ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

‘সব কিছুর অভিজ্ঞতাই নিয়ে এসেছি’

সাজ্জাদ খান, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
‘সব কিছুর অভিজ্ঞতাই নিয়ে এসেছি’ মেহেদি মারুফ/ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে নজর কাড়েন ঢাকা ডায়নামাইটসের ওপেনার মেহেদি মারুফ। শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পের জন্য অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে তাকে উড়িয়ে নেওয়া হয় ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে।

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে নজর কাড়েন ঢাকা ডায়নামাইটসের ওপেনার মেহেদি মারুফ। শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পের জন্য অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে তাকে উড়িয়ে নেওয়া হয় ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে দুই সপ্তাহ কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন এ ক্রিকেটার। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) শুরু হতে যাওয়া জাতীয় লিগের পঞ্চম রাউন্ড খেলবেন ঢাকা মেট্রোর এই ক্রিকেটার। বিপিএলের পারফরম্যান্স, জাতীয় দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাম্পের অভিজ্ঞতার ছায়া ধরে রাখতে চান লংগার ভার্সন ক্রিকেটেও।

বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফদের অধীনে অনুশীলন করতে পেরে নতুন উপলব্ধি হয়েছে মারুফের। বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে মারুফের ক্যারিয়ারে নতুন উপলব্ধির কথা। পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাতকারটি প্রশ্নোত্তর আকারে প্রকাশ করা হলো:

বাংলানিউজ: বিপিএলে ভালো করার আত্মবিশ্বাস কী এখনও কাজ করছে?

মেহেদি মারুফ: সত্যি বলতে, আত্মবিশ্বাসটা এখনও অনেক কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাটে বল লাগলে আত্মবিশ্বাস তৈরী হয়। সেটা লংগার ভার্সন হোক আর টি-টোয়েন্টি হোক। আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামার ওই অবস্থাটা এখন আছে। দেখা যাক...বাকিটা। ফোকাসটায় একটু পরিবর্তন আনতে হবে। টি-টোয়েন্টিতে সময় নেওয়া যায় না। পরিবেশটা অন্যরকম থাকে। জাতীয় লিগে নিজেকে সময় দেওয়ার জায়গা থাকে। পরিবেশটাও ভিন্ন। যতটা সম্ভব মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

মেহেদি মারুফ/ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাংলানিউজ: অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দলের সাথে দুই সপ্তাহ কাটালেন। কতটা অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরলেন?

মেহেদি মারুফ: যাওয়ার আগে অনেক এক্সাইটেড ছিলাম। ন্যাশনাল টিম, ন্যাশনাল টিমের কোচ, ন্যাশনাল টিমের পরিবেশ, ড্রেসিংরুম-সব কিছুর অভিজ্ঞতাই নিয়ে এসেছি। সব কিছু থেকেই ইতিবাচক কিছু নিয়ে এসেছি। আমার সাথে সব কিছু ইতিবাচক ঘটেছে। ওই ব্যাপারটাই ধরে রাখবো যে, ওখানকার স্ট্যান্ডার্ডটা মেইন্টেইন করা। ওই স্ট্যান্ডার্ডের মানসিকতা ধরে রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে এসেছি। ফিল্ডিং কোচ, ব্যাটিং কোচ ও হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সাথে ব্যাটিং-ফিল্ডিং নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।  

বাংলানিউজ: ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতিফলন কী জাতীয় লিগে দেখা যাবে?

মেহেদি মারুফ: ওখান থেকে আসার পর আমি ওগুলো নিয়েই শুধু ভাবছি। আমার প্রস্তুতি, আমার আত্মবিশ্বাস, ব্যবহার, ম্যাচের ভেতরে ব্যবহার, ম্যাচের বাইরের ব্যবহার, চিন্তা-ভাবনা ওই পর্যায়েই রাখছি। ভালো লাগছে। একেবারে ভিন্ন কিছু না। তবে ওই পর্যায়ের চিন্তা-ভাবনাগুলো বা প্রস্তুতি আসলেই স্পেশাল। আমার মধ্যে ওগুলো কাজ করছে। পজিটিভ অনেক কিছু নিয়ে এসেছি। আমার মনে হয় আমার ব্যাটিং ও মানসিকতায় অনেক  উন্নতি দেখা যাবে।

বাংলানিউজ: আপনিসহ ক্যাম্পে ২৩ জন ক্রিকেটার ছিল। কেমন মজা হলো?

মেহেদি মারুফ: অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা ছিল। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড দুই দেশেই গিয়েছি। কোচের অধীনে অনুশীলন করা, আমরা বিচে ঘুরতে গিয়েছি, ড্রেসিংরুমে অনেক ফান করেছি, প্র্যাকটিস ম্যাচ ছিল দুইটা। ওদের কন্ডিশনে খেলা। বৃষ্টি পড়ছে তার মধ্যে খেলেছি, বৃষ্টির মধ্যে প্র্যাকটিস করেছি। ২৩ জন প্লেয়ার একটা পরিবারের মতো করে থাকা। এরকম বড় ক্যাম্প এত প্লেয়ার নিয়ে ট্যুর হয়তো এর আগে কখনো হয়নি। সবকিছু মিলে অনেক উপভোগ করেছি। আমার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সেরা ট্যুর এটাই।

বাংলানিউজ: বিপিএলে আপনার দুর্দান্ত ফিল্ডিং দেখেছি। ক্যাম্পে আপনার ফিল্ডিং অনুশীলন কেমন চলেছে?

