২৯ বছরে পা দেওয়া কোহলির জন্মদিনে ভারতীয় মিডিয়া সরব। দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম কোহলির শৈশবের কোচ রাজকুমার শর্মার সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
একেবারে ছোটবেলা থেকে যাকে হাতে ধরে তৈরি করেছেন রাজকুমার আজ তিনিই ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, অনুভূতিটা ঠিক কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজকুমার জানান, ‘অসাধারণ। গর্ব হয় কোহলি জন্য। কোথা থেকে নিজেকে সে কোথায় নিয়ে গিয়েছে। সে ছোটবেলা থেকেই খেলা নিয়ে আবেগপ্রবণ। যেমন সব ম্যাচ শেষে সে নিজে সেই ম্যাচের কাটাছেঁড়া করে। খারাপ হলে বোঝার চেষ্টা করে ভুলটা কোথায় হলো। কোহলি সব সময়ই নিজের ভুল থেকে শেখে। সে ছোটোবেলা থেকেই সব সময় ঝুঁকি নিতে ভালবাসে। যদি খুব চাপে থাকে তাকে দেখে কেউ বুঝবে না। সে মনে মনে প্রস্তুতি নেবে দলকে চাপমুক্ত করে কাজটা হাসিল করার। সব সময় প্রস্তুত থাকে কোহলি। ’
অধিনায়ক বিরাটকে কোথায় রাখবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজকুমার জানান, ‘কোহলি ভালো ক্যাপ্টেন। কারণ কখনও সে ভয় পায় না আর সব সময় চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। সারাক্ষণ মাথায় পরিকল্পনা ঘোরে আর সেটা সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়িত করে ফেলতে পারে সে। আমার মনে হয় তার একটাই পরিবর্তন দরকার আর সেটা হলো-প্রত্যাশা। সতীর্থদের থেকে তার প্রচুর প্রত্যাশা। আসলে কোহলি হারতে চায় না।
বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি যে বাকিদের থেকে আলাদা প্রতিভা এটা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন রাজকুমার, ‘আমার কাছে কোহলি এসেছিল ৯ বছর বয়সে। ১৫-২০ দিন অনুশীলন করার পরই বুঝতে পেরেছিলাম সে কিন্তু বাকিদের থেকে আলাদা। ‘গড গিফটেড’ প্রতিভা ছিল। সেভাবে তাকে কিছু শেখাতে হত না। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ছিল। সঙ্গে খাটতে কোনো ক্লান্তি ছিল না। যখন যা বলা হত তাই করত। ছোটবেলা থেকেই খুব পরিণত। ’
কোহলির ছোটবেলা থেকে এতটা পরিণত হয়ে ওঠার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। রাজকুমার সেই তথ্য জানালেন এভাবে, ‘অবশ্যই কারণ আছে। ১৭-১৮ বছরের একটি ছেলের মাথার উপর থেকে যখন বাবার হাত উঠে যায় তখন সে হঠাৎ করেই অনেকটা বড় হয়ে যায়। দায়িত্ববোধ বেড়ে যায়। সেটাই হয়েছিল কোহলির। আমি চাই এভাবেই খেলে যাক কোহলি। আরও অনেকদিন খেলুক। দেশকে সাফল্য এনে দিক। নিজের সেরাটা ধরে রাখুক। আর দেশকে ম্যাচ জেতাক। সব ফরমেটে দেশকে এক নম্বর জায়গায় নিয়ে যাক কোহলি। ’
২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর কোহলির বাবা প্রেম কোহলি না ফেরার দেশে চলে যান। তখনো অবশ্য ভারতের মূল দলের আশপাশেও তিনি নেই, দিল্লির হাজারো ক্রিকেট-পাগল তরুণের ভিড়ে স্বপ্ন নিয়ে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। মাথার ওপর বটবৃক্ষ হয়ে থাকা বাবা তাকে প্রথম ব্যাট ধরা শিখিয়েছিলেন। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা গড়ে দেওয়ার কাজটিও তিনিই করেছিলেন। কোহলির আজকের বিরাট হয়ে ওঠার প্রেরণা ছিলেন তিনি। সেই প্রেরণা, সেই ভরসা যখন চলে গেলেন, সেটি মানসিকভাবে বেশ বড় ধাক্কা দিয়ে যায় কোহলির মনে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে তখনকার ১৮ পূর্ণ না হওয়া কোহলি আরও বড় প্রতিজ্ঞাই করে বসেন। এরপরই শুরু হয়েছিল কোহলির স্বপ্নযাত্রা। ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক হয়ে ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা, ধীরে ধীরে ভারতীয় দলে নিয়মিত হওয়া, আজকের ‘শচীন টেন্ডুলকারের উত্তরসূরি’ হয়ে যাওয়া।
সবই ওই ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৬ সালে ১৮ বছর বয়সী তরুণের নতুন করে নিজেকে চেনানোর ফল। ‘১৮’ জার্সিটাকে পিঠে ঠিকই বয়ে নিয়ে চলছেন ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ৫ নভেম্বর ২০১৭
এমআরপি