তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের ব্যক্তিগত সাফল্য থাকলেও দলীয়ভাবে উন্নতি হয়নি বললেই চলে। সম্প্রতি ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা টেস্টে এখনও কত দুর্বল।
২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় ওপেনার সাদমান ইসলামের। টেস্টে তামিম ইকবালের সঙ্গে যোগ্য কোনো ওপেনার না পাওয়া গেলে ৫৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা সাদমানকে সুযোগ দেয়া হয় দলে।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলে উঠে আসা ২৪ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ওপেনার বাংলানিউজের সঙ্গে নিজের টেস্ট ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন। সাদমান ইসলাম জানান টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে তিনি আলাদা ভাবেই ভাবতে চান। ২০১০ সাল থেকেই স্কুল ক্রিকেট খেলে ধীরে ধীরে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের মাধ্যমে উঠে আসেন তিনি। বাংলানিউজকে জানান বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট খেলার কারণে জাতীয় দলে খেলাটা সহজ হয়েছে তার জন্য।
জাতীয় দলের হয়ে ৬টি টেস্ট খেলা সাদমান বলেন, ‘এজ লেভেল অভিজ্ঞতা অনেক ভালো আমার। এজ লেভেল খেলে যদি আমি উঠে আসি, তাহলে অভিজ্ঞতাটা পরে কাজে দেয়। অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬, ১৭ অনেক সহজ মনে হয়েছে আমার কাছে। এরপর যখন অনূর্ধ্ব-১৮, ১৯ খেললাম, আন্ডার নাইন্টিন ওয়ার্ল্ড কাপ খেললাম, হোম সিরিজ খেললাম অনেক। খুব কনফিডেন্টলি খেলতে পারছি কারণ আমি জানি যে এই পর্যায়গুলো কিভাবে পার হতে হয়। ’
সাদমান ইসলাম জানান টেস্ট ক্রিকেটটাকেই ভালোভাবে শিখতে চান এবং নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান। সাদমান বলেন, ‘অামি এখন টেস্ট নিয়ে বেশি চিন্তা করছি। আমার ফোকাসটা এখস টেস্ট ক্রিকেটকে ঘিরেই। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলে খেলবো, সেটা পূরণ হয়েছে। এখন অামার লক্ষ্য এই জায়গাটা ধরে রাখা। আমরা টেস্ট ম্যাচ এমনিতেই কম খেলি তবে সামনে অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে সেগুলোর দিকেই আপাতত মনোযোগ দিতে চাই। অামার ইচ্ছা বাংলাদেশ জাতীয় দলকে সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া। নিজেকে সেই উচ্চতায় নিতে চাই। সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই. তামিম ভাই যেমন খেলছে, অামাদের দলটাকে এখানো সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, আমারও ইচ্ছা যতদিন ক্রিকেট খেলবো যেন দলকে সেভাবেই সাপোর্ট দিতে পারি। ’
বর্তমান সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আইপিএল, বিপিএল, বিগ ব্যাশের মতো টুর্নামেন্টে ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন অনেক। তাই ক্রিকেটাররাও এই লিগগুলোতে খেলতে অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু সাদমান ইসলাম সেই দিকে হাটতে চান না। তার ভাবনাতে শুধু টেস্ট ক্রিকেট। তিনি বলেন, ‘এখন টেস্ট নিয়ে ভাবতে চাই। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি নিয়ে চিন্তা করতে চাই না, আমার ইচ্ছাও নাই। আমার ইচ্ছা টেস্ট প্লেয়ার হয়ে যেহেতু জাতীয় দলে ঢুকেছি, কিভাবে টেস্টে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেটাই দেখা। এরপরই চিন্তা করবো যে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি কিভাবে খেলবো। ’
বিপিএলের চলমান আসরে প্রথমে দল না পেলেও টুর্নামেন্ট শুরুর পর রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই তার।
টেস্টের জন্য আলাদা মানসিকতা ও প্রস্তুতির দরকার হয়। তাই সাদমান ইসলাম নিজেকে সেই ভাবেই প্রস্তুত করছেন। নিজের ব্যাটিং স্কিল আর দুর্বলতা নিয়ে সবসময়ই কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যাটিং পরামর্শক নিল ম্যাকেঞ্জির কাছ থেকেও সয়াযতা নিচ্ছেন।
বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আরও বলেন, ‘টেস্টের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতির দরকার হয়। এটা একটা খুব শক্ত জায়গা। তবে এখন তো বিশ্বমানের বোলারদের ফেস করতে হয়। তাই প্রস্তুতিটাও ভালো ভাবে নিতে হয়। এখানে তো নেটে সেই মানের বোলার পাওয়া যায় না। তবে আমাদের ব্যাটিং কোচ আছেন তার কিন্তু অভিজ্ঞতা আছে তাই তার কাছ থেকেও পরামর্শ নিচ্ছি। টিপস দিয়েছে কিভাবে ভালো মানের বোলারে বিপক্ষে খেলতে হয় সেই অনুযায়ী কাজ করছি। ’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাদমান ইসলামের যাত্রা শুরু বেশি দিনের নয়। বাংলাদেশ দলের কঠিন সময়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তাই বলাই যায় যে তার সামনে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সেই চ্যালেঞ্জে জিততে হলে একজন ক্রিকেটারে কি করণীয় সেটা হয়তো সাদমান ভালোবাবেই জানেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
আরএআর/এমএমএস