পারি। ’

আক্ষেপের জায়গা থেকে সরে সবার শেষে রুমানা জানালেন তার স্বপ্নের কথা। ক্রিকেটকে ঘিরে বড় স্বপ্নই দেখেন এ অলরাউন্ডার, ‘অনেক বছর ধরে খেলবো, স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে খেলবো। অনেক দূর যাব। বাংলাদেশের হয়ে খেলবো। বিগ ব্যাশ খেলার খুব ইচ্ছা। বাইরের দেশে খেলতে যাবো। সবচেয়ে বড় ইচ্ছা ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা। সামনের বছর বাছাইপর্ব আছে। আমরা চাই নিজেদেরকে তুলে ধরতে। সেরা আটে উঠতে যাতে আমরা বিশ্বকাপটা খেলতে পারি। বিশ্বকাপ খেলতে পারলে বাংলাদেশ অনেক উপরে যাবে। বিশ্বকাপ না খেলতে পারলে আসলে এভাবেই চলতে থাকবে নারী ক্রিকেট। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
এসকে/এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।