১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ চট্টগ্রামের কাজীর দেউরির খান পরিবারে জন্ম নেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। পরিবারের আদরের ছেলে তামিম বড় হতে থাকেন খেলাধুলার পরিবেশের মধ্যেই।
২০০৭ সালে ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তরুণ তামিমের। নিজেকে ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত করে তুলতেও খুব বেশি সময় নেননি। সে বছরই ভারতের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভাঙ্গে এক প্রকার তামিমের ব্যাটেই। ভারতের বিপক্ষে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৩ বলে ৫১ রান। বাংলাদেশ পায় জয়। ভারত ছিটকে যায় বিশ্বকাপের আসর থেকে।
একই বছর টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়ে গেলেও পরের বছর অভিষেক হয় সাদা পোশাকে। এরপর থেকেই চলতে থাকে তার ব্যাট।
তার ক্যারিয়ারের পাতা হাতড়ে পাওয়া যায় এমন অনেক বীরোচিত ইনিংসের খোঁজ। ২০১০ সালে লর্ডসে খেলা তার সেই ১০৩ রানের গৌরবাজ্জ্বল ইনিংস তার মধ্যে অন্যতম। ইংরেজদের মাঠে ক্রিকেটের তীর্থভূমিতে তাদের ওপরে স্টিম রোলার চালিয়ে ৯৪ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। যা ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডসের ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি। সেই সেঞ্চুরির পর তার সেই উদযাপন এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের উদ্বেলিত করে।
এরপরের বছরই (২০১১) উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক ম্যাগাজিন কর্তৃক বছরের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হিসেবে নির্বাচিত হন তামিম। এই খেতাব জিততে পেছনে ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম সোয়ান ও ভারতের বীরেন্দ্র শেবাগকে।
তবে এত এত সফলতার মাঝে তার ব্যর্থতার তালিকাও কম দীর্ঘ নয়। অনেকটা সময় তার ব্যাট না হাসায় পড়তে হয়েছে সমালোচনায়। এক পর্যায়ে আলোচনায় আসে বাদ দেওয়া হোক দল থেকে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সে অভিজ্ঞতায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশের হয়ে সব ফরম্যাটের সর্বোচ্চ রানের মালিককে।
একজন মাঠের তামিমের গল্প অনেকেরই জানা থাকলেও মাঠের বাইরেও তামিম এক অন্য মানুষ। মানুষের প্রয়োজনে নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখেন তিনি। চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় ১৫ থেকে ২০টি এতিমখানা দেখাশোনা করেন তিনি। জাতীয় লিগে প্রথম ম্যান অব ম্যাচ পুরষ্কারের টাকা বাল্যবন্ধু ফারহানের মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসায় খরচ করেন। ফারহান বন্ধুর এ অবদানের কথা এখনো সবাইকে বলে বেড়ান।
২০১৩ সালের ২২ জুন দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা আয়শা সিদ্দিকাকে বিয়ে করে সংসার পাতেন দেশ সেরা এই ক্রিকেটার। ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের ঘর উজ্জ্বল করে জন্ম নেয় আরহাম ইকবাল খান।
এই তামিমের সবচেয়ে জ্বলজ্বলে বীরত্বের গল্পটাও খুব বেশি দিনের পুরানো নয়। ২০১৮ তে জাতীয় নায়কে পরিণত হন এই ক্রিকেটার। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ থেকেই চলে যান হাসপাতালে। কিন্তু মাঠে দেশের খেলা চলছে, কিছুতেই থাকতে চাচ্ছিলেন না সেখানে। চলে আসেন আবার মাঠে।
বাংলাদেশ যখন হারের দুয়ারে। ঠিক তখনই সেই ভাঙা আঙুল নিয়েই নেমে যান মাঠে। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গ দিয়ে দেশকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই দেশ সেরা ওপেনার।
দেশের হয়ে টেস্টে ৩০০০ এবং ওয়ানডেতে ৫০০০ হাজার রান করা মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার তামিম। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে তার নামের পাশে আছে টি-টোয়েন্টিতে ১০০০ রান।
দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৮ টেস্টে ৪৩২৭ এবং ১৮৯ ওয়ানডেতে ৬৪৬০ হাজার রানের মালিক ক্রিকেটার তামিম। ৭৫ টি-টোয়েন্টিতে মোট রান ১৬১৩। মুশফিকুর রহিমের পর বাংলাদেশের ২য় ক্রিকেটার হিসাবে টেস্টে দ্বি-শতক করেন তামিম ইকবাল।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৯
এমকেএম