ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাকিব ভাইয়ের জন্য ৩০ টাকায় গোলাপ কিনেছিলাম

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
সাকিব ভাইয়ের জন্য ৩০ টাকায় গোলাপ কিনেছিলাম

চট্টগ্রাম: ‘সাকিব ভাইকে আমি ভালোবাসি অনেক বেশি। তাকে একটু কাছ থেকে দেখতে চেয়েছিলাম, জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে ছিল। এর আগেও কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। সেদিন মাথায় জেদ চেপে গিয়েছিল, দেখা আমি করবোই। তাই লাফ দিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়েছিলাম’।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলানিউজের চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসে এসে সেদিনের ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন ২২ বছরের যুবক মো. ফয়সাল। সঙ্গে ছিলেন তার পাড়ার বড় ভাই আরিফ রাজ এবং দুই কিশোর সঙ্গী আহম্মেদ সিফাত ও মো. তাফসীর।

 

নগরের এনায়েত বাজার রানির দিঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল গত ৬ সেপ্টেম্বর জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের টেস্ট ম্যাচ চলাকালে গ্যালারি থেকে মাঠে ঢুকে যান। দৌড়ে সাকিবের কাছে গিয়ে স্যালুট দিয়ে হাঁটু গেড়ে গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দেন। পরে সেটা গ্রহণ করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।  

সাকিবের কাছে গিয়ে তার দিকে গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দেন ফয়সাল। এ ঘটনায় ফয়সালের বিরুদ্ধে ভীতি সঞ্চারের অভিযোগে পাহাড়তলী থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর সিকিউরিটি সুপারভাইজার আরেফিন হোসেন ইমরান।

সেদিনের ঘটনার কথা জানতে চাইলে মো. ফয়সাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাকিব ভাইকে দেখার জন্য র‌্যাডিসন হোটেলে গিয়েছিলাম। পুলিশ বকা দিয়েছিল। তাই খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ৫ সেপ্টেম্বর রাতে চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে ৩০ টাকা দিয়ে একটি গোলাপ ফুল কিনেছিলাম। পরদিন সকালে টিকিট কেটে ২ নম্বর গেট দিয়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ঢুকি। সাকিব ভাই ফিল্ডিং করছিলেন মাঠে, অনেক দূরে। একসময় ফুলটা মাঠে ছুঁড়ে দেই। এরপর নেট বেয়ে ওপরে উঠে মাঠে লাফ দেই। এসময় রডের গুঁতোয় আমার পা-হাত কেটে যায়’।  পাড়ার বড় ভাই আরিফ রাজ এবং দুই কিশোর সঙ্গী আহম্মেদ সিফাত ও মো. তাফসীরের সঙ্গে ফয়সাল।  ছবি: সোহেল সরওয়ার‘মাঠে পড়ে থাকা ফুলটা কুড়িয়ে নিয়ে এক দৌড়ে সাকিব ভাইয়ের সামনে চলে গেলাম। তাকে স্যালুট দিয়ে মাঠে হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপটা বাড়িয়ে দিলাম। বললাম-আপনাকে জড়িয়ে ধরতে চাই। অনুরোধও করলাম। তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন। হ্যান্ডশ্যাক করতে গিয়ে দেখলেন-আমার হাতে রক্ত। সাকিব ভাই বললেন-ব্যান্ডেজ করতে’।

ঘটনার পর বিসিবির নিরাপত্তাকর্মীরা ছুটে এসে ফয়সালকে নিয়ে যান মাঠের বাইরে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাহাড়তলী থানায় এবং সেখান থেকে ডবলমুরিং থানায়। পরে আবার নিয়ে আসা হয় পাহাড়তলী থানায়। সেদিন রাতে তাকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। পরদিন শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) মহানগর হাকিম শফি উদ্দীনের আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে ফটোগ্রাফি পেশায় যুক্ত ফয়সাল কাজের প্রয়োজনে অনেকের ছবি তুলেছেন। কিন্তু তার ছবিও যে আলোচিত হয়ে পত্রিকায় ছাপানো হবে, টেলিভিশনে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার হবে-তা ভাবেননি কখনো।

সাকিব আল হাসানের ভক্ত মো. ফয়সাল।  ছবি: সোহেল সরওয়ারমরহুম সাগের আহম্মদ ও রোকেয়া বেগমের ২ কন্যা, ১ ছেলের মধ্যে ফয়সাল সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান ফয়সাল ক্রিকেট ভালোবাসেন। পছন্দ করেন সাকিব আল হাসানকে। কিন্তু আবেগের বশবর্তী হয়ে মাঠে ঢুকে পড়ার দায়ে তাকে ৫ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে। সেখানেও তিনি পড়েছিলেন মধুর যন্ত্রণায়।

কয়েদিসহ সবাই জেনে গেছে তার কাণ্ডের কথা। সবাই বাহবা দিচ্ছিল। বাইরে দর্শনার্থীরা খাবার নিয়ে এসে তার জন্য অপেক্ষা করছে। সবাইকে বয়ান দিতে দিতেই হয়রান হতে হয়েছে ফয়সালকে। বলেছেন, সাকিব ভাইকে ছুঁয়ে দেখেছি। আমি ধন্য, এখন জেল-ফাঁসি হলেও দুঃখ নেই। কারাবাসকালে ক্রিকেটার ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা তাকে ফোন করে শিগগির মুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। খবর নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানও। তবে এখন নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে। ফয়সাল জানেন না, কখন মিলবে এ দশা থেকে মুক্তি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
এসি/এইচএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।