ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

ইনজামাম ভাই ম্যাচ উইনার ডাকতেন: কানেরিয়া

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
ইনজামাম ভাই ম্যাচ উইনার ডাকতেন: কানেরিয়া .

হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের সাবেক সতীর্থদের হাতে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন দানিশ কানেরিয়া। সাবেক সতীর্থ শোয়েব আখতারের দাবি সত্যি বলে সায় দিয়েছেন এই স্পিনার। তবে কেউ তাকে ধর্ম পালনে বাধা কিংবা বদলানোর চাপ দেয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে সাবেক পাকিস্তানি স্পিডস্টার শোয়েব দাবি করেন, তার সাবেক সতীর্থ কানেরিয়ার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতো কিছু পাকিস্তানি ক্রিকেটার। হিন্দু হওয়ায় তার সঙ্গে বসে খেতেও অনিচ্ছুক ছিল তারা।

 

ক্রিকেট বিশ্লেষক ডা. নুমান রিয়াজের পাকিস্তানি টিভি শো ‘গেম অন হেই’ নামক এক অনুষ্ঠানে অতীত এই স্মৃতি উগরে দেন শোয়েব। রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস বলেন, ‘হিন্দু হওযায় দানিশ কানেরিয়ার সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করত’ পাকিস্তান ক্রিকেট দল। ’

শোয়েবের এমন সাহসী বক্তব্যের পর মুখ খুলেছেন কানেরিয়াও। ৩৯ বছর বয়সী স্পিনার রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসের বক্তব্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘সে (শোয়েব) সত্য বলেছে। হিন্দু হওয়ায় যারা আমার সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করতো না আমি তাদের নাম প্রকাশ করবো। ’

স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে আজীবন নিষিদ্ধ এই স্পিনার আরও বলেন, ধর্মীয় অজুহাতে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হতো, এবং প্রায়ই সতীর্থরা তার সঙ্গে খেতে অস্বীকার করতো।

ভারতীয় নিউজ এজেন্সি এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালকে (এএনআই) কানেরিয়া আরও বলেন, ‘এসব প্রকাশ করার সাহস আমার আগে ছিল না। তবে এখন আমি বলব। ’ 

কিন্তু এরপর নিজের বক্তব্যে পরিবর্তন এনে তিনি বলেছেন, ‘এখন সঠিক সময় নয় এবং আমি আমার ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে এ ব্যাপারে কথা বলব। ’

এদিকে সতীর্থদের কাছ থেকে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হলেও ধর্মীয় দিক থেকে তাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি জানান কানেরিয়া। পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল ‘সামা’কে তিনি বলেন, ‘এগুলোকে (বৈষম্যমূলক আচরণ) আমি কখনো ইস্যু বানাইনি। আমি শুধু তাদের এড়িয়ে গেছি কারণ আমি শুধু আমার ক্রিকেটের দিকে নজর দিয়ে পাকিস্তানের জন্য জিততে চেয়েছি। ’

কানেরিয়া আরও বলেন, ‘আমি একজন গর্বিত হিন্দু এবং পাকিস্তানি। আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে, এই ইস্যুকে অবলম্বন করে পাকিস্তানের ক্রিকেটকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। কারণ আমার ধর্ম আলাদা হলেও অনেকে আমাকে সমর্থন করেছেন। বিশেষ করে ইনজামাম-উল-হক, শোয়েব আখতার এবং মোহাম্মদ ইউসুফ আমাকে সবসময় আগলে রেখেছেন। ’

এরপর মোহাম্মদ ইউসুফ, যিনি খৃষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন, তার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কানেরিয়া বলেন, ‘মোহাম্মদ ইউসুফ যেটা করেছেন তা একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু আমার কখনো ধর্ম বদলানোর কথা মনে হয়নি। কারণ আমি আমার ধর্মে বিশ্বাস করি। আর আমাকে কেউ ধর্ম বদলাতে চাপও দেয়নি। ’

তবে শোয়েব আখতারের মন্তব্যের সঙ্গে শুরুতে সায় দিলেও পরে এক ধাপ পিছিয়ে কানেরিয়া বলেন, ‘শোয়েব ভাই হয়তো এসব কারো কাছে শুনেছেন কিংবা কেউ তাকে বলেছে। কিন্তু আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছি এবং আমি এতে গর্বিত। আমি সবসময় পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছি। ’

কানেরিয়া জানান, অন্যান্য সতীর্থরা তার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করলেও ইউনিস খান, ইনজামাম-উল-হক, মোহাম্মদ ইউসুফ এবং শোয়েব আখতারের মতো খেলোয়াড়রা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তার সঙ্গে ভালো আচরণ করতেন। বিশেষ করে ইমজামাম তার প্রতি সবসময় আস্থা রাখতেন বলেও জানান কানেরিয়া।

টেস্টে ২৬১ এবং ওয়ানডেতে ১৫ উইকেটের মালিক কানেরিয়া জানান, ‘ইনজামাম ভাই আমাকে ম্যাচ উইনার ডাকতেন। আমি সবসময় ইনজামাম ভাইকে সঠিক প্রমাণ করতে সেরাটা দিতাম। আসলে আমি পাকিস্তানি হিসেবে গর্বিত। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।