সদ্যই বিদায় নেয়া ঈদ উল ফিতরের ছুটিতে প্রায় প্রতিটি টাইগার সদস্যই যখন নিজ নিজ শহরে পরিবারের সাথে ঈদ কাটিয়েছেন তখন তিনি অনুশীলনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন মিরপুর হোম অব ক্রিকেটের নেটে। অনুশীলনে কোথায় ভুল হচ্ছে দেখাতে মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির মাঠে আসতে অনুরোধ করেছেন প্রিয় কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে।
প্রিয় শিষ্যের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারেননি সালাহউদ্দিনও। ঈদের অবসর রেখে ছুটে এসেছেন। নিজ চোখে তামিমের ব্যাটিং পর্যবেক্ষণ করে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। সেই ভুল শুধরে উঠে ব্যাটে জড় তুলতে এখন চলছে তার নিরলস প্রচেষ্টা।
সেটা অন্য কোনো কারণে নয়। আসছে মাসের প্রথম সপ্তাহেই স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে শুরু হচ্ছে তাদের পূর্নাঙ্গ সিরিজ। সেখানে নিজেকে স্বরূপে তুলে ধরতেই তার এই বাড়তি অনুশীলন।
সোমবার (১৮ জুন) সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলোচনাকালে একথাই জানালেন টাইগারদের এই নন্দিত ওপেনার। জানিয়েছেন আসন্ন এই সিরিজে ক্যারিবীয়দের উইকেটের ধরন নিয়ে। রহস্য উন্মোচন করেছেন আফগানিস্তান সিরিজের শেষ দুই টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক না নেয়ারও।
বাংলানউজের পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।
শেষ কবে আপনি চিটাগংয়ে ঈদ করেননি বলতে পারবেন?
তামিম: মনে নেই। দেশে থাকলে প্রতিবারই ওখানে ঈদ করা হয়। শেষবার আমাদের খেলা ছিলো চিটাগংয়ে। সেখানেই ঈদ করেছি। এবার প্রথম।
এই সিরিজটার জন্য বেশি চাপ নিচ্ছেন। সব সময়ই নেন। এবার একটু বেশিই ফোকাসড। আপনার কী মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সম্প্রতি ঘরের মাঠে সিরিজ জেতার পরে মানষিকভাবে বেশ এগিয়ে?
তামিম: অবশ্যই। যে কোনো দল যখন জিততে থাকে তখন ওরা এমনিতেই খুব আত্মবিশ্বাসী থাকে। ওদের খেলা দেখে আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে আমি যতটুকু প্রস্তুত ছিলাম ততটুকুতে হবে না। আমাকে আরেকটু বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে। একারণেই এই অতিরিক্ত অনুশীলন করা। আমি সবসময় একটা জিনিস বলেছি যে রান করবো কী না এর নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবো না। কিন্তু তা করার জন্য যদি আমার প্রস্তুতিটা শতভাগ ঠিক থাকে তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমি প্রস্তুত হয়েও ওখানে গিয়ে যদি ব্যর্থ হই তাহলে অন্তত বলতে পারবো আমি আমার সেরাটি দিয়ে চেষ্টা করেছি, তারপরেও হয়নি। কিন্তু ভাল খেলার জন্য ভালভাবে প্রস্তুত হওয়া খুব প্রয়োজন। একারণেই আলাদাভাবে অনুশীলন করা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে কী ধরণের উইকেট প্রত্যাশা করছেন?
তামিম: খুবই সহজ এটা। আমার কাছে মনে হয় প্রচণ্ড ঘাসের উইকেট হবে ওখানে। শেষ দুটি টেস্ট ম্যাচে আমি তাই দেখেছি। ওই দুটি ম্যাচেও ঘাস ছিলো। ওরা চারটা পেসার খেলায়। তো, আমি নিশ্চিত স্পোর্টিং উইকেট হওয়ার সুযোগ কম। বোলারদের সহায়ক হবে। আশা করি আমাদের বোলাররা এর সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন।
এই ধরণের ঘাষের উইকেটে আমরা খেলি না। তাই এখানে ভাল বলগুলো খেলা থেকে বল ছেড়ে দেয়াই উত্তম হবে বলে মনে করেন?
তামিম: খুব স্বাভাবিক। তবে আমার কাছে মনে হয় যেহেতু এটা ঘাসের উইকেট আমরা যদি এ ধরনের মাইন্ডসেট নিয়ে যাই যে আমাদের সার্ভাইব করতে হবে তাহলে এটা খুবই কঠিন হবে। সেখানে গিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আমাদের ভাল খেলতে হবে। মানে ভাল বল ছেড়ে দেয়া, লম্বা সময় ব্যাটিং করা, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। ইতিবাচক মাইন্ডসেট আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে। আপনি যখনই রানের সুযোগ পাবেন, আপনাকে করতে হবে। তাহলে আপনার মনটাও ফ্রেস থাকবে।
আপনার মনে হয় উইকেটে প্রচুর বাউন্সার থাকবে?
