মঙ্গলবার (৭ মার্চ) গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন লঙ্কান দলপতি রঙ্গনা হেরাথ। প্রথম দিন শেষে ৮৮ ওভার ব্যাট করে স্বাগতিকরা ৪ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৩২১ রান।
প্রথম সেশনে ২৪ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ৬১ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় লক্ষানরা। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে উপুল থারাঙ্গার (৪) স্ট্যাম্প ভেঙে ব্রেকথ্রু এনে দেন পেসার শুভাশিস। পরের বলেই লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েন কুশল মেন্ডিস। কিন্তু, দুর্ভাগ্য! রিভিউতে পায়ের ‘নো’ বল ধরা পড়ায় আউটের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন আম্পায়ার।
দলীয় ১৫ রানে থারাঙ্গার বিদায়ে মেন্ডিসকে নিয়ে জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন ওপেনার করুনারাত্নে। ২৩তম ওভারে দু’জনের ৪৫ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন উঠতি তারকা স্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন করুনারাত্নে (৩০)।
দিনেশ চান্দিমালকে (৫৪ বলে ৫) ফিরিয়ে উইকেট উদযাপনে মাতেন দীর্ঘদিন পর টেস্টে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমান। ৯২ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ৪০তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ধরা পড়েন প্রস্তুতি ম্যাচে ভোগানো চান্দিমাল (৫৪ বলে ৫)। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে দু’দিনের (২-৩ মার্চ) একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটিতে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ১৯০ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন চান্দিমাল।
লঙ্কানদের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হয়ে ফেরেন গুনারাত্নে। ব্যক্তিগত ৮৫ রানে তাসকিনের বলে বোল্ড হন তিনি। দলীয় ২৮৮ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। এরপর আর কোনো উইকেট হারায়নি দলটি। ৮৮ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রানে দিন পার করে লঙ্কানরা। ১৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন মেন্ডিস। তার ২৪২ বলের ইনিংসটি ছিল ১৮টি চার আর দুটি ছক্কায়। ১৪ রানে অপরাজিত রয়েছেন নিরোশান ডিকওয়েলা।
টাইগারদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন শুভাশিস, মেহেদি, তাসকিন আর মোস্তাফিজ।
চার বছর আগে গলে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ড্রয়ের কীর্তি গড়েছিল টিম বাংলাদেশ। একই গ্রাউন্ডে টাইগারদের সেই সুখস্মৃতি পুনরাবৃত্তির চ্যালেঞ্জ! বাংলাদেশের এটি ৯৯তম টেস্ট। কলম্বোর পি সারা ওভালে শততম টেস্টের (১৫ মার্চ) মাইলফলক স্পর্শ করবে তারা। এ সিরিজে শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন অধিনায়ক মুশফিক। নিজের ইচ্ছাতেই উইকেটকিপিং করছেন না ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব লিটন দাসের কাঁধে। এদিকে, ২০১৫ সালের জুলাই-আগস্টের পর প্রথম টেস্ট খেলছেন ‘কাটার মাস্টার’ মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন পেসার নিয়ে একাদশ গড়া হয়েছে। স্পিনার তাইজুল ইসলামকে রাখা হয়নি। তার পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন শুভাশিস রায়। অন্যদিকে, লিটন থাকায় জায়গা হয়নি সাব্বির রহমানের।
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে গলে একটি টেস্টই খেলেছে টিম বাংলাদেশ। কখনো ওয়ানডে বা টি-২০ ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। ২০১৩ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত আট সেঞ্চুরির সেই স্মরণীয় ম্যাচটি দাপটের সঙ্গেই ড্র করে মাঠ ছেড়েছিল টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ৫৭০ রানের জবাবে স্কোরবোর্ডে ৬৩৮ রান তোলে সফরকারীরা। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি উদযাপন করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ১৯০ রানের অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন মোহাম্মদ আশরাফুল। মুশফিক-আশরাফুলের পর সেঞ্চুরি হাঁকান নাসির হোসেন।
তাইতো বলাই যায়, গলে অপরাজেয় বাংলাদেশ। সময়ের সঙ্গে যারা এখন আরো বেশি পরিণত। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়, ভারতে গিয়ে একমাত্র টেস্টে লড়াকু পারফরম্যান্স প্রদর্শন সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরেও গল টেস্ট দিয়ে দুর্দান্ত শুরুর প্রত্যাশা বাংলাদেশের অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীদের। পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। সাদা পোশাকে এখন পর্যন্ত ১৬ বারের দেখায় ১৪ ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লঙ্কানরা। কিন্তু, সবশেষ দু’টি সিরিজ ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চার ম্যাচের মধ্যে দু’টি ড্রতে নিষ্পত্তি হয়। ২০১৪ সালে চিটাগংয়ে অনুষ্ঠিত দু’দলের সবশেষ ম্যাচটিতে জয় পায়নি কেউই।
ঘরের মাটিতে সবশেষ পাঁচ ম্যাচেই জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবে অস্ট্রেলিয়া (তিন ম্যাচ)। সে যাই হোক, সব মিলিয়ে নিজেদের শেষ পাঁচ টেস্টের মধ্যে তিনটিতেই হেরে যায় লঙ্কানরা। জয় দু’টিতে। বাংলাদেশ চারটি হারের বিপরীতে এক ম্যাচে জয় পায়।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শুভাশিস রায়।
শ্রীলঙ্কা একাদশ: দিমুথ করুনারাত্নে, উপুল থারাঙ্গা, কুশল মেন্ডিস, দিনেশ চান্দিমাল, নিরোশান ডিকওয়েলা (উইকেটরক্ষক), অসিলা গুনারাত্নে, দিলরুয়ান পেরেরা, রঙ্গনা হেরাথ (অধিনায়ক), সুরাঙ্গা লাকমল, লাহিরু কুমারা, লক্ষণ সান্দাকান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, ৭ মার্চ, ২০১৭
এমআরপি