যদিও গতকালের ইনিংসটিকে আপনি অর্ধশত বলে মানতে চাইবেন না। ১১০ বল খেলে ৯৮ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিককে সেঞ্চুরি না পাওয়ায় প্রশংসা বন্যায় ভাসানো হচ্ছে।
অথচ এর উল্টোটাই হতো, যদি মুশফিক এক রানের জন্যে দৌড় না দিয়ে স্ট্রাইকে থাকতেন এবং শেষ বল খেলে আউট হয়ে ফিরতেন। আপনি যদি ক্রিকেট ভালো বোঝার চেষ্টা করেন তবে আমার মতো হয়তো আপনিও চাইবেন স্ট্রাইকটা মুশফিকই রাখুক। কেননা সেই সময় তিনিই সেট ব্যাটসম্যান এবং ৪৯তম ওভারেই তিনি তিনটি বাউন্ডারি মেরেছেন। তাই স্বভাবতই চাইবো মুশফিকই স্ট্রাইকে থাকা উচিৎ ছিলো। তার সেঞ্চুরির জন্যে না হোক দলের জন্য আরেকটি বাউন্ডারি পাবার আশায় হলেও আমি সেটিই চাইবো। তাই বলে এটা ভাবার সুযোগ নেই যে, মুশফিক কম বোঝেন। তিনি যা করেছেন, তা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি বিবেচনায় করেছেন। তখন পরিকল্পনা করার সুযোগ ছিল না।
আরও একটি বিষয় মুশফিকের মাথায় কাজ করতে পারে, সেটি হয়তো রান না নিয়ে সমালোচিত হবার ভয়। মানে আমাদের দেশের সমর্থকদের বড় একটি অংশ পরিসংখ্যান দেখে সমালোচনা করেন না, সমালোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যায় ছোট খাটো অ্যাপ্রোচ অথবা ব্যক্তিগত ভালো লাগা-খারাপ লাগাকে কেন্দ্র করে। তাই মুশফিক যা করেছেন, নিশ্চিতভাবেই সেই সময়ের জন্য ইতিবাচক এবং দলের প্রতি তার আন্তরিকতাকেই ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে দিনশেষে আপনি যখন দেখবেন, ২৩৯ রানের টার্গেটকে স্বাগতিক লঙ্কানরা মামুলি বানিয়ে ৭ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে, তখন আপনার মনে হতেই পারে মুশফিক স্ট্রাইকটা ধরে রাখলেই ভালো করতেন। অন্তত সিরিজ শেষে দলের প্রাপ্তির খাতায় একটি সেঞ্চুরি থাকার সুযোগ সৃষ্টি হতো।
ভুলে গেলে হবেনা এই মুশফিকই দলের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা। কিপিংয়ে গ্লাভস হাতে কিছুটা ‘এলোমেলো’ হলেও ব্যাটসম্যান মুশফিক বরাবরই আস্থার প্রতীক। সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপেও তিনি দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুশফিকই বিশ্বকাপে সেরা, ৮ ইনিংসে ৫২.৪২ গড়ে ৩৬৭ রান করেছেন তিনি। টাইগারদের মধ্যে বিশ্বকাপের যেকোনো আসরে তার থেকে বেশি রান কেবল সাকিবেরই, তাও এই আসরেই। ৭টি শতক ও ৩৭টি অর্ধশতক রয়েছে তার ক্যারিয়ার বৃত্তান্তে। এই ম্যাচেই ওয়ানডেতে ৬০০০ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যানদের ক্লাবে প্রবেশ করেছে এই মিডলঅর্ডার। সে জন্যে তাকে মাঠে নামতে হয়েছে ২১৫ ম্যাচ ও ২০১ ইনিংস। এই ক্লাবে দেশের মধ্যে তৃতীয় এবং বিশ্বে ৬২তম সদস্য তিনি।
মুশফিকের পরিসংখ্যান ও আত্নবিশ্বাস সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা, তাই শেষ বলে স্ট্রাইক ধরে রেখে একটা রিস্ক তিনি নিতেই পারতেন। এমন আফসোসের জায়গা থেকেই তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ইচ্ছা, যদিও তাকে অযুত অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাস্তবতা বলে, মুশফিক এই সেঞ্চুরির আশা ত্যাগ করে যা শিখিয়েছেন, তা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য বড় শিক্ষাই মনে করি। এখনতো আমরা নিজের যা পাই তাই ধরি, দেশ চুলোয় গেলে যাক। মুশফিক সেটি করেননি, ব্যাটসম্যান হিসেবে একটি সেঞ্চুরি নিঃসন্দেহে অনেক সাধনার বিষয়। দলের এক রান বাড়ানোর জন্যে সেটিকে ধরতেও চাইলেন না তিনি, তাই এই মুশফিককে চিনে রাখা প্রয়োজন।
লেখক
সার্টিফায়েড ক্রিকেট আম্পায়ার, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্রিকেট আম্পায়ার অ্যান্ড স্কোরার অ্যাসোসিয়েশন, ফেনী জেলা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
এমএমইউ/এমএমএস