মেহেদি মারুফ: আমি ওখানে সবচেয়ে বেশি ফিল্ডিংটাই উপভোগ করেছি। কারণ, জাতীয় দলের কোচ রিচার্ড হ্যালসেল আমাকে খুব পছন্দ করেছে। আমাকে নিয়ে অনেক কাজও করেছে। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং, থ্রোয়িং, ডাইভিং নিয়ে। আমাকে ভালো ভালো অনেক মন্তব্য করেছে। কিছু কিছু টেকনিক আছে যেগুলো আমি ওখান থেকে শিখেছি এবং অ্যাপ্লাই করেছি। কিছু কিছু অ্যাডভান্টেজ আছে। সত্যি কথা বলতে আমি ফিল্ডিংয়ে অনেক শিখেছি এবং উপভোগ করেছি।

বাংলানিউজ: নিউজিল্যান্ড ছাড়ার সময় কোচ আপনাকে বিশেষ কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা?

মেহেদি মারুফ: আমার টেকনিক্যাল কোনো কিছুর পরিবর্তন করতে বলেনি। আমরা কিছু ছোট ছোট ভুল মানসিকতা নিয়ে চলি। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে কি কি চিন্তা করি, কমানোর জন্য কি কি ভুল চিন্তা করি ওগুলো কিছু আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে। ওগুলো নিয়ে কাজ করতে বলেছে। বলেছে যে আমি যদি এভাবে কন্টিনিউ করতে থাকি অবশ্যই পরবর্তী সিরিজগুলোতে আমার সুযোগ আসবে।

প্র্যাকটিসের ফাঁকে টিমমেটের সঙ্গে মেহেদি মারুফ/ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলানিউজ: জাতীয় দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ক্যাম্পে আপনার সবচেয়ে বড় উপলব্ধি কী?

মেহেদি মারুফ: বিপিএল থেকে আমার বড় বড় প্লেয়ারদের সাথে খেলার অভিজ্ঞতা। মাহেলা, বোপারা, ব্রাভো, রাসেল, সাঙ্গাকারা কেউ কখনো টেকনিক নিয়ে কিছু বলে না। তখন আমি চিন্তা করলাম  ছোটবেলা থেকে যেটা চলে আসে ওটাই আসল। বুঝতে পারলাম সহজাত জিনিসটা (টেকনিক) নিয়ে কেউ কথা বলছে না, বলেছে মানসিকতা নিয়ে। সাঙ্গাকারা সবসময় মানসিকতা নিয়ে বলতো। পরিকল্পনা নিয়ে বলতো, প্রস্তুতি নিয়ে বলতো। হাথুরুসিংহে সবসময় মানসিকতা নিয়ে বলে, ক্রিকেট জ্ঞান নিয়ে বলে। টেকনিক নিয়ে কিছুই বলে না। এবার আমি বুঝতে পারলাম এই লেভেলে মানসিকতা দিয়ে পার হতে হবে। টেকনিক যেভাবে গড়ে উঠেছে সেভাবেই থাকবে। ওয়ার্নার ওয়ার্নারের মতো খেলে, স্মিথ স্মিথের মতো খেলে, মুশফিক মুশফিকের মতো খেলে। টেকনিক নিয়ে যদি এত কথাই হতো তাহলে সবাই সবাইকে কপি করা শুরু করতো। সফল ক্রিকেটার হতে হলে মানসিকভাবে এগিয়ে যেতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা মন থেকেই করতে হবে। এটাই বড় উপলব্ধি।

বাংলানিউজ: মানসিকতার ব্যাপার নিয়ে আগে কেউ কখনো এভাবে বলেনি?

মেহেদি মারুফ: সত্যি কথা বলতে ক্যাম্পে যে আকাশ-পাতাল ডিফারেন্স ছিল তা না। আমার কোচ ফাহিম (নাজমুল আবেদিন) স্যার। আমি যখনই কোনো সমস্যায় পড়ি স্যারের কাছে যাই। ওনি আমাকে মানসিকভাবে অনেক হেল্প করে। ওনিও আমাকে বলে। তখন থেকেই মানসিকভাবে আমার শক্ত হওয়া শুরু। বিপিএল থেকে আরও বেশি। বাইরে বসে থেকেও যে মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া যায়, টিভিতে খেলা দেখেও যে মানসিকভাবে অনেক কিছু শেখা যায়-এগুলো আমি বিপিএল থেকে শেখা শুরু করেছি।

বাংলানিউজ: এবারের জাতীয় লিগ ঘাসের সবুজ উইকেটে হচ্ছে। ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জ থাকছে। ওপেনার হিসেবে আপনার জন্যও তো চ্যালেঞ্জ?

মেহেদি মারুফ: যখন আমি শুনলাম এরকম উইকেট তখন থেকেই আমি খেলতে মুখিয়ে আছি। এরকম উইকেটে রান করতে পারার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। ফ্ল্যাট উইকেটে সেঞ্চুরি করলে যে আনন্দ পাওয়া যায় ঘাসের উইকেটে ৫০ বা ৭০ করলে ওই আনন্দটা পাওয়া যায়। এটার উপলব্ধিটা অনেক বেটার। যেহেতু বাইরের দেশে আমাদের অনেক সিরিজ আছে সে হিসেবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য ভালো হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা আছে তাদের জন্যও ভালো হবে। এমন উইকেটে যদি রান করা যায় তাহলে আমরা যারা পাইপলাইনে আছি তাদের জন্য ভালো হবে। কারণ, আমরা ফ্ল্যাট উইকেটে খেলে রেডি হলাম, ন্যাশনাল টিম নিউজিল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়াতে গেলে ওই লেভেলে আমরা দলকে সাপোর্ট দিতে পারবো না। আমি এমন চ্যালেঞ্জিং উইকেটে খেলার জন্য অপেক্ষা করছি। স্পোর্টিং উইকেটে খেলার মজাই অন্যরকম।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এসকে/এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।