ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

খেলার দুনিয়ায় বিশ্বের চোখ আটকে ছিল লন্ডনে

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
খেলার দুনিয়ায় বিশ্বের চোখ আটকে ছিল লন্ডনে ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই। খেলার দুনিয়া ভুলবে না এই দিনটিকে। ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে তখন ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালের নাটকীয়তা চরমে পৌঁছেছে। দশ মাইল দূরে উইম্বলডনেও কম নাটক হয়নি। লন্ডনের বাইরে নর্থদাম্পটনের সিলভারস্টোন সার্কিটে ফর্মুলা ওয়ানের রেসে তখন গতির ঝড় তুলেছিলেন লুইস হ্যামিলটন। খেলার দুনিয়ায় বিশ্বের চোখ তখন আটকে ছিল লন্ডনে তথা ইংল্যান্ডেই।

১৪ জুলাই, সকালের দিকে অল্প বৃষ্টি। বিশ্বকাপের ফাইনাল মঞ্চে স্বাগতিক ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ড।

লর্ডসে বৃষ্টির কারণে টস কিছুটা বিলম্বে হয়, ফলে খেলা নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পর শুরু হয়। টস জিতে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। ৫০ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৪১ রান তোলে কিউইরা। ইংল্যান্ড শেষ ওভারে ১৪ রান করলে ম্যাচ টাই হয়।

২৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এক পর্যায়ে ২৪ ওভারে ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এই বিপর্যয়ের মুখে ১১০ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে টেনে তোলেন বেন স্টোকস ও জস বাটলার। বাটলার ৫৯ রান করে আউট হয়ে যান। স্বাগতিকদের ভরসা তখন বেন স্টোকস। জিততে শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন হয় ১৫ রান, হাতে ছিল ২ উইকেট।

ট্রেন্ট বোল্টের করা শেষ ওভারের প্রথম ২ বলে বেন স্টোকস কোন রান নিতে পারেননি, তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান। চতুর্থ বলে বেন স্টোকস মিড উইকেটে বল পাঠিয়ে ২ রান নিতে গেলে আর রান আউট থেকে বাঁচতে ব্যাট এগিয়ে ঝাঁপ দিলে বল ব্যাটে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়। আম্পায়ার অতিরিক্ত চার রানের নির্দেশ দেন। ফলে ইংল্যান্ড ২ রান ও চার সহ মোট ছয় রান পায় সেই বল থেকে। শেষ দুই বলে ৩ রানের দরকার ছিল।

নাটকীয়তা চরমে, পঞ্চম বলে আবার দুই রান নিতে যান বেন স্টোকস, তবে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট হন আদিল রশিদ। শেষ বলে ইংল্যান্ডের দরকার হয় ২ রানের। স্টোকস হালকা ঠেলে ২ রান নিতে গেলে দ্বিতীয় রানের আগেই ফিল্ডার জেমস নিশামের ছুড়ে দেওয়া বল নিয়ে উইকেট ভেঙে মার্ক উডকে রান আউট করেন বোল্ট। ফলে ম্যাচ টাই হয়।

খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারে ব্যাট করতে আসেন ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস ও জস বাটলার। বল হাতে ট্রেন্ট বোল্ট। প্রথম বলেই ৩ রান নেন স্টোকস। দ্বিতীয় বলে এক রান নেন জস বাটলার। পরের বলে চার মারেন স্টোকস। চতুর্থ বলে এক রান হয়। পঞ্চম বলে ২ রান হয়। শেষ বলে বাটলারের ব্যাট থেকে আসে আরেকটি চার। ফলে স্কোরবোর্ডে ১৫ রান যোগ করে ইংল্যান্ড।

লক্ষ্য তাড়া করতে, নিউজিল্যান্ডের হয়ে ব্যাট করতে আসেন মার্টিন গাপটিল ও জেমস নিশাম। ইংল্যান্ডের হয়ে বল করেন জোফরা আর্চার। প্রথম বল ওয়াইড, পরের প্রথম বলে নিশাম ২ রান নেন। দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকান তিনি। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে নেন ২ রান করে। পঞ্চম বলে এক রানের বেশি নিতে ব্যর্থ হন নিশাম। ফলে শেষ বলে দরকার হয় ২ রানের। সুপার ওভারের শেষ বলে গাপটিল ডিপ মিড-উইকেটের দিকে বল ঠেলে ২ রান নেওয়ার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট। ফলে সুপার ওভারও টাই হয়, কিন্তু বাউন্ডারি গণনার নিয়মে ইংল্যান্ডকে শিরোপাজয়ী ঘোষণা করা হয়। মূল ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ১৭টি বাউন্ডারি মারে, অন্যদিকে ইংল্যান্ড ২৬টি বাউন্ডারি মারে। ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে।

এদিকে, উইম্বলডনের ইতিহাসের দীর্ঘতম ফাইনালে রজার ফেদেরারকে হারিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের ষোলতম গ্র্যান্ডস্ল্যাম শিরোপা জেতেন নোভাক জোকোভিচ। পাঁচ সেটের থ্রিলারে শেষ সেটটা নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। ফেদেরারকে ৭-৬, ১-৬, ৭-৬, ৪-৬, ১৩-১২ গেমে হারিয়ে নিজের পঞ্চম উইম্বলডন ট্রফি জেতেন জোকোভিচ।  

লন্ডনে সেদিন চার ঘণ্টা ৫৭ মিনিটের লড়াইয়ে শেষ সেটে কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। শেষ সেট তো প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরেই চলেছে। ১২-১২ পয়েন্টে যখন সমতা তখন ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে ৭-৩ পয়েন্টে জেতেন জোকোভিচ। টেনিস বিশ্ব সেদিন দেখেছিল ধ্রুপদী এক ফাইনাল।

ওদিকে, ব্রিটিশ গ্রান্ড প্রিক্সে গতির ঝড় তুলেছিলেন লুইস হ্যামিলটন। ফর্মুলা ওয়ানে সিলভারস্টোনের সার্কিটে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা জেতেন হ্যামিলটন।

মজার বিষয় হলো, ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারা নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং উইম্বলডনে হারা ফেদেরারের জন্ম তারিখটাও কাকতালীয়ভাবে ৮ আগস্ট। ১৪ জুলাই ২০১৯, এই তারিখটিকে অনেকেই নাম দিয়েছিলেন ‘স্পোর্টস ডে’। যেখানে টিভি পর্দায় ৪.৫ মিলিয়ন মানুষ দেখেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের নাটকীয় আর চরম রোমাঞ্চকর ফাইনাল ম্যাচটি। এদিকে, উইম্বলডনের ফাইনাল দেখতে টিভিতে চোখ রেখেছিল রেকর্ড ৯.৬ মিলিয়ন মানুষ আর ব্রিটিশ গ্রান্ড প্রিক্স দেখতে টিভির সামনে বসেছিলেন ২.৫ মিলিয়ন মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।