তামিম: বিদেশে আমরা যে কোনো সিরিজ খেলতে গেলেই এটা হয়। এশিয়ান দলগুলো বাদে অন্য যে কোনো দেশ আসলেই আমরা স্পিন উইকেট প্রস্তুত করি। অনুরূপ আমরা যখন যাব ওইরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এতটুকু বলতে পারি এটা প্রথমবারের মতো হচ্ছে না। সাউথ আফ্রিকায় গিয়েছি এমন হয়েছে, নিউজিল্যান্ডে আমরা গিয়েছি, ওখানেও হয়েছে। অতএব আমাদের খুব ভালভাবে প্রস্তুত হতে হবে। একটা ভাল জিনিসি যে প্রথম টেস্টের আগে আমাদের হাতে ৭-৮ দিনের সময় আছে। এই ৭-৮ দিন বা ১০ দিন খুব কাজে লাগবে।
আপনি তো অনেক দিন যাবতই ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করছেন। কোচ সালাহউদ্দিনকেও দেখলাম আপনার সাথে কথা বলতে। কোন দিকগুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা করছেন?
তামিম: আপনারা জানেন আমি আমার ব্যাটিং নিয়ে ওনার সাথে কথা বলতে খুব পছন্দ করি এবং আমি মনে করি আমি যেভাবে খেলি উনি সেটা বোঝেন। তো এক দুইটা সেশনে আমি খুশি ছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিলো আমি ভুল কিছু করতে যাচ্ছি। একারণেই ওনাকে আসতে অনুরোধ করেছিলাম, কী ভুল করছি এবং কী সঠিক করছি। এক দুটি জিনিস উনি আজকে ধরিয়ে দিয়েছেন যে এই জিনিসগুলো আমার ঠিক হচ্ছে না। সামনে যতদিন অনুশীলন আছে, ওইসব জিনিসই ফোকাস করবো।
ঈদের জন্য যে উৎসর্গটা করলেন সেটা কতটা কাজে লাগবে মনে করেন?
তামিম: আমি যেটা বললাম, উৎসর্গ করেই যদি এর নিশ্চয়তা পাওয়া যেত, যে আমি ওখানে গিয়ে ১০০ করবো বা ৫০ করবো তাহলে আমি না যে কোনো মানুষই করতো। এর কোন নিশ্চয়তা নেই। ভালভাবে প্রস্তুত হতেই আমি চিটাগং যাইনি। ৪-৫ দিনে ব্যাটিং করে নিজেকে যত প্রস্তুত করা সম্ভব আমি ওটাই করার চেষ্টা করছিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো আমি পুরোপুরি প্রস্তুত না। একারণেই এই বাড়তি অনুশীলন করা। আশা করি আমার এই অনুশীলন কাজে লাগবে।
শেষ দুই টি-টোয়েন্টিতে আপনি স্ট্রাইক নেননি। তামিম ইকবালকে মানুষ যেভাবে চেনে ঠিক সেইভাবে পাওয়া যায়নি। কেন?
তামিম: দেখেন সাধারণত আমি এরকম করি না। আমার কাছে মনে হয় আমি যদি এটা ইগোইস্টিকভাবে দেখতাম, ইগো নিয়ে চিন্তা করতাম, তাহলে আমি ঠিকই স্ট্রাইক নিতাম। আমি যে কারণে এটা করেছি, তার পুরোটাই কৌশলগত। যে কোনো দেশের যে কোনো নতুন বোলারাই হোক না কেন তাকে মোকাবেলা করার আগে আমি একটু নার্ভাস অনুভব করি, যাকে আমি কখনও খেলিনি। তো প্রথম ম্যাচে আমি প্রথম বলেই আউট হয়ে গেছি। ওই ম্যাচে যদি এক দুটো বল খেলেও আউট হতাম তাও আমার একটা ধারণা হতো যে, ঠিক আছে এই বোলার এটা করতে পারে। যেহেতু প্রথম বলেই আমি আউট হয়ে গেছি এবং সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো এবং এটাও চিন্তায় ছিলো যে আমরা পরের ম্যাচে যদি হেরে যাই ...। তখন ভাবলাম যদি আমি স্ট্রাইক না নেই, যদি আমি এক দুইটা বল দেখতে পারি যে সে কী করছে তাহলে ওকে খেলতে আমার আরও সহজ হবে। এই একটা করণের জন্যই।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ১৮ জুন, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস