এদিকে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে দারুণ শুরু করেও শেষ পর্যন্ত সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি। অবস্থানগত দিক থেকে টাইগাররা আটে শেষ করেছে।
দলীয় সাফল্যে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ব্যক্তি অর্জন ছিল চোখে পড়ার মতো। এক সাকিব আল হাসানই টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে লড়ে গেছেন বিশ্বের শীর্ষ সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমানের ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনদের পারফরম্যান্স নজর কেড়েছিল সবার।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে কে কেমন করেছিলেন দেখে নেওয়া যাক:
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক):
৮ ম্যাচ, ৩৪ রান, ব্যাটিং গড় ৮.৫, এক উইকেট, বোলিং গড় ৩৬১, ৩ ক্যাচ
মাশরাফির নেতৃত্ব নিয়ে কখনোই প্রশ্ন উঠবে না। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ থেকে তার অধিনায়কত্বেই একের পর এক বড় সাফল্য পেয়েছে টাইগাররা। বর্তমানে সংসদ সদস্য হওয়া এই তারকাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে অনেকেই দেখেন। তবে সদ্য শেষ হওয়া আসরটিতে ব্যক্তিগতভাবে একেবারেই ভালো কাটেনি নড়াইল এক্সপ্রেসের। কেননা মাত্র একটি উইকেট পাওয়া ম্যাশের বোলিং গড় ছিল ৩৬১!
তামিম ইকবাল:
৮ ম্যাচ, ২৩৫ রান, ব্যাটিং গড় ২৯.৩৭, ৩ ক্যাচ
বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম ইকবালের কোনো বিকল্প নেই। তিনি দেশ সেরা ব্যাটসম্যানও। তবে বিশ্বকাপ এলেই যেন তার ব্যাটের ধার কমে যায়। তাই এবারের আসরেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই বাঁহাতি। তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র একটি অর্ধশতকের স্কোর।
সৌম্য সরকার:
৮ ম্যাচ, ১৬৬ রান, ব্যাটিং গড় ২০.৭৫, ৪ উইকেট, বোলিং গড় ২২.৭৫, ৭ ক্যাচ
তরুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিভার কোনো কমতি নেই সৌম্য সরকারের মাঝে। ঝড়ো ব্যাট করার মানসিকতা তার রয়েছে। তবে ওপেনিং সঙ্গী তামিমের মতো তিনিও ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও দক্ষিণ অাফ্রিকার বিপক্ষে দলের জয়ী ম্যাচে ৪২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন। এছাড়া পার্টটাইম মিডিয়াম পেসার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজাকে আউট করেছিলেন।
সাকিব আল হাসান:
৮ ম্যাচ, ৬০৬ রান, ব্যাটিং গড় ৮৬.৫৭, ১১ উইকেট, বোলিং গড় ৩৬.২৭, ৩ ক্যাচ
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা বিজ্ঞাপনের নাম সাকিব আল হাসান। ব্যাটে-বলে অনন্য এই তারকা বিশ্বকাপে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি কেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। ৮ ম্যাচের সাতটিতেই তিনি হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। এর মধ্যে ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এসেছে সেঞ্চুরি। বোলিংয়ে হিসেবি সাকিব ওভার প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৫.৩৯। তিনি শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট সেরা না হতে পারলেও মন জয় করে নিয়েছেন ক্রিকেট ভক্তদের।
মুশফিকুর রহিম:
৮ ম্যাচ, ৩৬৭ রান, ব্যাটিং গড় ৫২.৪২, ৮ ক্যাচ, ২ স্টাম্পিং
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানের একজন মুশফিকুর রহিম। সাকিবের মতো নিজেকে একেবারে শীর্ষপর্যায়ে না নিতে পারলেও, ব্যাটিংয়ে ছিলেন উজ্জ্বল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার অনন্য সেঞ্চুরিই সেই প্রমাণ।
লিটন দাশ:
৫ ম্যাচ, ১৮৪ রান, ব্যাটিং গড় ৪৬, ৩ ক্যাচ
লিটন দাশের ব্যাটিং সৌন্দর্য নতুন করে বলার কিছু নেই। কাভার ড্রাইভ, অন ড্রাইভের মিশেলে দারুণ তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে সাকিবের সঙ্গে তিনি ছিলেন অসাধারণ সেই জুটিতে। ১৮৯ রানের সেই পার্টনারশিপে তার ব্যাট থেকে আসে ৯৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস।
মাহমুদউল্লাহ:
৭ ম্যাচ, ২১৯ রান, ব্যাটিং গড় ৪৩.৮, ২ ক্যাচ
ফিনিশিংয়ে বাংলাদেশ দলের বিপদের বন্ধু হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটিং করে আসছেন মাহমুদউল্লা। তার ব্যাটে ভরসা করে টাইগাররা অনেক ম্যাচ জিতে এসেছে। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারলেও তার সাহসী ব্যাটিং সবার নজর কেড়েছে। সেদিন তিনি ৫০ বলে ৬৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন।
মোহাম্মদ মিঠুন:
৩ ম্যাচ, ৪৭ রান, ব্যাটিং গড় ১৫.৬৬
টানা তিন ম্যাচ খেলার পর দল থেকে বাদ পড়েন মোহাম্মদ মিঠুন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের শেষ ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর লিটন দাশ তার জায়গা কেড়ে নেন। যদিও তিনি শুরুর দুই ম্যাচে ২১ ও ২৬ রানের কার্যকরী দুটি ইনিংস খেলেছিলেন।
মোসাদ্দেক হোসেন:
৭ ম্যাচ, ১১৭ রান, ব্যাটিং গড় ১৯.৫, ৩ উইকেট, বোলিং গড় ৭১.৬, ৩ ক্যাচ
শেষ দিকের ব্যাটিং ও পার্টটাইম স্পিনার হিসেবে মোসাদ্দেক হোসেন কার্যকরী এক অলরাউন্ডার। টুর্নামেন্টে খুব বড় কিছু না করতে পারলেও, একেবারে খারাপ যায়নি।
সাব্বির রহমান:
২ ম্যাচ, ৩৬ রান, ব্যাটিং গড় ১৮
দুই ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন সাব্বির রহমান। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শূন্য রানে বিদায় নিয়েছেন। তবে ভারতের বিপক্ষে ৩৬ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন:
৭ ম্যাচ, ৮১ রান, ব্যাটিং গড় ২৯, ১৩ উইকেট, বোলিং গড় ৩২.০৭, এক ক্যাচ
পেস বোলিং ও ব্যাটিংয়ের মিশেলে দারুণ এক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তাকে দিয়ে পাওয়ার প্লে ও ডে’থে বোলিং করিয়ে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। ইয়র্কারে দক্ষ এই ক্রিকেটার ব্যাটিংয়েও ঝড় তুলতে সমান পারদর্শী। ভারতের বিপক্ষে তার ৩৮ বলে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস মনে রাখবে সমর্থকরা।
মেহেদি হাসান:
৭ ম্যাচ, ৩৭ রান, ব্যাটিং গড় ১২.৩৩, ৬ উইকেট, বোলিং গড় ৫৬.৮৩, ৪ ক্যাচ
অনেকের মতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত অধিনায়ক মেহেদি হাসান। অলরাউন্ড পারর্ফমার এই তারকা অবশ্য নিজের স্পিনকেই শক্তির জায়গা মনে করেন। বিশ্বকাপে ৬টি উইকেট পেলেও তার ইকোনোমি ছিল মাত্র ৫.০৮।
রুবেল হোসেন:
২ ম্যাচ, ৯ রান, ব্যাটিং গড় ৯, এক উইকেট, ১৩১ বোলিং গড়, ৩ ক্যাচ
বাংলাদেশের আরেক অভিজ্ঞ পেসার রুবেল এই বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। দলের অতিরিক্ত পেসার হিসেবে খেলা রুবেল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেশ খরুচে হলেও, ভারতের বিপক্ষে ঠিকই লড়াই করে ফিরেছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান:
৮ ম্যাচ, এক রান, ব্যাটিং গড় ০.৩৩, ২০ উইকেট, বোলিং গড় ২৪.২, এক ক্যাচ
ডেথ বোলিংয়ে বিশ্বমানের পেসার হিসেবে নিজেকে বারবার পরিচয় করিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। আর বিশ্বকাপেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নতুন বলে সেরাটা দিতে না পারলেও ইনিংসের শেষ দিকে কাটার মাস্টারের কারিশমা ঠিকই টের পেয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। মোট ২০ উইকেট নেওয়া ফিজ খ্যাত এই তারকা শেষ দুই ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫টি করে ১০টি উইকেট নিয়েছেন।
আবু জায়েদ রাহি:
কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
এমএমএস