সপ্তাহ দুয়েক পর একই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি ঘটালেন ময়মনসিংহের এ দুই সন্তান। ইংলিশ ক্রিকেটের ‘জমিদারবাড়ি’ বলে পরিচিত সেই ওভালে আবারো দক্ষ নাবিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন ময়মনসিংহের এ দুই ক্রিকেট ক্রেজ।
যেখানে তাদের জুটিতে এসেছে ৪১ বলে ৬৬ রান। স্বল্প সময়ের পরীক্ষায় হেসেছে দু’জনের ব্যাটই। ফলে নিজের বিশ্বকাপ অভিষেকে মোসাদ্দেক একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন এমনটি যেমন বলা ঠিক হবে না তেমনি অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ ৩৩ বলে ৪৬ রানকেও বিবেচনা করা হচ্ছে টাইগারদের ‘সঞ্জীবনী সুধা’ হিসেবেই।
এক সময়কার ক্রিকেট পরাশক্তি প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপ শুরুর ম্যাচেই লাল-সবুজের সৈনিকদের ঐতিহাসিক জয়ের পর এমন আলোচনা চলছে ক্রিকেট সংস্কৃতির ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ নগরে।
পাড়ার টং দোকান থেকে শুরু করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেও বলাবলি হচ্ছে, সাকিব-মুশফিকের দিনেও খানিক সময়ের জন্য হলেও দাপট দেখিয়ে দলের ভিতকে মজবুত করেছেন সিনিয়র-জুনিয়র অর্থাৎ মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক।
রোবাবার (২ জুন) রাতে নগরের চরপাড়া মোড়, নতুন বাজার, গাঙ্গিনারপাড়সহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে অভিন্ন আলোচনাই কানে আসলো।
এমনিতেই সাতক্ষীরার পর কেবলমাত্র ময়মনসিংহ থেকেই দু’জন ক্রিকেটার বিশ্ব আসরে টাইগারদের হয়ে মূল একাদশে খেলার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে মাহমুদুল্লাহ’র নামের শেষে ‘পরীক্ষিত’ তকমা আঁটা হলেও মোসাদ্দেক বিশ্বমঞ্চে একেবারেই নবীন।
যদিও ‘অভিষেক’ ম্যাচ ভাগ্যে মোসাদ্দেককে নিয়ে নগরের ক্রীড়ামোদীদের জল্পনা-কল্পনা ও প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে ছিলো। সেই প্রত্যাশার পুরোটা পূর্ণ করতে না পারলেও চারটি বাউন্ডারিতে মাত্র ২০ বলে ২৬ রানের দাপটে ব্যাটিং দেখিয়েছেন সৈকত ডাক নামের এ তরুণ।
নিজের ছেলের এমন পারফরম্যান্সে মোটেও আশাহত নন মা হোসনে আরা বেগম। বরং শ্রেষ্ঠত্বের আসরে অভিষেক ম্যাচে মোসাদ্দেক জানান দিয়েছেন সময় পেলে আরও
ভালো ব্যাটিং উপহার দেবেন।
মা হোসনে আরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোসাদ্দেকের ব্যাটিং নিয়ে আপাতত স্বস্তিতে রয়েছি আমরা। সামনের ম্যাচগুলোতে দলের প্রয়োজনে হেসে উঠবে মোসাদ্দেকের ব্যাট। ’
সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও সাকিব-মুশফিকের শতক ফসকে যাওয়া, ঝড়ো হাওয়ার পর মিঠুনের দ্রুত প্রস্থানে ৩০০ রানের চ্যালেঞ্জ যখন সামনে, ঠিক তখনই ফুরফুরে মেজাজ ফিরে পেয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহও।
‘সাইলেন্ট কিলার’ হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের এ তরুণ ৩৩ বলে ৪৬ রান করেও হার মানেননি। ‘৪১ বলে ৬৬ রানের এ জুটি অনেক মূল্যবান। এ জুটি ফ্লপ করলে রান সংগ্রহের দিকে পাহাড়ের চূড়ায় উঠা হতো না টাইগারদের।
প্রতিপক্ষকেও চাপে ফেলে কাবু করা সম্ভব হতো না। ডাবলিনের পর ওভালেও দু’জনের এমন বোঝাপড়া দলের জন্য ইতিবাচক।
এমন জুটি সামনের দিনগুলোতেও আত্মবিশ্বাসের রসদ জোগাবে মাশরাফিদের’ বলছিলেন নগরের ১৪নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলুল হক উজ্জ্বল।
নগরের চরপাড়া এলাকার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে খেলা উপভোগ শেষে টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ের পর বাংলানিউজকে বলেন, ‘রোজা রাখায় ১৮ ঘণ্টা না খেয়ে থেকেও পারফরম্যান্সে হেরফের হয়নি মাহমুদুল্লাহর। আমাদের ছেলের ওপর আল্লাহর রহমত পুরো দলের জন্যই মঙ্গল বয়ে এনেছে। ’
নগরের শহীদ শহীদ নজরুল ইসলাম কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুন নূর খোকা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মোসাদ্দেক সেরা হতে না পারলেও নিজেকে ওয়ার্ল্ডকাপের প্রথম ম্যাচেই মেলে ধরেছে।
মাহমুদুল্লাহ আবারও প্রমাণ করেছেন দলের বিপর্যয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে পারেন। সামনের ম্যাচগুলোতেও মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক জুটি আরও নতুন কাব্যকথা রচনা করবে, এ আমার বিশ্বাস। ’
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৯
এমএএএম/ওএইচ/