সেন্ট জর্জেসে টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠায় স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। কিন্তু ক্যারিবীয়দের সেই সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করেন দুই ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও অ্যালেক্স হেলস।
চতুর্থ উইকেট অধিনায়ক এউইন মরগ্যানকে সাথে নিয়ে জুটি বাঁধেন উইকেটরক্ষক জশ বাটলার। স্কোর বোর্ডে রান তখন ১৬৫। এরপর ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। উইকেটের চারপাশে চার ছয় হাঁকিয়ে সচল রাখেন রানে চাকা। মরগ্যান ৪৪তম অর্ধ-শতক তুলে নেন। তাতে ইংল্যান্ডের স্কোর আড়াই পার হয়।
ধীরে ধীরে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকে বাটলার-মরগ্যানের ব্যাট। তাতে বড় সংগ্রহের আভাস পায় ইংল্যান্ড। অধিনায়ক মরগ্যান ব্যাট চালিয়ে রান তোলার গতি বাড়িয়ে দেন। ৪৫ বলে ১৯ অর্ধ-শতক তুলে নেন বাটলার। এরপর রীতিমতো টর্নেডো ইনিংস খেলেন বাটলার। ১৯তম অর্ধ-শতকটাকে সপ্তম ওয়ানেডে সেঞ্চুরিতে পরিণত করেন মাত্র ১৫ বলের ব্যবধানে। ৬০ বলে সেঞ্চুরি তুলের নেন বাটলার।
এরপর ৪৪তম অর্ধ-শতকটাকে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১২তম সেঞ্চুরিতে পরিণত করেন মরগ্যান। স্কোর বোর্ডে রান ততক্ষণে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়েছে। দলীয় ৩৬৯ রানে ৮৮ বলে ১০৩ রান করে কটরেলের বলে আউট হন মরগ্যান। ভাঙে ২০৪ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের শেষ কাজটুকু নিজের কাঁধে তুলে নেন জশ বাটলার। রীতিমতো ক্যারিবীয় বোলারদের পাড়ার বোলারে পরিনত করেন তিনি। চার-ছয়ে বল করতে থাকেন সীমানা পার। আর এতেই ওয়ানডেতে দলীয় এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৪টি ছয় মারার নতুন রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড। চলতি সিরিজের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ২৩টি ছয় মেরে রেকর্ডটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে ছিল। ৭৭ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রান করে ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হন বাটলার। ৫০ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাড়ায় ৬ উইকেটে ৪১৮ রান। যা ওয়ানডে ইতিহাসে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। শেষ ১০ ওভারে ১৫৪ রান তোলে ইংল্যান্ড যা ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৪১৯ রানের পাহাড়সম টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৪ রানে মধ্যে ক্যাম্পবেল ও হোপের উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর ড্যারেন ব্রাভোকে সাথে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে হাত দেন ক্রিস গেইল। রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়েই রান তুলতে থাকেন এই ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব। ৩২ বলে তুলে নেন অর্ধ-শতক। অন্য প্রান্তে ব্রাভো ধীর স্থির ভাবেই রান তুলেতে থাকেন। তবে গেইল ব্যাট চলাতে থাকেন ঝড়ের গতিতেই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৬তম সেঞ্চুরি তুলে নেন অনায়েসেই। তাতে বল লেগেছে ৫৫টি। স্কোর বোর্ডে রান ১৭০ ছাড়িয়েছে তখন। অন্য প্রান্ত আগলে রেখে অর্ধ-শতক তুলের নেন ব্রাভো। দলীয় ২২০ রানে ৬১ রান করে মার্ক উডের আউট হন ব্রাভো। ভাঙ্গে ১৭৪ রানে তৃতীয় উইকেট জুটি। একই ওভারে শিরন হেটমায়ারের উইকেট তুলে নেন উড।
তবে ৪১৯ রানে টার্গেটটাকে মনে হচ্ছিল টপকে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিস গেইলতো এক প্রান্ত আগলে রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ৮৫ বলে ১৫০ রানে মাইলফলক স্পর্শ করেন গেইল। তবে এরপর অবশ্য আর বেশি দূর এগোতে পারেননি গেইল। ইনিংসের ৩৫তম ওভারে বেন স্টোকসের বলে ব্যক্তিগত ১৬২ রান করে আউট হন গেইল। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে ২৯৫ রান। ৩০১ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান জেসর হোল্ডার।
সপ্তম উইকেটে ব্রাথওয়েট ও অ্যাশলে নার্স জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। ৮৮ রানের জুটি গড়েন তারা। তবে ক্যারিবীয়দের এই চেষ্টা এক ওভারেই শেষ হয়ে যায়। আদিল রশিদের করা ৪৮তম ওভারে দুই ও তিন নম্বর বলে নার্স (৪৩ রান) ও ব্রাথওয়েট (৫০ রান) বিদায় নেন। এক বল ব্যবধানে পাঁচ ও ছয় নম্বর বলে বিশু ও ওসানে টমাস বিদায় নিলে ৬ উইকটে ৩৮৯ রান থেকে ৩৮৯ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক ওভারেই চার উইকেট তুলে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করে আদিল রশিদ।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৯
আরএআর