সিরিজ নিশ্চিত করতে লাল-সবুজদের একাদশে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আগের ম্যাচের স্কোয়াডটি রেখে মাঠে নামে টাইগাররা।
কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগারদের দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মাঠে নামে দুই দল।
টাইগারদের বোলিং শুরু করেন মাশরাফি। তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন মোস্তাফিজ। লঙ্কানদের ইনিংস শুরু করেন উপুল থারাঙ্গা এবং দানুসকা গুনাথিলাকা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ম্যাশের বলে ক্যাচ তুলে দেন গুনাথিলাকা। বল করে নিজেই ক্যাচটি মুঠোবন্দি করতে চেয়েছিলেন টাইগার দলপতি। হাত ফসকে মিডঅনে থাকা তামিমের দিকে বল চলে যায়। তামিমও বেশ খানিকটা দৌড়ে আসলেও ক্যাচটি নিতে পারেননি। চতুর্থ ওভারে থারাঙ্গাকে এলবির ফাঁদে ফেলে আবেদন করেন মোস্তাফিজ। তাতে আম্পায়ার কোনো সাড়া দেননি।
ইনিংসের ১১তম ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। টাইগারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আগের দুই ওভারে ১৬ রান দিলেও মাশরাফি মিরাজের ওপর আস্থা হারাননি। এই অফস্পিনার বিদায় করেন ওপেনার দানুসকা গুনাথিলাকাকে। ৩৮ বল মোকাবেলা করে তিনটি চার আর একটি ছক্কায় ব্যক্তিগত ৩৪ রান করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। মিরাজ পান মেডেন উইকেট।
অসাধারণ এক ডেলিভারিতে এরপর লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন টাইগারদের গতির ঝড় তোলা তাসকিন আহমেদ। ওপেনার উপুল থারাঙ্গাকে সরাসরি বোল্ড করেন তাসকিন। সম্পূর্ণ পরাস্ত হয়ে বিদায়ের আগে থারাঙ্গার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে তাসকিনের বল উড়িয়ে দেয় স্ট্যাম্পস। ৩৫ বলে পাঁচটি চার আর একটি ছক্কায় লঙ্কান দলপতি থারাঙ্গা তার ইনিংসটি সাজান। দলীয় ৮৭ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
দলীয় ২৬তম ওভারে আলস্যভঙ্গিতে রান নিতে গিয়ে রানআউট হন দিনেশ চান্দিমাল। ব্যক্তিগত ২১ রানে ফেরেন তিনি। ডিপপয়েন্ট থেকে তাসকিনের ফেরত পাঠানো বলে স্ট্যাম্পের বেলস তুলে দেন মুশফিক। দলীয় ১৩৬ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। চান্দিমাল-মেন্ডিস মিলে ৪৯ রান যোগ করেন। এরপর জুটি বড় করতে পারেননি মেন্ডিস আর মিলিন্দা সিরিবর্ধানে। উইকেটে থেকে ব্যক্তিগত ১২ রানে ফেরেন সিরিবর্ধানে। দুই ব্যাটসম্যানের বোঝাপড়ার ভুলের সুযোগ নিয়ে সিরিবর্ধানেকে রানআউট করে ফেরান মুশফিক। দলীয় ১৬১ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
ইনিংসের ৩৭তম ওভারে মোস্তাফিজ ফেরান কুশল মেন্ডিসকে। ব্যক্তিগত ৫৪ রানে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন ৭৬ বলে চারটি চারের সাহায্যে ইনিংস সাজানো মেন্ডিস। দলীয় ১৯৪ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। ষষ্ঠ উইকেটের দেখা পেতে টাইগারদের অপেক্ষা করতে হয় ইনিংস ৪৪তম ওভার পর্যন্ত। দলপতি মাশরাফির দারুণ এক ডেলিভারিতে তুলে মারার খেসারত দেন আসেলা গুনারত্নে। ব্যক্তিগত ৩৪ রানে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের তালুবন্দি হন তিনি। দলীয় ২১৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
ইনিংসের ৪৫তম ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন এবং সেকুজে প্রসন্নকে। মাহমুদুল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রসন্ন (১)। দলীয় ২৩০ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। থিসারা পেরেরা ব্যাট করেন বিগ শটের ওপর ভিত্তি করে। ৪০ বলে ৫২ রান করতে তিনি ৪টি চারের পাশাপাশি ১টি ছক্কা হাঁকান। শেষ দিকে তাকে সঙ্গ দেন দিলরুয়ান পেরেরা। মাশরাফির করা শেষ ওভারে বিদায় নেন দিলরুয়ান। ১৫ রানে তামিমের হাতে ধরা পড়েন। একই ওভারের পঞ্চম বলে মাশরাফির অফসাইডের বলে লেগে খোঁচা দিতে গিয়ে তাসকিনের সহজ ক্যাচে ফেরেন থিসারা পেরেরা।
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের শততম টেস্টে জয়ের পর (১-১ সমতায় টেস্ট সিরিজ শেষ হয়) রাঙ্গিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টাইগারদের ৯০ রানের দাপুটে জয়ের পর আশা করা হচ্ছিল দ্বিতীয় ম্যাচেও সেই দাপট অব্যাহত রেখে ডাম্বুলা দিয়েই লঙ্কাবধের মহাকাব্য লিখবে বাংলাদেশ। কিন্তু, সেটি হয়নি ক্রিকেটে সব সময়ের অনাহুত অতিথি ‘বৃষ্টি’ বাধায়। বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় তৃতীয় ও শেষ ওডিআই এখন সিরিজ নির্ধারণী হয়ে দাঁড়িয়েছে। জিতলে টাইগাররা ২-০ তে সিরিজ নিজেদের করে নেবে। আর হারলে লঙ্কানরা ভাগ বসাবে সিরিজে (১-১)।
স্বাগতিকদের চেয়ে সফরকারীরা এগিয়ে থাকছে শক্তিমত্তা ও অভিজ্ঞতায়, পাশাপাশি সাথে থাকছে টইটুম্বুর আত্মবিশ্বাসও। দেশের মাটিতে চেনা কন্ডিশনে ধারাবাহিকভাবে প্রতিপক্ষদের হারিয়ে আসছে বাংলাদেশ দল। সবশেষ সাতটি হোম সিরিজের ছয়টিতেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। সময় এবার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও সাফল্য আদায় করা।
বাংলাদেশ একাদশ:
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন, মুশফিকুর রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ।
শ্রীলঙ্কা একাদশ:
উপুল থারাঙ্গা (অধিনায়ক), দিনেশ চান্দিমাল, আসেলা গুনারত্নে, দানুসকা গুনাথিলাকা, নুয়ান কুলাসেকারার, সুরাঙ্গা লাকমল, কুশল মেন্ডিস, দিলরুয়ান পেরেরা, থিসারা পেরেরা, সেকুজে প্রসন্ন, মিলিন্দা সিরিবর্ধানে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ০১ এপ্রিল ২০১৭
এমআরপি