এমনও হয়েছে, যখন ইয়ার ফাইনাল বা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ঠিক তখনই কোন টুর্নামেন্ট বা সিরিজ থাকায় সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া হয়নি। যাতে করে হয়েছে ইয়ার ড্রপ, এভাবে কেটে গেছে বছরের পর বছর।
ফলে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি হলেও উচ্চ শিক্ষা অর্জনের ব্যাপরটি থেকে গেছে অধরা। এমনসব ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের জন্যই সহজে উচ্চ শিক্ষার পথ প্রশস্ত করেছে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত, বিএসি (ব্যাক) ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি সেন্টারের স্পোর্টস স্টাডিজ বিভাগ।
এখানে ‘সহজে’ মানে পড়াশোনা না করে নয়। সহজ বোঝানো হয়েছে এই অর্থে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে ন্যূনতম ৭০ ভাগ উপস্থিতির কোন বাধ্যবাধকতা নেই। প্লেয়ারদের লিগ, সিরিজ কিংবা টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে উদ্বিগ্ন হওয়ারও কোন আবশ্যকতা নেই। পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে নিজের সুবিধা মতো সময় বের করে মডেল টেস্টে অংশ নিয়েও লাভ করতে পারছেন উচ্চ শিক্ষা।
দেশের অন্য আট দশটি কলেজ, প্রাইভেট কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখানে ইয়ার ড্রপের কোন বিষয় নেই। ব্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়ে যে কোনো বয়সের পেশাদার এমনকি অপেশাদার ক্রীড়া ব্যক্তিত্বও উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগটি লুফে নিতে পারেন।
এখানকার পড়াশোনার মানও পুরোটাই আন্তর্জাতিক মানের। ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক এডেক্সেল ইউকে ও ডার্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশনে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। যোগ্যতা অনুযায়ী, স্পোর্টসে এখানে ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল ও গ্রাজুয়েশন প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ আছে। ‘ও’ লেভেলে পড়ানো হয় ৭টি, ‘এ’ লেভেলে ১৩টি এবং ছয় বছরের গ্রাজুয়েশনে মোট ২১টি বিষয় পড়ানো হয়। যার মধ্যে আছে; স্পোর্টস কোচিং, ট্রেনিং, পুষ্টি বিজ্ঞান, স্পোর্টস সাইকোজলি, স্পোর্টস বায়োমেকানিকস, স্পোর্টস ফিজিওলজি, মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট ও স্পোর্টস মেডিসিনসহ আরও একাধিক বিষয়সমূহ।
বিএসি’র শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপকতা ছড়িয়ে আছে দেশের বাইরেও। এখানকার ছাত্র ছাত্ররীরা যে কেউই দেশের বাইরে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট টান্সফার করতে পারছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কনসাল্টেন্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
বিএসিতে স্পোর্টস স্টাডিজ বিভাগটি একেবারেই নতুন। তাই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আপাতত কোন বিদেশি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। যারা আছেন তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং দেশের ক্রীড়ার সাবেক সফল ব্যক্তিবর্গ। আছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসক ডাক্তার দেবাশীষ চৌধুরীও।
এমন ব্যতিক্রমধর্মী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পেছনে আপনাদের লক্ষ্য হিসেবে কী কাজ করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এদেশে যারা পেশাদার ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব তারা খেলার জন্য পড়াশোনা শেষ করতে পারে না। যখন খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হয়ে যায় তখন লেখা পড়াটা না হওয়ার কারণে অন্য কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। তাদের জন্যই মূলত আমরা এমন পদক্ষেপ নিয়েছি। খেলোয়াড়রা খেলার পাশাপাশি পরাশোনা করতে পারবে। এতে করে ওদের খেলোয়াড়ী জীবন শেষের সাথে সাথে স্নাতক ডিগ্রি লাভও হয়ে যাবে। ’
দেশের ক্রীড়াবিদদের উচ্চ শিক্ষা লাভে এটা অনেক বড় একটা সুযোগ কী না? এমন প্রশ্নে চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর ভাষ্য, ‘দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন হাজিরার মতো ধরাবাধা বিষয় আছে ৭০ ভাগ ক্লাসে উপস্থিতি থাকতে হবে, সেটা এখানে নেই, কাজেই ওদের জন্য গ্রাজুয়েট হওয়ার দারুণ একটি সুযোগ।
আর এখান থেকে পড়াশোনা শেষে যে কেউই স্পোর্টস ট্রেনার, স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট, স্পোর্টস ফ্যাসিলিটিস ম্যানেজমেন্ট, স্পোর্টস ম্যানেজার, স্পোর্টস এজেন্ট, কোচ, স্ট্রেন্থ এ্যান্ড কন্ডিশনিং ট্রেনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন সবশেষে বলেন, ‘শুধুই ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা নন, কোচ এমনকি সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরাও বিএসি থেকে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টে স্নাতোক ডিগ্রি লাভের সুযোগ পাচ্ছেন।
আর প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র হিসেবে ইতোমধ্যেই ক্লাস করা শুরু দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিজ্ঞ স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক, পেসার তাসকিন আহমেদ, অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ, অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান ও নাজমুল হাসান শান্তসহ দেশের ক্রীড়ার বর্তমান ও সাবেক উজ্জ্বল সব তারকারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
এইচএল/এমআরএম