ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

একজন প্রথম নায়কের জন্মদিন

মেহেরিনা কামাল মুন, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
একজন প্রথম নায়কের জন্মদিন মেহরাব হোসেন অপি। ছবি: সংগৃহীত

গল্পের পটভূমি বাংলাদেশ ক্রিকেট। এই গল্পের নায়ক মেহরাব হোসেন অপি। গল্পের শুরু ১৯৯৮ সালের ১৪ মে। এমন দিনেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে একজন অপির অভিষেক। যদিও সেদিন তার ব্যাট থেকে আসেনি মনে রাখার মতো কোনো স্কোর। কিন্তু কে জানতো সে-ই একদিন হয়ে উঠবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন প্রথম নায়ক!

বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাস যতদিন টিকে থাকবে এই মেহরাব হোসেনের নামটিও ততদিন একটি প্রথমের সঙ্গে মিশে থাকবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ১৯৭৮ সালে জন্ম নেওয়া মেহরাব।

ক্রিকেটাঙ্গনে 'অপি' নামেই বেশি পরিচিত তিনি।  

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সেঞ্চুরি করতে পারে না, এই ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১৯৯৯ সালে অপির ব্যাট থেকে আসে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার সেই ১০১ রানের ইনিংসটি আজও বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বলে এক অধ্যায়।

প্রথম সেঞ্চুরির সেই ম্যাচে মেহরাব অপি।  ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৮ সালে রঙিন পোশাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া অপি সাদা পোশাকে ডাক পান ২০০০ সালে। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে বিদায় জানালেও ঘরোয়া ক্রিকেটটা চালিয়ে গেছেন ২০০৯ পর্যন্ত। যদিও ২০১১ সালে ঢাকা মেট্রোর হয়ে দুটি ম্যাচ খেলতে মাঠে নামেন।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরির সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেট ইতিহাসে এক ভয়াবহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনারও সাক্ষী হয়ে আছেন অপি। ঘরোয়া ক্রিকেটে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলছিলেন তিনি। ব্যাটিংয়ের সময় সাইফুল্লাহ জেমের করা শর্ট বল মারার চেষ্টা করেন। কাছাকাছি ফিল্ডিংয়ে ছিলেন দিল্লির উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ও আবাহনী ক্রীড়া চক্রের ক্রিকেটার রমন লাম্বা। হেলমেটবিহীন মাথায় অপর মারা শট থেকে বল এসে লাগে তার। এ ঘটনার তিনদিন পর লাম্বা’র করুণ মৃত্যু ঘটে। এতে মানসিকভাবে বড় এক ধাক্কা লাগে অপির। কিছুদিন ক্রিকেট থেকেও দূরে থাকেন। এরপর ক্রিকেটে ফিরলেও আর তেমন ছন্দে আসতে পারেননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান অপি।

প্রথম সেঞ্চুরির দিনে এই ক্যাপ পরেই মাঠে নামেন মেহরাব হোসেন।  ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এলাম, দেখলাম, জয় করলাম সূত্র অপির জন্য বলা গেলেও টিকে থাকার সূত্রটা হয়তো অপির জানা ছিল না। নিজের দক্ষতা ও সামর্থ্যের যথাযথ প্রয়োগটা করতে পারেননি তিনি। নিজেদের ফিট রেখে যেখানে ৪০-৪২ বছরেও হরদমই অনেক ক্রিকেটার খেলে যাচ্ছেন সেখানে মাত্র ৩৬ বছরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট ছেড়ে যান অপি।  

শুধু প্রথম সেঞ্চুরি নয়। আরও এক প্রথমের সঙ্গে মিশে আছেন অপি। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। তার ব্যাট থেকেই আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্টের প্রথম রান। যদিও দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি ৬ রান করেন। কিন্তু প্রথমের সঙ্গে তার নামটাই উচ্চারিত হবে।

ভালো কিছু ইতিহাসের পাশাপাশি অপির নামের পাশে আছে খারাপও। ২০০৩ সালে তাকে ঘরোয়া ক্রিকেটে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। করপোরেট ক্রিকেট লীগে অর্থের বিনিময়ে অংশগ্রহণ করেও প্রতিপক্ষ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।    

১৯৭৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন অপি। ১৯৯৮ সালের ১৪ই মে ভারতের সাথে ওয়ানডে দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই ডানহাতি ওপেনার। ১৮ টি ওয়ানডে ও ৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন। যেখানে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৪.৯৪ গড়ে ১টি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরিতে তার রান মোট ৪৪৯। আর টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩.৩৮ গড়ে ২৪১ রান।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮

এমকেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।